গুমোট বাড়িয়ে ‘ছিনতাই’ কালবৈশাখী
ক্ষিণবঙ্গের কালবৈশাখী ‘হাইজ্যাক’ করে নিল বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল!
সকালে আর সন্ধ্যাবেলায় নিয়ম করে দক্ষিণবঙ্গের আকাশ মেঘলা হয়ে থাকছে। কলকাতার আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে মেঘ। কখনও সকালে কিংবা বিকেলে আকাশ কালো হয়ে থাকছে (বুধবার বিকেলে যেমন আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছিল)। তা থেকে কোথাও কোথাও হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছে, কোথাও আবার এক ফোঁটাও বৃষ্টি নেই। দিনের বেলা তাপমাত্রাও পৌঁছে যাচ্ছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহ বইতে পারে বলে জানিয়ে দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। পাশাপাশি, আর্দ্রতা অত্যাধিক থাকায় বাড়ছে অস্বস্তি।
খুচরো বৃষ্টি কিংবা হাল্কা হাওয়া নয়, জোরদার কালবৈশাখী হলেই এই অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। রোজ নিয়ম করে বঙ্গোপসাগর দিয়ে মেঘ ঢুকছেও। কিন্তু তা যাচ্ছে কোথায়? মাঝপথেই কি তা ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যাচ্ছে?
আবহবিদেরা বলছেন, ওই জলীয় বাষ্প টেনে নিচ্ছে বাংলাদেশ এবং উত্তর পূর্ব ভারত। কারণ, ওই অঞ্চলে গত কয়েক দিন ধরে একটি ঘূর্ণাবর্ত দাঁড়িয়ে রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া মেঘ ঘূর্ণাবর্তের হাত ধরে ঢুকছে বাংলাদেশে। কালবৈশাখীর অনুকূল মেঘপুঞ্জ সৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপরে। গত কয়েক দিন ধরে ওই সব এলাকায় প্রায় রোজ কালবৈশাখী হচ্ছে। তার ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চল লাগোয়া উত্তরবঙ্গের কয়েকটি এলাকাও ঝড়-বৃষ্টি পাচ্ছে। এবং ওই সব এলাকায় আগামী কয়েক দিনও কালবৈশাখীর সম্ভাবনা থাকছে।
প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী, চৈত্র-বৈশাখে পূর্ব ভারতে তাপমাত্রা বাড়লে গরম হাওয়া উপরের দিকে উঠে যায়। সেই সময় বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকলে সেটাও গরম হাওয়ার সঙ্গে উপরে উঠে যায়। উপরের বায়ুস্তরের ঠান্ডা হাওয়া এবং জলীয় বাষ্প সঙ্গে নিয়ে উপরের দিকে ওঠা গরম হাওয়ার সংস্পর্শে তৈরি হয় উল্লম্ব মেঘ। সেই মেঘ ভাঙলেই কালবৈশাখী হয়।
দক্ষিণবঙ্গে এখন সেই দুই পরিস্থিতিই রয়েছে। তাপমাত্রা বাড়ছে। অস্বস্তির জন্মদাতা জলীয় বাষ্পও রয়েছে। কিন্তু তবু কেন নেই কালবৈশাখী?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, “তাপমাত্রা বাড়া এবং পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প থাকাটা অবশ্যই কালবৈশাখীর অন্যতম দু’টি শর্ত। কিন্তু উল্লম্ব মেঘপুঞ্জ তৈরি হতে গেলে জলীয় বাষ্প পৌঁছতে হবে ছোটনাগপুর মালভূমি এলাকায়। কিন্তু সেখানে তা পৌঁছচ্ছে না। তাই কোনও ফল হচ্ছে না।”
কেন? আবহবিদেরা বলছেন, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার ওই এলাকায় এখন উল্টো বায়ুপ্রবাহ বইছে। যার ফলে বঙ্গোপসাগর দিয়ে যে জলীয় বাষ্প ঢুকছে তা ছোটনাগপুরের দিকে যেতেই পারছে না। গোকুলবাবুর ব্যাখ্যা, “ঝাড়খণ্ডে এখন
পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমমুখী বাতাস বইছে। সেই গরম বাতাস উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে বটে, কিন্তু তা জলীয় বাষ্পকে ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে। জলীয় বাষ্প না থাকায় তৈরি হচ্ছে না কালবৈশাখীর উল্লম্ব মেঘও।”
কবে তা হলে কালবৈশাখী পাবে দক্ষিণবঙ্গ? আবহবিদেরা বলছেন, এর জন্য ছোটনাগপুর এলাকার উপরে থাকা বায়ুপ্রবাহের অভিমুখের পরিবর্তন হতে হবে। ওই এলাকা বা দক্ষিণবঙ্গের উপরে জোরদার কোনও ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলে তবেই বায়ুপ্রবাহের অভিমুখ বদলাবে। যেমনটা হয়েছিল এপ্রিল মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে। দুই সপ্তাহে দু’জোড়া কালবৈশাখী পায় কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গ। পরপর দুই দিন দু’টি করে। সেই পরিস্থিতি ছিল অস্বাভাবিক। তবে ওই চার দিনে কলকাতা কিংবা দক্ষিণবঙ্গে যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি আর থাকবে না বলেই জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
আর কত দিন ওই ঘূর্ণাবর্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে দক্ষিণবঙ্গবাসীকে? মার্চ মাসের শেষ দুই সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার যে পরিস্থিতি ছিল, এখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাচ্ছেন আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, ওই পরিস্থিতির জন্য মার্চ মাসের পুরোটাই প্রায় কালবৈশাখীহীন ছিল। আবহাওয়া দফতর বলছে, আপাতত কোনও কোনও এলাকায় বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে ইতস্তত বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু কালবৈশাখী? তার এখনই আসার কোনও লক্ষণ নেই।
ফলে অস্বস্তি কাটাতে একটা কালবৈশাখীর জন্য এখন হা পিত্যেশ করেই বসে থাকতে হবে দক্ষিণবঙ্গবাসীকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.