বিমাননগরী চূড়ান্ত পর্যায়ে, তবু ‘আপত্তি’ কয়লামন্ত্রীর
সানসোলের কাছে অন্ডালে বিমাননগরী গড়ার সিংহভাগ কাজ হয়ে গিয়েছে। ভূগর্ভে কয়লা থাকলেও এই নির্মাণে তাদের আপত্তি নেই বলে আগেই জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল ‘নির্মাণ সহযোগী’ হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাজ্যের ভাবমূর্তিওএর সঙ্গে জড়িত। অথচ কয়লাঞ্চলে এই ধরনের নির্মাণে তাঁদের আপত্তি আছে বলে ফের দাবি করলেন কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল।

শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল।
ছবি: শৈলেন সরকার
বৃহস্পতিবার ইসিএলের সদর কার্যালয় ও কয়েকটি কয়লা খনি পরিদর্শনের জন্য আসানসোলে যান কয়লামন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে যে সব এলাকায় ভূগর্ভস্থ কয়লা আছে, সেখানে শিল্প করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “২০০৯ ও ২০১১ সালে দু’বার চিঠি লিখে আমরা অন্ডাল বিমাননগরী নিয়ে আপত্তির কথা রাজ্যকে জানিয়েছি। ভবিষ্যতে আবারও আপত্তি জানিয়ে চিঠি লিখব।”
সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি ফেরার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে তিনি ফের বলেন, “কয়লাঞ্চলে এই ধরণের নির্মাণে আমাদের আপত্তি আছে।” গত বছরই রাজ্যে সরকার বদল হয়েছে। কিন্তু কোন সরকারকে তাঁরা চিঠি দিয়েছিলেন, তা কলকাতায় দাঁড়িয়ে মন্ত্রী জানাতে পারেননি। এত দিন বাদে কেন আপত্তি তোলা হচ্ছে বা তাঁরা সক্রিয় ভাবে কাজে বাধা দেবেন কি না, সে প্রশ্নের সদুত্তরও মেলেনি।
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রীর কাছে থেকে আমি কোনও চিঠি পাইনি। আগের সরকারের আমলেই নির্মাণকারী সংস্থা কোল ইন্ডিয়ার সঙ্গে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছে।” রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের আগে, গত ৩১ মার্চ কয়লা মন্ত্রকের তরফে তদানীন্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দ্রুত নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে নির্মাণে বাধা দেওয়া বাস্তবোচিত নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, বেঙ্গল এরোট্রোপলিস সংস্থা অন্ডালে বিমাননগরী নির্মাণে এগোতেই ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে কোল ইন্ডিয়া এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। পরের বছর ৯ মার্চ এবং ৮ এপ্রিল রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যসচিবের সঙ্গে কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যানের বৈঠকের পরে কয়লা বাঁচাতে বিমাননগরীর সীমানা পরিবর্তন করে এলাকায় কিছুটা ছেঁটে দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত কয়লা মন্ত্রক ও ইসিএলের (রাজ্যে কয়লা উত্তোলনের নিয়ন্ত্রণ এই সরকারি সংস্থার হাতেই) প্রতিনিধিরাও তাতে সহমত হন।
এর পরেও একটি কয়লা সংস্থা বিমাননগরী নির্মাণে আপত্তি তুললে ২০১০ সালের অগস্টে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে টাটা কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্সের পরামর্শ চায় রাজ্য সরকার। গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি কয়লা মন্ত্রক ও অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সামনে ওই বিশেষজ্ঞ সংস্থা জানায়, বিমাননগরী বজায় রেখেও আগামী ৩০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে দুই মিলিয়ন টন করে কয়লা তুলে যাওয়া সম্ভব। বিষয়টি ইতিমধ্যে আদালতে গড়িয়েছিল।
২০১১ সালের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে কয়লা মন্ত্রক জানায়, যে হেতু বিমাননগরী এবং কয়লা উত্তোলন উভয়ই জনস্বার্থে ‘সমান গুরুত্বপূর্ণ’, দু’টির ‘সহাবস্থানে’ বাধা দেওয়ার যুক্তি নেই। দু’টি প্রকল্প যাতে পরস্পরের বাধা না হয়ে যুগপৎ চলতে পারে, তার জন্য মন্ত্রকের তরফে উপায়ও বাতলে দেওয়া হয়েছে।
এর পরেও কয়লামন্ত্রী হঠাৎ নতুন করে ‘আপত্তি’র কথা তোলায় বিস্মিত সব মহলই। বেঙ্গল এরোট্রোপলিস সূত্রে জানানো হয়েছে, নির্মাণের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। সব ঠিকঠাক চললে এই বছরের মধ্যেই অন্ডাল থেকে বিমান ওড়ার কথা। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রীর এ হেন উক্তি ‘ভুল বার্তা’ পাঠাতে পারে বলে সংস্থার কর্তারা মনে করছেন। শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবুও বলেন, “বিমানবন্দর তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই বহু দূর এগিয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, চাঙ্গির মতো একটি সংস্থা এই প্রকল্পে জড়িত।”
কয়লামন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, শুধু এই বিমাননগরী নয়, ঝাড়খণ্ডের নর্থ করমপুরায় একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করতেও সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁর যুক্তি, শিল্পায়নের জন্য কয়লা উত্তোলনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ার কারণেই কয়লাঞ্চলে শিল্প নির্মাণে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তবে রাজ্যের পাল্টা বক্তব্য, বিমাননগরীর জমি তাদের। কেন্দ্র তা নিয়ে আপত্তি তুলতে পারে না।
দেশ জুড়ে কয়লা উত্তোলন প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, কোল ইন্ডিয়ার পক্ষে পুরোটা সম্ভব না হওয়ায় বেসরকারি সংস্থাকে ‘কোল ব্লক’ দেওয়া হচ্ছে। দেশে ২০৬টি এ রকম কোল ব্লক দেওয়া হয়েছে। গত আর্থিক বছরে ইসিএল লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে এবং এ ভাবে চললে আগামী দু’বছরের মধ্যে বিআইএফআর থেকে বেরিয়ে আসবে বলেও তাঁর আশা।
পাণ্ডবেশ্বরে শোনপুর বাজারি প্রকল্পে কয়লা পরিবহণের নতুন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন তিনি। পুরুলিয়ার রামচন্দ্রপুর নেতাজি চক্ষু হাসপাতালে ৩৭ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদানও দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.