সাপে কাটার প্রতিষেধক না পেয়ে মৃত্যু হয়েছিল দুবরাজপুরের সুজয় সুরাইয়ের। কিন্তু মৃত্যুর পরে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিল তাঁর পরিবার।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি সর্পাঘাতে মৃত ব্যক্তির পরিবারকেও সহায়তা দেয় দুর্যোগ মোকাবিলা দফতর। বর্তমানে তার পরিমাণ এক লক্ষ। এবং গত পাঁচ বছরে এই খাতে সরকারকে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য প্রশাসনের একাধিক অফিসার। তাঁদের বক্তব্য, সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে ভাল কথা। কিন্তু সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা কমানোই লক্ষ্য হওয়া উচিত সরকারের।
ক্ষতিপূরণ দিতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে, সেই টাকায় যদি গ্রামাঞ্চলে সাপে কাটার প্রতিষেধক পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়, তা হলে মৃত্যুও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
কেন বাড়ছে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ? বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের একাধিক কর্তার বক্তব্য, “গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সব সময় সাপে কাটার প্রতিষেধক পাওয়া যায় না। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। এতে চিকিৎসা শুরু হয় অনেক দেরিতে। রোগীর বাঁচার আশাও কমে যায়।” স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চায়নি। ওই দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে প্রতিষেধক রাখার পরিকাঠামো নেই। কিন্তু ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সবর্দাই ওই ওষুধ মজুত থাকে।”
স্বাস্থ্যকর্তারা এমন দাবি করলেও একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বক্তব্য, সাপে কাটার চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখনও বহু গ্রামে মানুষের ওঝা-নির্ভরতা রয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ সেখানে সচেতনতা যেমন পৌঁছয়নি, একই ভাবে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা ও প্রতিষেধকেরও ব্যবস্থা করা যায়নি।
ওঝা-প্রথার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করছেন, ক্যানিংয়ের এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা বিজন ভট্টাচার্য জানান, এখনও প্রতি গ্রামে এক-দু’জন করে ওঝা আছেন। ঝাড়ফুঁক করেই তাঁদের সংসার চলে। তবে সাপে কাটলেই যে গ্রামের মানুষের পক্ষে সব সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছনো সম্ভব নয়, তা মেনে নিয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্তারা।
২০০৫-এ ওই ‘অনুদান’ চালু করেছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার।
স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, “সাপের কামড়ে মৃতদের অধিকাংশই গ্রামের মানুষ। যে সব জেলায় কৃষিকাজ বেশি অথবা জলাভূমির আধিক্য, সেখানেই সর্পাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।” একাধিক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সাধারণত কালাচ, চন্দ্রবোড়া ও কেউটের কামড়েই অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। কালাচ মূলত থাকে কাঁচা ঘরের চালে কিংবা গোয়ালে। খেতখামারে থাকে চন্দ্রবোড়া। আর কেউটের পছন্দ জলাজমি। সরকারি তথ্যও বলছে, বর্ধমান ও দুই ২৪ পরগনা থেকেই ক্ষতিপূরণের আবেদন বেশি আসে। তবে বাঁকুড়া, মালদহ, বীরভূম ও দুই মেদিনীপুরেও সংখ্যাটা কম নয়।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের হিসেব বলছে, গত পাঁচ বছরে সর্পাঘাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য সরকার। ২০০৫ সালে যে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টাকা, সেটাই এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লক্ষে। অর্থ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “২০০৬-এ টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছিল। ২০০৮ থেকে এক লক্ষ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।” অর্থ দফতর জানিয়েছে, ২০০৯-১০ সালে ১ কোটি ৩৬ লক্ষ, পরের বছরে ৩ কোটি ৬১ লক্ষ এবং গত আর্থিক বছরে ৪ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে সর্পাঘাতে মৃতের পরিবারকে। |