উচ্চ মাধ্যমিকে নয়া পাঠ্যক্রম
ইংরেজি-পাঠে নেরুদা থেকে ডিলানকে ছোঁয়ার প্রস্তাব
শ্চিমবঙ্গের উচ্চ মাধ্যমিকের নতুন ইংরেজি পাঠ্যক্রমে এ বার বিশ্বসাহিত্যের ভূরিভোজ! যেখানে পাবলো নেরুদার পাশে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ! সত্যজিৎ রায়ের জুড়ি বব ডিলান!
নতুন পাঠ্যসূচি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত নবনিযুক্ত বোর্ড অফ স্টাডিজ-এর বিশেষজ্ঞ কমিটি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ মাধ্যমিক সংসদে পাঠ্যক্রমের প্রস্তাবিত সূচি জমা দিয়েছে। সেখানে এক দিকে যেমন রয়েছে, ইংরেজি ভাষাকে ব্রিটিশ-মার্কিন ভূখণ্ড থেকে বের করে এনে বিশ্ব-দর্শনের প্রয়াস। অন্য দিকে বর্তমান সময়ের কথা মাথায় রেখে কবিতা, নাটক, উপন্যাসের পাশাপাশি রাখা হয়েছে নির্দিষ্ট নম্বরের ‘প্রজেক্ট ওয়র্কও’। এতে ভবিষ্যতে যে ছাত্রছাত্রীরা সাংবাদিকতা বা বাণিজ্য অথবা তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়বেন, তাঁদের সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির (ইংরেজি-র) আহ্বায়ক তথা প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রমের প্রধান রূপকার অনুরাধা ঘোষের কথায়, “এত দিন পর্যন্ত ইংরেজি সাহিত্য বলতে মূলত বোঝানো হত ব্রিটিশ-সাহিত্য। সেই ঔপনিবেশিক ধারণাটির বদল ঘটিয়ে ইংরেজিকে একই সঙ্গে একটি ভারতীয় ভাষা এবং আন্তর্জাতিক ভাষা এই দু’ভাবে দেখার চেষ্টা হয়েছে।” সেই কারণেই শেক্সপিয়র-কিটস- টেনিসনদের সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন ভারতীয় লেখকের লেখা অনুবাদ এবং মূল ইংরেজি, দু’ধরনেরই। যেমন, জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ এবং শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘অবনী বাড়ি আছো’। অনুরাধা জানালেন, আধুনিক উচ্চশিক্ষায় অনুবাদ বা ট্রান্সলেশন স্টাডিজ-এর উপরে ইদানীং খুবই জোর দেওয়া হচ্ছে। কর্মজীবনেও অনুবাদের গুরুত্ব বাড়ছে। ‘‘সেই জন্যই বহুপঠিত কবিতা বা গদ্য অনুবাদে রাখা হয়েছে। পড়ুয়াদের পক্ষে যাতে সহজেই সেগুলো মূল লেখার সঙ্গে মিলিয়ে পড়া সম্ভব হয়!”
পাশাপাশি থাকবে বিক্রম শেঠের ইংরেজি কবিতা ‘দ্য মাংকি অ্যান্ড দ্য ক্রোকোডাইল’। সত্যজিৎ রায়ের ‘দোজ সংস’, খুশবন্ত সিং-এর ‘কর্মা’। সেই সঙ্গে লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়ার বিভিন্ন লেখকের ইংরেজি অনুবাদ। যেমন, চেকভের ‘আ ক্যামেয়িন’, অকতাভিও পাজের ‘ব্রাদারহুড’, মার্কেজের ‘ওয়ান অফ দিজ ডেইজ’, মপাঁসার ‘দ্য ফলস গেম’ পাবলো নেরুদার ‘ডোন্ট গো ফার অফ’। এ ছাড়াও বেশ কিছু ‘চমক’ রয়েছে। বব ডিলানের ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’, মাদার টেরিজার নোবেল বক্তৃতা, চার্লি চ্যাপলিনের ‘ডেবিউ ইন স্টেজ’, ভ্যান গঘের ‘আ লেটার টু থিও’, অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের প্রবন্ধ! এমনকী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠি!
বিশেষজ্ঞ কমিটির উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন সুকান্ত চৌধুরী, স্বপন চক্রবর্তীর মতো ইংরেজির প্রবীণ অধ্যাপকেরা। সুকান্তবাবুর বক্তব্য, “সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ইউরোপীয় বা লাতিন আমেরিকার ভাষা পড়ানোর ব্যবস্থা থাকে না। তাই অনুবাদে সেই সব দেশের সাহিত্য জানা একটা লক্ষ্য হতেই পারে। তবে অনুবাদটি অত্যন্ত শক্তিশালী হতে হবে।” স্বপনবাবু বলেন, “যদি অনুবাদে রবীন্দ্রনাথ পড়তে পারি, তা হলে মার্কেজ পড়ব না কেন?” বিশ্বসাহিত্যের দিকে হাঁটার ক্ষেত্রে (উচ্চমাধ্যমিক স্তরেই) ইংরেজি ভাষাকে পথ হিসাবে ব্যবহার করায় নীতিগত ভাবে আপত্তি নেই তাঁর। স্বপনবাবুর আফশোসের জায়গাটি ভিন্ন। বললেন, “ঐতিহাসিক কারণেই সাহিত্যের পঞ্চব্যঞ্জন রান্না হচ্ছে ইংরেজিতে। বাংলা বা হিন্দি বা তামিলে নয়। আমি চাইব বাংলা বা হিন্দির মত ভাষাতেও ভবিষ্যতে এই ধরণের পদক্ষেপ করা হোক।”
পাঠ্যক্রম কমিটির এক সদস্য অবশ্য জানিয়েছেন, ইসমত চুঘতাইয়ের রচনা বাংলা সাহিত্যে রাখার সুপারিশ করছেন তাঁরা।
দীর্ঘ কাল কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা গবেষণা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন এক বিশেষজ্ঞ অবশ্য এই ব্যাপারে একটু ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাঁর মতে, স্কুল-স্তরে মূলত ভাষা শিক্ষার উপরেই জোর দেওয়া উচিত। যাতে ছাত্রছাত্রীরা ভাষাটি বলতে, লিখতে শেখে। ওই বিশেষজ্ঞের আক্ষেপ, “পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত-সহ কয়েকটি রাজ্যে খুব ভারী পাঠ্যক্রম করা হয়। মনে হয় যেন, অনেক কিছু পড়িয়ে দিলেই ছেলেমেয়েরা ভাল শিখবে। এটা একেবারেই ভুল ধারণা।” তাঁর মতে, পাঠ্যক্রম তৈরির সঙ্গে যুক্ত কমিটিতে তাই কেবল বিষয়ের বিশেষজ্ঞ থাকলেই হয় না। পাঠ্যবইয়ের লেখক, তথ্যপ্রযুক্তির লোকজনও থাকা জরুরি। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি পাঠ্যক্রম কমিটির ১১ জন সদস্যের সকলেই ওই বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা। এর মধ্যে এক জন কলেজের শিক্ষিকা, বাকিরা বিভিন্ন স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইংরেজি পড়ান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.