|
|
|
|
উদ্ধারকাজে দেরি |
মালগাড়ি তুলতে বেসরকারি ক্রেন মেলেনি, তদন্তে রেল |
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
স্রেফ একটা ক্রেন ভাড়া চেয়েছিল রেল। যাতে বেলাইন মালগাড়ির উল্টে পড়া মালবোঝাই বগিগুলিকে দ্রুত সরিয়ে চান্ডিল-মুরি শাখায় ফের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা যায়।
কিন্তু রেলের অনুরোধে কান দেয়নি পুণের বেসরকারি ক্রেন সংস্থা। তারা সড়কপথে চলা ক্রেন ভাড়া না-দেওয়ায় লাইনচ্যুত বগি তাড়াতাড়ি তোলা গেল না। ফলে ওই লাইনে ফের ট্রেন চালু করতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেল। ভোগান্তি পোহাতে হল যাত্রীদের। বেসরকারি ওই সংস্থাটি কেন এমন আচরণ করল, তা নিয়ে তদন্ত করছে রেল মন্ত্রক।
পুরুলিয়ার সুইসা ও তোরাং স্টেশনের মাঝখানে গত রবিবার বেশি রাতে একটি মালগাড়ির ৩২টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ওই সব বগিতে চুনাপাথর বোঝাই ছিল। দুর্ঘটনাটি ঘটে মাওবাদী এলাকার মধ্যে। তাই এটা নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পিছনে নাশকতা আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মালগাড়ি বেলাই হওয়ার পর থেকেই ওই শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়ে চলেছে। দুর্ঘটনার পরে বেশ কিছু যাত্রী-ট্রেনের রুট বদলে দেওয়া হয়। ঘুরপথে ওই সব ট্রেন চালানোর ফলে যাত্রীদের যাত্রাপথের দৈর্ঘ্য এবং সফরের সময় দু’টোই বেড়ে যায়। তাঁদের হয়রানি কমাতেই তাড়াতাড়ি করে ওই বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে সড়কপথে চলার উপযোগী ক্রেন চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা না-দেওয়ায় মেরামতি সারতে সময় বেশি লাগছে বলে অভিযোগ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তাদের।
সড়কপথের ক্রেন চাই কেন?
দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রের খবর, মালগাড়ির বগিগুলি যেখানে পড়েছে, তার দু’দিকেই প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু ‘গার্ডওয়াল’ রয়েছে। এবং ওই
জায়গায় রয়েছে একটি বিরাট বাঁকও। মাথা খোলা ‘টানেল’-এর মধ্যে বগিগুলি এমন ভাবে উল্টেপাল্টে গিয়েছে যে, রেললাইন দিয়ে আনা রেলের ১৪০ টনের ক্রেন দিয়েও সেগুলিকে তোলা যাচ্ছিল না। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সড়কপথে চলতে সক্ষম ক্রেন আনা হবে।
সেই অনুসারে জামশেদপুরে গামারিয়ায় রাখা পুণের ওই সংস্থার একটি ক্রেন চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্রেন দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় তারা। ফলে উদ্ধারকাজে দেরি হতে থাকে। সংস্থাটি যে জনস্বার্থের কাজে সাহায্য করার জন্য রেলের অনুরোধ রাখেনি, তা কেন্দ্রীয় সরকারকেও জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বুধবার বলেন, “সড়কপথে চলাচল করতে পারা ওই ক্রেন না-পাওয়ায় দেরি হচ্ছে ঠিকই। তবে এ দিন দুপুরের মধ্যে লাইনচ্যুত বগিগুলির বেশ কয়েকটিকে সোজা করা গিয়েছে।” এর পরে স্লিপার পেতে পাথর ফেলে প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ পথে নতুন রেললাইন বসানো হবে। তার পরে ওভারহেড তার লাগিয়ে ব্যবস্থা হবে ট্রেন চলাচলের। কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও কিছু দিন ওই এলাকায় ঘণ্টায় ১৫-২০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চালানো হবে বলে জানান তিনি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করর জন্য দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার এবং অন্য আধিকারিকেরা দু’দিন ধরে দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে আছেন। ওই লাইনকে ফের তাড়াতাড়ি ট্রেন চালানোর উপযোগী করে তোলার জন্য গ্যাংম্যান-সহ প্রায় ৬০০ কর্মীকে মেরামতির কাজে লাগানো হয়েছে। দিনরাত কাজ করছেন তাঁরা। |
|
|
|
|
|