অসুস্থ ছেলে ছেড়ে উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন ‘অগ্নিপুত্রী’
সুস্থ ছেলের বোর্ডের পরীক্ষা। কিন্তু মা-কে যেতে হবে উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে। এক দিকে কাজ, আর অন্য দিকে ছেলের প্রতি মায়ের কর্তব্য। মা কিন্তু প্রথমটিই বেছে নিয়েছিলেন। ছেলেকে ছেড়ে ছুটে গিয়েছিলেন ওড়িশার বালেশ্বরের হুইলার দ্বীপে।
সে দিন, ২০০৭ সালের ১২ এপ্রিল সফল হয়েছিল অগ্নি-৩-এর উৎক্ষেপণ।
তিনি টেসি টমাস। যদিও গোটা বিশ্ব তাঁকে ‘অগ্নিপুত্রী’ নামেই চেনে। টেসিই দেশের প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী, যিনি ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধানের পদ সামলেছেন। তা-ও এক বার নয়, দু’-দু’বারের জন্য অগ্নি-৪ ও অগ্নি-৫। আর ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর এই অবদানের জন্য তাঁকে কেউ কেউ আবার ‘ক্ষেপণাস্ত্র নারী’ (মিসাইল ওম্যান) বলেও ডাকেন।
‘অগ্নিপুত্রী’ টেসি টমাস
যদিও এই সব নামকরণ নিয়ে টেসির নিজের হেলদোল নেই। দেশের হয়ে এত বড় কাজ করতে পেরেছেন, এটাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় কথা। টেসির ছেলে তেজাসও সেই মন্ত্রেই বিশ্বাসী। ২০০৭ সালে বোর্ডের পরীক্ষার সময় মা যখন তাঁকে ছেড়ে উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলেন, খারাপ লাগেনি? তেজাস বললেন, “আমার মায়ের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। দেশের প্রতি তাঁর কিছু কর্তব্য আছে। যখন আমার তাঁকে দরকার হয়েছে, মা সব সময় চেষ্টা করেছেন আমার পাশে থাকার।” দৃঢ় জবাব তেজাসের।
আদতে কেরলের আলাপুঝার বাসিন্দা টেসি এখন হায়দরাবাদে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এ কর্মরত। ত্রিশূর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি টেক। তার পরে পুণের একটি কলেজ থেকে ‘গাইডেড মিসাইল’ নিয়ে এম টেক। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ডিআরডিও-তে টেসির নেতৃত্বে কাজ এখন করেন প্রায় ৪০০ বিজ্ঞানী। যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই পুরুষ। নিজেকে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়নি কখনও? “বিজ্ঞানীদের মধ্যে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ নেই। বিজ্ঞান সব সময়ের জন্য বিজ্ঞানই থাকবে। এ ভাবেই আমরা এগিয়ে যেতে শিখেছি।”
শুধু পর পর অগ্নির সফল উৎক্ষেপণই নয়। ‘আরভিএস’ বলে আর একটি প্রযুক্তি আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে টেসির। ‘রি-এন্ট্রি ভেহিকেল সিস্টেম’ নামের ওই প্রযুক্তিতে উৎক্ষেপণ হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র ঘুরে আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসতে পারে। ৩০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও যেখানে ক্ষেপণাস্ত্রের উপর পুরো নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। টেসি বলেছেন, “আমাদের কেউ এ সব প্রযুক্তি শেখায়নি। আমরা আবিষ্কার করেছি।”
তবে টেসির জন্য গোটা রাস্তাটা কিন্তু বরাবর মসৃণ ছিল না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থও হতে হয়েছে তাঁকে। ২০০৬ সালের জুলাইয়ে অগ্নি-৩ উৎক্ষেপণের মাত্র ৭৫ সেকেন্ডের মাথায় সমুদ্রে ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু হাল ছাড়েননি টেসি ও তাঁর দলের সদস্যরা। ন’মাসের মাথায় আবার অগ্নি-৩ এর উৎক্ষেপণ হয়, টানা ১৬ মিনিট উড়েছিল ক্ষেপণাস্ত্রটি। টেসির কথায়, “ব্যর্থতাও অনেক কিছু শেখায়। অগ্নি-৩ এর ব্যর্থতার পরে আমাদের প্রমাণ করতেই হত, কোনও গণ্ডগোল হয়নি। আর আমাদের বিজ্ঞানীরা ৯ মাসের মাথায় সেটা করেও দেখিয়েছিলেন।”
ডিআরডিও-তে কী ভাবে এলেন? স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে টেসি বলছিলেন, “প্রায় কুড়ি বছর আগে ডিআরডিও-তে এসেছিলাম। এখন প্রোগ্র্যাম ডিরেক্টর।” যখন আবেদন করি, তার কয়েক দিনের মাথায় ডিআরডিও থেকে ফোন আসে। আমি এক মাসের বিশ্রাম চেয়েছিলাম। পাইনি। আজও সেই ছুটির অপেক্ষায় রয়েছি।”
দীর্ঘ কুড়ি বছর পরে বৃত্তটা আজ সম্পূর্ণ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.