কিছু কাজ হয়, কিছু দলাদলি
কোথাও নর্দমার জল জমছে মাঠে। কোথাও মশা-মাছি ভনভন।
তবু কাউন্সিলর বলছেন, প্রচুর কাজ হয়েছে। বিরোধীরা বলছেন, কিছুই হয়নি।
দেখে-শুনে এলাকার বাসিন্দারা, যাঁরা মোটামুটি ‘নিরপেক্ষ’ বলে দাবি, তাঁরা নিয়েছেন মধ্যপন্থা। তাঁদের মতে, কিছু কাজ হয়েছে। তবে আরও অনেক কিছু করা দরকার।
এক দিকে দয়ানন্দ থেকে অন্য দিকে নিউটন রোড। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই বিস্তীর্ণ এলাকায় বস্তি তিনটি। শতাংশের হিসাবে প্রায় ৩০ শতাংশ। বাকিটা ডিএসপি টাউনশিপ। গত পাঁচ বছর কার কী ভূমিকা ছিল, সে কথা তুলে কাজ নেই। পুরভোটের প্রাক্কালে বিরোধীরা খোঁজখবর শুরু করেছেন বস্তির উন্নয়ন নিয়ে। পুরসভা কতটা কাজ করছে তা নিয়ে চলছে কাটা-ছেঁড়া।
কাউন্সিলর সিপিএমের কার্তিক মণ্ডল জানান, বস্তি গড়ে উঠেছে ডিএসপি-র এলাকায়। কাজেই আইনত পুরসভা সেখানকার বাসিন্দাদের উন্নয়নে কিছু করতে পারে না। কিন্তু মানুষের অসুবিধার কথা চিন্তা করে নেওয়া হয়েছে একের পর এক বস্তি উন্নয়ন প্রকল্প। কুয়ো খোঁড়া হয়েছে। কমিউনিটি শৌচাগার গড়ে দেওয়া হয়েছে। নিউটন-জেসি বসু রোড বস্তির সামনে গড়ে দেওয়া হয়েছে বড় মুক্তমঞ্চ। তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি রাজীব ঘোষ অবশ্য পাল্টা বলেন, “বস্তি উন্নয়নে প্রায় কিছুই করেনি পুরসভা। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে শুধু আমাদের চাপাচাপিতে জেসি বসু রোড বস্তিতে সামান্য উন্নয়ন হয়েছে।” একই দাবি যুব তৃণমূল নেতা চিরঞ্জীব মুখোপাধ্যায়েরও।

৭ নম্বর ওয়ার্ডে শৌচাগারের দরজা ভাঙা।

৮ নম্বরে চলাচলের রাস্তা এমনই।
পুরসভা কিছু কাজ করেছে ঠিকই। কিন্তু তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। একটি পাকা নিকাশি নালা তৈরি করা হয়েছে সম্প্রতি। বৃষ্টি হলে পুরো বস্তির জল সেই নালা দিয়ে বয়ে পাশের মাঠে গিয়ে পড়ার কথা। বাড়ির বর্জ্য জলও এই নালা দিয়েই বেরনোর কথা। কিন্তু নর্দমা তৈরির সময়ে মাপজোকের ভুলে নর্দমাটির মাঝে কয়েক ফুট সামান্য উঁচু হয়ে গিয়েছে। ফলে নর্দমার জল মাঠে না গিয়ে নিচু এলাকায় জমছে। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বাতাসে। বস্তির অন্য প্রান্তে কমিউনিটি শৌচাগার ও কুয়ো। জলের সঠিক জোগান না থাকায় শৌচাগারে পর্যাপ্ত জল দিতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাশেই একটি সুসংহত শিশুবিকাশ কেন্দ্র। খুদে পড়ুয়াদের অভিযোগ, শৌচাগারের গন্ধের চোটে জানলা বন্ধ করে রাখে তারা। রাস্তা মাটির। বৃষ্টি হলেই কাদা হয়।
৮ নম্বর ওয়ার্ডেও প্রায় ৪০ শতাংশ বস্তি এলাকা। সিপিএম কাউন্সিলর কাজল চট্টোপাধ্যায় নিজেই দিয়েছেন এই তথ্য। পাওয়ার হাউস, নিশানহাট তালতলা, স্টিল হাউস, হেলথ সেন্টার ছাড়াও কয়েকটি ছোট বস্তি রয়েছে। পানীয় জল, রাস্তা, শৌচাগারের অভাব নিত্যসঙ্গী। ওয়ার্ডের মহিলা তৃণমূল সভাপতি তানেরা বিবির অভিযোগ, “পাওয়ার হাউস বস্তিতে পানীয় জলের খুব অভাব। একটি মাত্র সরকারি কুয়ো। সংস্কার না হওয়ায় তা মজে যাচ্ছে। শৌচাগারের পরিস্থিতিও খুব খারাপ।” বাসিন্দারা জানান, পুরসভা আবর্জনা ফেলার জায়গা না করে দেওয়ায় তাঁরাই একটি আঁস্তাকুড় বানিয়েছেন। কিন্তু পুরসভা বর্জ্য নিয়মিত সাফাই করে না। ফলে জমা আবর্জনা গিয়ে ঢোকে আশপাশের বাড়িতে। নর্দমা আছে। কিন্তু তা-ও সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে। বস্তির কিছু অংশে ইটের রাস্তা হয়েছে। কিন্তু বাকি আছে অনেকটাই। বেশ কিছু জায়গায় এবড়ো-খেবড়ো হয়ে গিয়েছে। দ্রুত কংক্রিটের রাস্তা গড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা জিৎ চক্রবর্তীর অভিযোগ, “কাউন্সিলর শুধু নিজের দলের কিছু ছেলেকে কাজ পাইয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করেননি। বাড়িতে সই চাইতে গেলেও অনেক ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয়।”
কাউন্সিলর কাজলবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি। স্থানীয় বোরো কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ায় দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় তাঁকে সেখানে থাকতে হয় বলে তিনি জানান। তাঁর দাবি, পাইপ লাইনের মাধ্যমে বস্তিতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে বেশ কিছু অংশে। বাকি রাস্তা এক-দেড় মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। পাকা নর্দমা তৈরি করা হয়েছে। ৩০টি কমিউনিটি শৌচাগার গড়া হয়েছে. তবে আরও দরকার। কাউন্সিলর বলেন, “বরাবর বস্তির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। মানুষের সব চাহিদা এক সঙ্গে পূরণ করা যায় না। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
নজরে নগর
ওয়ার্ড ৭ ওয়ার্ড ৮
• বস্তির অনেক জায়গায় এখনও মাটির
• রাস্তা। বর্ষায় বিপাকে পড়তে হয়।
• কুয়ো মজে গিয়েছে। সংস্কার করতে হবে।
• পানীয় জলের অসহ্য কষ্ট
• শৌচাগারের সংখ্যা অপ্রতুল
• এলাকার কোথাও আবর্জনা সাফাই হয় না দীর্ঘ কাল।

ডিএসপি-র এলাকা, পুরসভার নয়।
তবু অনেক প্রকল্প হয়েছে।

কার্তিক মণ্ডল,

মানুষের সব চাহিদা এক সঙ্গে পূরণ করা
যায় না। তবে, চেষ্টা করে যাচ্ছি।

কাজল চট্টোপাধ্যায়,

পুরসভা বস্তির উন্নয়নে প্রায় কিছুই করেনি।
রাজীব ঘোষ,

পানীয় জলের অভাব, শৌচাগারের হাল শোচনীয়।
তানেরা বিবি,

ছবি: বিশ্বনাথ মশান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.