বচসা বেধেছিল একটি লোকাল ট্রেনে। তার জেরে ক্ষুর, রড, পাথর নিয়ে পরপর তিনটি লোকালে হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটে টিটাগড় স্টেশনে। ট্রেনের ভিতরে ছোড়া হয় পাথরও। হামলায় আহত হন আট জন যাত্রী। তাঁদের মধ্যে দু’জনের আঘাত গুরুতর। হাঙ্গামার প্রতিবাদে ট্রেনযাত্রীরা ব্যারাকপুর স্টেশনে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ হামলাকারীদের হাতে পেয়েও গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ তুলে ভাঙচুর চালানো হয় ব্যারাকপুর স্টেশনের আরপিএফ বুথে। শিয়ালদহ মেন শাখায় প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। পুলিশ তিন বিক্ষোভকারীকে আটক করলেও হামলাকারীদের ধরতে পারেনি।
রাত ৮টা নাগাদ ঘটনার সূত্রপাত কল্যাণী লোকালে। বসার জায়গা নিয়ে একটি অবাঙালি যুবকের সঙ্গে কয়েক জন যাত্রীর কথা কাটাকাটি হয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে রেল পুলিশ জানায়, যুবকটি অন্য যাত্রীদের উদ্দেশে কটূক্তি করতে থাকে। এক যাত্রী বলেন, “যুবকটি গালাগালি করছিল। প্রতিবাদ করায় ক্ষুর বার করে হুমকি দিতে থাকে।” |
ব্যারাকপুর স্টেশনে ট্রেনযাত্রীদের বিক্ষোভ। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য |
যাত্রীদের অভিযোগ, যুবকটি বলতে থাকে, ‘টিটাগড় এলে দেখে নেব।’ মোবাইল ফোনে সঙ্গীদের টিটাগড় স্টেশনে আসতে বলে সে। যাত্রীরা জানান, ট্রেনটি টিটাগড় স্টেশনে ঢোকামাত্র ওই যুবক নেমে যায়। ইতিমধ্যে স্টেশনে চলে এসেছিল তার সঙ্গীরা। কল্যাণী লোকাল টিটাগড় ছেড়ে চলে যেতেই পরপর ঢোকে নৈহাটি, ব্যারাকপুর ও শান্তিপুর লোকাল। ওই যুবকের সঙ্গীরা ক্ষুর, রড ও পাথর নিয়ে তিনটি ট্রেনেই হামলা চালায়। যথেচ্ছ পাথর ছোড়া হয়। যাত্রীদের ট্রেন থেকে টেনে নামিয়ে লোহার রড দিয়ে মারতে থাকে তারা। ক্ষুরও চালায়।
তিনটি ট্রেনের যাত্রীরাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁরা জানান, আরপিএফ জওয়ানেরা উল্টো দিকের প্ল্যাটফর্মেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। যাত্রীরা চিৎকার করে তাঁদের সাহায্য চাইতে থাকেন। কিন্তু ওই জওয়ানেরা তাঁদের সাহায্য করতে আসেননি বলে যাত্রীদের অভিযোগ। হামলায় আহত হন অন্তত আট জন। তাঁদের মধ্যে প্রদীপ শাসমল ও নাসিম আখতার নামে গুরুতর আহত দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে রেল-কর্তৃপক্ষ জানান।
তিনটি ট্রেন ব্যারাকপুর স্টেশনে পৌঁছনোর পরে যাত্রীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। আপ ও ডাউন লাইনে বড় পাথর ফেলে আটকে দেওয়া হয় ট্রেন। আরপিএফ বুথ থেকে একটি টেবিল তুলে প্লাটফর্মে আছড়ে ভেঙে ফেলা হয়। শিয়ালদহ মেন শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন স্টেশনে লোকাল ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকায় আটকে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। পরিস্থিতির সামাল দিতে আসে ব্যারাকপুর, টিটাগড় ও জগদ্দল থানার পুলিশ। প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেন বন্ধ থাকে। রাত সওয়া ৯টা নাগাদ ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে রেলকর্তারা জানান। পুলিশ জানায়, টিটাগড়ের হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ১৭ জন যাত্রী অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশ দুষ্কৃতীদের খুঁজছে। |