লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজদের চাপে শেষ পর্যন্ত ঢোক গিলতে হল নিতিন গডকড়ীকে। এক মাস আগে টিকিট না দিলেও ঝাড়খণ্ডে নতুন করে রাজ্যসভার নির্বাচনে সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে দলের প্রার্থী করতে বাধ্য হলেন বিজেপি সভাপতি।
সদ্য সমাপ্ত রাজ্যসভা নির্বাচনে গোটা দেশে বিজেপির ১৮টি আসন খালি হলেও সংসদের উচ্চকক্ষের বিরোধী দলের প্রাক্তন উপনেতা অহলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী করেননি গডকড়ী। তার বদলে প্রবাসী ব্যবসায়ী অংশুমান মিশ্রকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অহলুওয়ালিয়া-ঘনিষ্ঠ সুষমা স্বরাজ-সহ অনেকেই দলীয় সভাপতির এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন। আডবাণী-সুষমাদের চাপেই নির্দল প্রার্থী অংশুমানকে সমর্থনের ব্যাপারে নিজের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন গডকড়ী। এই অবস্থায় কমিশন ঝাড়খণ্ডের রাজ্যসভা ভোট বাতিল করার পর অহলুওয়ালিয়াকে ফের প্রার্থী করে জেতানোর জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপান সুষমারা। গত ক’দিন ধরে দফায় দফায় আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার ঝাড়খণ্ড থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে অহলুওয়ালিয়ার নাম ঘোষণা করেন গডকড়ী।
প্রশ্ন হল, যে অহলুওয়ালিয়া প্রথমে বাদ গিয়েছিলেন, তাঁর ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল কী ভাবে?
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, সভাপতি পদে নিজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য এখন দলের সকলের সমর্থন প্রয়োজন গডকড়ীর। তা ছাড়া, অহলুওয়ালিয়ার বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলিও বুঝে যান, তাঁর উপনেতাটি কতটা ‘কাজের’ ছিলেন। ওই উপনেতা পদটির জন্য প্রকাশ জাভড়েকর, নাজমা হেফতুল্লা-সহ অনেকেই সক্রিয় হলেও অহলুওয়ালিয়ার শূন্যস্থান পূরণ করা যে কঠিন, তা বুঝে যান বিজেপির একটা বড় অংশ। তা ছাড়া টু-জি নিয়ে জেপিসির মতো কমিটিগুলিতেও যথেষ্ট প্রভাব অহলুওয়ালিয়ার।
এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডে ভোট বাতিলের ঘোষণা হওয়ার পরেই আডবাণী-সুষমাদের মনোভাব বুঝে জেএমএম-এর সঙ্গে দর কষাকষি শুরু করেন গডকড়ী। জেএমএমকে বোঝানো হয়, অহলুওয়ালিয়ার জন্যই ঝাড়খণ্ডের রাজ্যসভা আসনটি খালি হয়েছে। ২০০০ সালে ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের পর থেকেই অহলুওয়ালিয়া সেখানকার সাংসদ। ‘ঘোড়া কেনাবেচা’র আশঙ্কায় অহলুওয়ালিয়া এ বারে প্রথমে দাঁড়াতে চাননি। এখন অংশুমান মিশ্রের মতো বহিরাগত প্রার্থীও নেই। ফলে আসনটি বিজেপিরই পাওয়া উচিত।
বিজেপির এ ভাবে প্রার্থী ঘোষণায় কিছুটা ক্ষুব্ধ জেএমএম নেতৃত্ব। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বলেও নিজেদের ক্ষোভ পুরোপুরি চেপে রাখেননি তাঁরা। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, “ওদের (বিজেপি) প্রার্থী দেওয়া উচিত হয়নি। প্রার্থী যখন দিয়েছে তখন নির্বাচনী লড়াই হবে। প্রথম পছন্দের ভোটে না-হলে দ্বিতীয় পছন্দের ভোটে জিতব।” কিন্তু বিজেপির নেতৃত্বের বক্তব্য, জেএমএম যে প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে দলেরই নেতা সুধীর মাহাতো ধর্নায় বসেছেন! অন্তর্কলহের জেরে শিবু সোরেনের দলের পক্ষে সর্বসম্মত প্রার্থী দেওয়া সম্ভব নয়।
ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় এখন অঙ্কের হিসেবে জেএমএমকে ছাড়াই বিজেপি-জেডিইউ-আজসু ও দু’জন নির্দলের সমর্থনে অহলুওয়ালিয়াকে জিতিয়ে আনা সম্ভব। তবে জেএমএম-এর সমর্থন পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। দলীয় নেতৃত্বের একাংশ একটি বিষয়ে কিছুটা আশঙ্কায়। তা হল, অহলুওয়ালিয়াকে হারাতে সক্রিয় দলেরই একটা গোষ্ঠী। তাই জেএমএম-এর সমর্থন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় দল। ঝাড়খণ্ড বিজেপির রাজ্য সভাপতি দীনেশানন্দ গোস্বামী বলেন, “আমরা জেএমএমকে বলছি, এ বার আমাদের সমর্থন কর। ২০১৪ সালের রাজ্যসভা ভোটে আমরা তোমাদের সমর্থন করব।” নাম ঘোষণার পর অহলুওয়ালিয়া আজ বলেন, “আমাদের জোট ঝাড়খণ্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমাকে প্রার্থী করার জন্য আমি দলের নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞ। শিবু সোরেন আমার বড় ভাইয়ের মতো। অতীতেও তাঁর আশীর্বাদ পেয়েছি। আমার বিশ্বাস, এ বারেও পাব।”
রাজ্যসভায় প্রার্থী বাছাই নিয়ে ঝাড়খণ্ডের বিরোধীরাও সমস্যায়। বিরোধীদের জোটবদ্ধ প্রার্থী দাঁড় করানোর যে প্রস্তাব ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা (প্রজাতান্ত্রিক) দিয়েছে, তা নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব দ্বিধাবিভক্ত। এই পরিস্থিতিতে আজ সন্ধ্যায় ঝাড়খণ্ডের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদের রাঁচি পৌঁছনোর কথা। বিকাশ মোর্চা এবং রাজ্য কংগ্রেসের একাংশের বক্তব্য, ঝাড়খণ্ড বিধানসভার সদস্য সংখ্যা এখন ৮০। রাজ্যসভার নির্বাচনে প্রথম পছন্দের ভোটে কোনও প্রার্থীকে নির্বাচিত হতে গেলে কমপক্ষে ২৭ টি ভোট পেতে হবে। বিধানসভায় এই মুহূর্তে কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা ১৩। ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার বিধায়ক সংখ্যা ১১ এবং আরজেডির ৫ জন সদস্য রয়েছেন। অতএব, ওই তিন দল জোটবদ্ধ ভাবে একজন প্রার্থীকে সমর্থন করলে সেই প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। |