সাসপেন্ড মেডিক্যালে
‘জাল’ শংসাপত্রে সহকারী সুপার ষোলো বছর
পাশ করেছিলেন এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট। অথচ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চাকরিতে ঢোকার সময় তিনি শংসাপত্র জমা দেন হসপিটাল ম্যানেজমেন্টের! জাল শংসাপত্র দেখিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগে সুস্মিতা নাগ নামে মেডিক্যালের ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকে সাসপেন্ড করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
হাসপাতালের এই অ্যাসিস্ট্যান্ট বা সহকারী সুপার কারা?
ওঁরা ডাক্তার নন। হসপিটাল ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রি থাকে ওঁদের। আগে পদটি ছিল অস্থায়ী। সরকারি হাসপাতাল পরিচালনার কাজে সাহায্যের জন্য ২০০৭ সাল থেকে রাজ্যে স্থায়ী অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার নিয়োগ শুরু হয়েছে। আগে পদটি অস্থায়ী ছিল। স্বাস্থ্য অধিকর্তার অফিস সূত্রের খবর, রাজ্যের আরও ৪-৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের বিরুদ্ধে শিক্ষাগত যোগ্যতা বা বয়সের শংসাপত্রে গরমিলের অভিযোগ এসেছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মেডিক্যালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সুস্মিতাদেবী নামে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতরে তাঁর চাকরির ১৬ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন। তাঁর শংসাপত্র নিয়ে গোলমালের খবর এত দিন কেউ জানতে পারেননি। মাসখানেক আগে এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে স্বাস্থ্য দফতরের ভিজিল্যান্স বিভাগ। তদন্তকারীরা জানান, সুস্মিতাদেবীর শিক্ষাগত যোগ্যতার নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তিনি জাল নথি ও শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য দফতরের ভিজিল্যান্স বিভাগ সূত্রের খবর, সুস্মিতাদেবী ১৯৯৩ সালে এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট পাশ করেন। কিন্তু তিনি যে-শংসাপত্র জমা দেন, সেটি হসপিটাল ম্যানেজমেন্টের। তাঁর কোনও মার্কশিট অবশ্য পাওয়া যায়নি। ’৯৬ সালে তিনি ওই শংসাপত্রের জোরে স্বাস্থ্য দফতরে চাকরি পেয়ে যান। আবার ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ বা পুলিশি তত্ত্বতালাশের সময় তিনি এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট ও হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট দু’টিরই শংসাপত্র জমা দেন বলে অভিযোগ। তদন্ত চালিয়ে দেখা যায়, দু’টিরই সার্টিফিকেট নম্বর এক! এটা হয় কী করে? তদন্তকারীরা রিপোর্টে জানান, এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্টের শংসাপত্রে সাদা কালি লাগিয়ে জেরক্স করে তার উপরে হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট লেখা হয়েছিল!
শুধু তা-ই নয়, তদন্ত শুরু হওয়ার কিছু দিন পরেই সুস্মিতাদেবীর সার্ভিস বুক খুলে দেখা যায়, কে বা কারা আবার সেই হসপিটাল ম্যানেজমেন্টের জায়গায় এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট লিখে দিয়েছে!
এটা কী ভাবে হল?
তদন্তকারীদের এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি সুস্মিতাদেবী। কয়েক দিন আগে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ সাজানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ এর সঙ্গে জড়িত।” কিন্তু বুধবার সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে তিনি আর কোনও কথা বলতে চাননি।
শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র জাল করার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের মর্যাদা নষ্ট করার অভিযোগও উঠেছে সুস্মিতাদেবীর বিরুদ্ধে। কারণ, তিনি জাল শংসাপত্র জমা দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠার পরেই সুস্মিতাদেবী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পাল্টা লিখিত অভিযোগ জানিয়ে বলেন, স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে একটা কুচক্র কাজ করছে। তিনি ভিতরের অনেক দুর্নীতি জেনে গিয়েছেন বলে তাঁকে সরানোর চেষ্টা চলছে।
সেই জন্য ওই কুচক্রের লোকেরা অন্যায় ভাবে তাঁর সার্ভিস বুক বার করে সেখানকার কাগজপত্র বদলে দিয়েছে। তাঁর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে পাল্টা তদন্ত শুরু করতে হয়। এবং সেই তদন্ত রিপোর্টও সুস্মিতাদেবীর বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে মেডিক্যালের অধ্যক্ষের অফিস থেকে জানানো হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.