এসজেডিএ-র বোর্ড মিটিং
বাম আমলের ‘দুর্নীতি’র বদলে এ জমানার আলো নিয়েই প্রশ্ন
লোচনা হওয়ার কথা ছিল বাম আমলের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে। অথচ, তৃণমূলের আমলে শহর সাজতে যে ‘ট্রাইডেন্ট ল্যাম্প’ লাগানো হয়েছে, তা নিয়ে দুর্নীতির প্রশ্নে তপ্ত হল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র (এসজেডিএ) বোর্ড মিটিং।
এসজেডিএ সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে শিলিগুড়ি শহরের বোর্ড মিটিংয়ে ওই আলো লাগানোয় ‘দুর্নীতি’, ‘অনিয়ম’ ও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সবচেয়ে বেশি সরব হন শিলিগুড়ির ডেপুটি মেয়র, তৃণমূলের রঞ্জন শীলশর্মা, দলীয় নেত্রী জ্যোৎস্না অগ্রবাল ও নেতা চন্দন ভৌমিক। বাম আমলের ‘দুর্নীতি’র চেয়েও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শিলিগুড়ির সৌন্দর্যায়নের যে কাজ হয়েছে, তা নিয়েই অভিযোগ ওঠায় কিছুটা বিব্রত হন এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য।
অস্বস্তি এড়াতে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে ওই কাজের ফাইল আনিয়ে বোর্ড মিটিংয়েই পেশ করান চেয়ারম্যান। মিটিংয়ের পরে রুদ্রনাথবাবু বলেন, “কলকাতা ও শিলিগুড়ির সৌন্দর্যায়নের জন্য একই ধরনের আলো বসানোর নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকার। সেই অনুযায়ী, জরুরি ভিত্তিতে কাজ হয়। কোথাও অনিয়ম হয়নি। তবুও প্রশ্ন ওঠায় ফাইল এনে সকলের সামনেই সব কিছু নথিপত্র দেখানো হয়েছে।”
এর পরেও ডেপুটি মেয়র বলেন, “আলো লাগানোর কাজের মান, বরাত নিয়ে অনেক অভিযোগ, প্রশ্ন উঠেছে। সে জন্যই সরব হয়েছি। ফাইল দেখানো হলেও সব প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।” জ্যোৎস্নাদেবী বলেছেন, “কাজের মান নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। সেটা দেখা দরকার।” জলপাইগুড়ির তৃণমূল নেতা তথা এসজেডিএ-র বোর্ড সদস্য চন্দনবাবুর দাবি, ‘টিম’ তৈরি করে কাজের মান খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দিয়েছেন চেয়ারম্যান।
চলতি ফেব্রুয়ারিতেই শহরে নতুন আলো লাগানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়। ওই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের প্রাক্কালে ‘যুদ্ধকালীন তৎপরতায়’ মাত্র ১২ দিনের মধ্যে গোটা শহরে প্রায় ৯৭৮টি বাতিস্তম্ভ ও আলো লাগানো হয়। এসজেডিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, ১০ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে এসে আলো লাগানোর কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করায় প্রকাশ্যেই প্রশংসা করেন। ঘটনাচক্রে আলো লাগানোর কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তখন সরব হয়েছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য-সহ সিপিএম নেতাদের একাংশ।
ঘটনা হল, সম্প্রতি বাম আমলে জমি ভরাটের জন্য মাটি ফেলার নামে প্রায় দেড় কোটি টাকা ঠিকাদারদের বাড়তি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে এসজেডিএ-তে হইচই শুরু হয়। পাশাপাশি, বাম আমলেই সুকনা এলাকায় একটি রাস্তার কাজ বাবদ বাড়তি ২৫ লক্ষ টাকা বিল করার চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ পেয়ে ‘ফাইলটি’ আটকে দেন রুদ্রনাথবাবু। এ দিনের বোর্ড মিটিংয়ে সে সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পক্ষপাতী ছিলেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক তথা দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার-সহ কয়েক জন।
এসজেডিএ-র কিছু কর্মীর অভিযোগ, ওই সব ‘দুর্নীতি’ নিয়ে যাতে হইচই না হয়, সে জন্য সিপিএমের কয়েক জন নেতা ‘আড়াল থেকে সক্রিয়’ হয়ে ওঠেন। এমনকী, সিপিএমের সুরেই মিটিংয়ে কিছু তৃণমূল নেতা বলেন, আলো লাগানোর ‘দুর্নীতি’ আড়াল করতেই বাম আমলের নানা বিষয়কে সামনে এনে ‘বিতর্ক’ তৈরি করা হচ্ছে।
বোর্ড সদস্য শঙ্কর মালাকার তখন বলে ওঠেন, “স্বচ্ছ প্রশাসনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোট ক্ষমতায় এসেছে, তা দিতে আমরা দায়বদ্ধ। বাম আমলের দুর্নীতিকে আড়াল করার চেষ্টা করলে মানুষ আমাদের ছেড়ে কথা বলবে না!” পাশাপাশি আলো লাগানো নিয়ে কোনও বিতর্কের কথাও মানতে নারাজ শঙ্করবাবু। রুদ্রনাথবাবুর বক্তব্য, “বাম আমলের অনেক কাজ নিয়েই প্রশ্ন ও অভিযোগ রয়েছে। কিছুই আড়াল করার চেষ্টা হবে না। নগরোন্নয়ন দফতরকে সব জানিয়ে তদন্ত করানোর অনুরোধ করব।”
প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর মন্তব্য, “এসজেডিএ-র শুরু থেকে আমাদের আমলে কী হয়েছে, বর্তমান কর্তৃপক্ষ তা অডিট করে দেখতেই পারেন। তবে তার সঙ্গে গত ১১ মাসে কী হয়েছে, সেটাও দেখা দরকার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.