পঞ্চায়েত ভবনে ঢুকে সিপিএম প্রধানকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই পঞ্চায়েত প্রধানকে কালনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার কালনা ২ ব্লকের অকালপৌষ পঞ্চায়েতের ঘটনা। সিপিএমের আরও অভিযোগ, অসুস্থ প্রধান হরিসাধন ঘোষকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার সময় তৃণমূলের সদস্য ও সমর্থকেরা বার বার ‘বল হরি, হরি বোল’ আওয়াজ তুলছিল। সমস্ত অভিযোগই অবশ্য অস্বীকার করেছে তৃণমূল। অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে ব্লক প্রশাসন। |
কালনা মহকুমা হাসপাতালে জখম। নিজস্ব চিত্র। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ কয়েকটি ট্রাক্টরে চেপে হবিবপুর, শিঙা, তেহাট্টা গ্রাম থেকে প্রচুর লোকজন পঞ্চায়েত ভবনে জড়ো হন। বেশ কিছু লোকজন সাইকেল ও মোটরবাইকে চেপেও চলে আসেন। একশো দিনের কাজে নিয়ম মেনে মজুরি দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পঞ্চায়েত ভবনে ঢুকেও পড়েন বেশ কিছু লোকজন। বিক্ষোভকারীরা জানান, সম্প্রতি তাঁদের গ্রামে একশো দিনের কাজে পুকুর কাটার কাজ হয়েছে। সেই কাজে তাঁদের কেউ ৪৫, কেই ৫০ আবার কেউ বা ৫৫ টাকা দৈনিক মজুরি পেয়েছেন। অথচ তাঁদের পাওয়ার কথা ছিল দৈনিক ১৩০ টাকা। বিক্ষোভকারীরা এখানে নির্মাণ সহায়ক বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। উত্তপ্ত বাক্যালাপের সময় বিশ্বজিৎবাবুর চেয়ার ধরে নাড়ানো হয় বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান সাগর বাগের অভিযোগ, “নির্মাণ সহায়কের সঙ্গে কথা বলে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তৃণমূলের লোকজন চলে যায় দোতলায়। সেখানে তারা প্রধানকে মারধর করে। এর পরেই তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন।” উপপ্রধানের দাবি, “কাজের পরিমাণ অনুযায়ী ১০০ দিনের কাজে মজুরি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও একই নিয়ম মেনে মজুরি দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন বিকেলে মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, হরিসাধনবাবুকে ভর্তি করানো হয়েছে মেডিসিন বিভাগে। সিপিএমের নেতা ও কর্মীরা সেখানে রয়েছেন। দলের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “যে ভাবে পঞ্চায়েতে ঢুকে তৃণমূলের লোকেরা প্রধানকে মারধর করল, তা চরম নিন্দনীয়। অসুস্থ প্রধানকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার সময় ওরা যে মন্তব্য করেছে তা কুরুচিকর।”
প্রধানকে তারা মারধর করেছে এমন অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূল। কালনা ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়ের দাবি, “সংগঠিত ভাবে দলের তরফে অকালপৌষ পঞ্চায়েতে এ দিন কোনও কর্মসূচি ছিল না। তবে বেশ কয়েকটি গ্রামে পঞ্চায়েত সঠিক মাপ অনুযায়ী এলাকাবাসীদের টাকা দেয়নি। তাঁরাই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।” প্রধানকে মারধরের অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি প্রণববাবু। তাঁর দাবি, “আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, পঞ্চায়েত প্রধানের গায়ে কেউ হাত তোলেনি। গরমে কিংবা প্রচুর লোকজন দেখে উনি অসুস্থ হয়ে থাকতে পারেন। অথবা, গোটা ব্যাপারটাই সিপিএমের সাজানো নাটক।”
এ দিন বিকেলে আবার অকালপৌষ পঞ্চায়েতের প্রায় শ’ দুয়েক বাসিন্দা কালনা ২ বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, একশো দিনের কাজে তাঁদের সরকারি নিয়ম মেনে মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে ব্লক প্রশাসন। |