|
|
|
|
প্রথম বর্ষপূর্তি |
সরকারের ‘অকাজ’ই বেশি, মত বিরোধীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
প্রথম বছরের কাজে তাঁর সরকারকে ‘একশোয় একশো’ দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল মনে করছে, মমতার সরকার গত ১১ মাসে ‘অকাজ’ই বেশি করেছে!
মুখ্যমন্ত্রীর নিজের সরকারের ‘আত্মমূল্যায়ন’ সম্পর্কে মতামত দিতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, “উনি প্রশ্নপত্র নিজেই তৈরি করছেন, খাতা দেখছেন, নম্বর দিচ্ছেন! কেউ তো ১০০ বা ২০০ দিনের কাজের হিসাব চায়নি। উনি নিজেই আগে বলেছেন, ৮৫ বা ৯০% কাজ হয়ে গিয়েছে। এখন যা বলছেন, তাতে কিছুই আর বাকি নেই!” সূর্যবাবুর কটাক্ষ, “হিন্দিতে একটা গল্প আছে। এক পরীক্ষার্থী এক বার পরীক্ষার মোট নম্বরের চেয়েও বেশি পেয়েছিল! কী করে হল, জিজ্ঞেস করতে সে বলেছিল, যো পুছা, ও লিখা। যো নেহি পুছা, ও ভি লিখ দিয়া! এই সরকারের তেমন অবস্থা!”
দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের শেষে মমতার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সিপিএম বলে এসেছে, ‘নতুন’ সরকারকে ‘সময়’ দিতে হবে। কিন্তু ‘পরিবর্তনে’র প্রথম বর্ষপূর্তির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ শেষ হয়ে গিয়েছে। দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবু অবশ্য সেই পথে না-গিয়ে সরকারকে সময় দেওয়ার ‘লাইনে’রই পুনরাবৃত্তি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমরা তো বারেবারেই বলেছি, সরকারকে সময় দিতে হবে। আরও সময় দিতে হবে কি হবে না, মানুষ বিচার করবেন। শুধু আমরা বললেই হবে না।” বিরোধী দলনেতার আরও সংযোজন, “প্রথম থেকেই আমরা যেটা চেয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, কিছু করতে না-পারুন, অকাজ করবেন না! কিন্তু ঠিক সেটাই হল! ছোটখাটো কাজ না-করে অকাজ হল! উনি (মুখ্যমন্ত্রী) দাবি করলেন, বড় বড় সমস্যার ফুৎকারে সমাধান করে ফেলেছেন!” গত ১১ মাসে চড়া বিরোধিতার পথে না-গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যপালকে চিঠি লিখেছেন বিরোধী দলনেতা। তার মধ্যে নির্বাচিত কিছু চিঠির সংকলন আগামী সপ্তাহে বাম পরিষদীয় দলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা হবে।
তবে একই সঙ্গে সূর্যবাবু ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন, সরকারের কাজে ‘অন্যায্য’ বা ‘অন্যায়’ কিছু দেখলে প্রতিবাদ হবেই। এই সূত্রে অবধারিত ভাবেই এসেছে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ। গত কয়েক দিনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কখনও পুলিশের বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’, কখনও আবার ‘অতি-সক্রিয়তা’র অভিযোগ উঠেছে। তার প্রেক্ষিতে সূর্যবাবু বুধবার বলেন, “এগুলো পরস্পর-বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাবলে ভুল হবে। সেই ‘রায়গঞ্জে বেল, মাজদিয়ায় জেল’ থেকেই ঐতিহ্য সমানে চলেছে! কোথায় নিষ্ক্রিয় থাকতে হবে, কোথায় অতি-সক্রিয় হতে হবে নির্দিষ্ট মনোভাব নিয়েই পুলিশ-প্রশাসন চলছে।” সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিবাদের প্রসঙ্গ এনে সূর্যবাবুর অভিমত, “আমরা প্রথমে বলেছিলাম, আক্রমণ শুধু বিরোধীদের উপরে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখন সবাই আক্রান্ত। গণতন্ত্রের উপরেই আক্রমণ আসছে। যাঁরা পরিবর্তন চেয়েছিলেন, তাঁরাই এই কথাগুলো আরও জোরালো ভাবে বলছেন।”
সিপিএমের আশঙ্কা, সাতের দশকে জরুরি অবস্থাকে ঘিরে যা যা হয়েছিল, তার সবেরই পুনরাবৃত্তি হবে। সূর্যবাবুর কথায়, “জরুরি অবস্থা একটা সাংবিধানিক ধারা, যা রাজ্য সরকার প্রয়োগ করতে পারে না। কিন্তু তখন যা যা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে তার সব কিছুই আবার প্রত্যক্ষ করতে হবে! তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় ব্যক্তিকেও গৃহবন্দি হতে হয়েছিল। এখন মন্ত্রীদের উপরে নজরদারি চলছে। পুলিশ দিয়ে মন্ত্রীর মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগাতে হয়েছে, সে কথা তো আগেই বলেছি!”
বামেদের সামনে এখন শক্ত ‘পরীক্ষা’ আগামী পঞ্চায়েত ভোট। যে ভোটে মুর্শিদাবাদের পর থেকে পশ্চিমে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া বাদ দিলে বিস্তীর্ণ দক্ষিণবঙ্গে প্রার্থী দিতে পারা নিয়েই সংশয়ে সিপিএম-সহ বামেরা। সিপিএমের হিসাবে, রাজ্যের ৩৩৫৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি এখন ‘অকার্যকর’। গা-জোয়ারি করে নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের দলত্যাগ বা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে ৪১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে। আরও ৫৯৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এমন আছে, যেখানে কেউ পদত্যাগ করতে বলেনি। স্থানীয় তৃণমূলের ‘ফরমান’ মেনে নির্বাচিত পঞ্চায়েতকে চলতে হচ্ছে। সূর্যবাবুর বক্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটের দিকে লক্ষ রেখে আক্রমণের তীব্রতা বাড়ছে। চার হাজারের বেশি সমবায়, হাজারের বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে। চেষ্টা করব লড়াই করার।” সিপিএম নেতৃত্ব বিলক্ষণ জানেন, বাম জমানায় যেমন পঞ্চায়েতে অধিকাংশ জায়গায় বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারতেন না, এখন সেই পরিস্থিতির মুখোমুখিই দাঁড়াতে হচ্ছে বর্তমান বিরোধীদের! |
|
|
|
|
|