একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার থেকে এক ব্যক্তির কার্ড খোয়া যাওয়ার অভিযোগ উঠল বসিরহাটে। তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, হাসনাবাদের ভেবিয়ার বাসিন্দা দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটিএম কার্ডটি দিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৬ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ওই বৃদ্ধের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছে সিআইডি। বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “বসিরহাটের আইসি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে এটিএম কাউন্টারে থাকা সিসিটিভি-র ফুটেজ। তদন্তের অগ্রগতির বিষয়কে সিআইডিকে একটি রিপোর্টও দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ ও ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় শিক্ষক দিলীপবাবু গত ২৫ মার্চ বসিরহাটে এসেছিলেন। ওই দুপুরে পরপর দু’টো এটিএম কাউন্টারে ঘুরে টাকা তুলতে পারেননি। সেই সময়ে বছর চব্বিশের এক যুবক তাঁকে জানান স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিসের সামনের এটিএম কাউন্টারটি ঠিক আছে। দিলীপবাবুর কথায়, “ওই দুপুরে পরপর কয়েকটি কাউন্টারে ঘুরে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত অবস্থায় যখন ওই কাউন্টারে ঢুকি সেখানে তখন কোনও প্রহরী ছিল না। এমনকী ছিন না কোনও দরজা। আমার পিছনেই দাঁড়িয়েছিল ওই যুবক। এ দিকে, মেশিনে কার্ড ঢোকানোর পর টাকার পরিবর্তে আমার অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে সেটা লেখা একটি কাগজ বের হয়।” মেশিনে গোলমাল আছে ভেবে বাড়ি চলে যান ওই বৃদ্ধ।
দিলীপবাবু বলেন, “২৬ মার্চ স্কুল ছুটির পর মালঞ্চে একটি এটিএম কাউন্টার থেকে টাকা তুলতে পারিনি। তার পর দিন ফের অন্য একটি এটি কাউন্টার থেকে টাকা তোলার চেষ্টা করলে জানা যায়, কার্ডটি ঠিক নেই। এই প্রথম সন্দেহ হয় ওই শিক্ষকের।” ভালো করে দেখতে গিয়ে তিনি লক্ষ করেন তাঁর কাছে থাকা এটিএম কার্ডের পিছনে ‘শান্তনু’ লেখা। দিলীপবাবুর দাবি, কাউন্টারের পাশে কার্ডটি রেখে টাকার পরিমাণ লেখা কাগজ দেখার সময় অসতর্ক হতেই পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ওই যুবক কার্ডটি বদলে নেয়। পুলিশ মনে করছে, কার্ডটি বদলানোর আগেই পিছন থেকে পিন নম্বরটি দেখে নিয়েছিল ওই দুষ্কৃতী।
সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে গেলে ম্যানেজার দিলীপবাবুকে জানান তাঁর কার্ডটি পাল্টে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই কার্ড ব্যবহার করে বেশ কয়েক হাজার টাকা তোলা হয়েছে। প্রথমে মিনাখাঁ ও পরে বসিরহাট থানায় জানিয়েও কাজ না হওয়ায় শেষে এসডিপিও-র দ্বারস্থ হন দিলীপবাবু। গত ৩০ মার্চ পুলিশ তদন্তে নামে। ইতিমধ্যে দিলীপবাবু গোটা ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের মূল অফিসে জানান। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দিলীপবাবুকে লিখিত ভাবে জানায় ওই কার্ড দিয়ে কোন কোন এটিএম থেকে কখন, কত টাকা তোলা হয়েছে। কলকাতার দু’টি শপিং মল থেকে ওই কার্ড দিয়ে জিনিস কেনা হয়েছে। এ ছাড়া, একটি পেট্রল পাম্প থেকে ৭০০ টাকার তেল নেওয়া হয়েছে বলে জানান ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তদন্তে নেমে পুলিশ দিলীপবাবুর কাছে থাকা এটিএম কার্ডের মালিক শান্তনু সর্দারের বাড়ির হদিস পায়। সেই মতো দেগঙ্গার কালিয়ানির গ্রামের শান্তনুকে জেরা করা হয়। তিনি জানান, গত ২১ মার্চ তাঁর এটিএম কার্ডটি খোয়া গিয়েছিল। সে ব্যাপারে তিনি দেগঙ্গা থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। দিলীপবাবুর কার্ড চুরির ঘটনাটি গত ১১ এপ্রিল সিআইডিকে জানানো হয়। ১৩ এপ্রিল সিআইডি-র পক্ষ থেকে সমস্ত তথ্য তাদের সাইবার ক্রাইম দফতরে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, হাড়োয়া ও দেগঙ্গার একটি চক্র বিভিন্ন এটিএম থেকে গ্রাহকদের ঠকিয়ে টাকা তুলে নেওয়ায় সক্রিয়। এ ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে। |