এতদিনের জগদ্দল পাথরটা বুঝি সরতে চলেছে! বস্তুত, গত কয়েক মাস ধরে উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর হাবরায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের যে তৎপরতা শুরু হয়েছে পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাতে এমনটাই মনে করছেন হাবরাবাসী।
হাবরায় যানজটের সমস্যা শহরবাসীর রোজকার জীবনযাত্রার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছে। এত দিন ধরে আগের সরকারের আমলে বেশ কয়েকবার চেষ্টা হলেও যানজটের হাবরা ফের ফিরে গিয়েছিল তার পুরনো চেহারায়। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে বহু পুরনো এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে হাবরা পুরসভা। এতদিন যাবৎ যানজট সমস্যার সমাধানে যে প্রচেষ্টা হয়েছে তার সঙ্গে এখনকার পার্থক্য হল, আগে যশোহর রোডে যানজটের সমস্যার সমাধানে হকার উচ্ছেদের অভিযান হলেও সেই সব হকারদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে কোনও দিশা ছিল না। ফলে সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান সম্ভব হয়নি। এ বার উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পুনর্বাসনে হকার মার্কেট তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। |
|
|
হকার উচ্ছেদ। |
প্রস্তাবিত হকার মার্কেটের জায়গা। |
|
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, এ জন্য হকার মার্কেটটি পাঁচ তলা করা হবে। সেখানে ৪০০টি দোকানঘর থাকবে। আগামী ২১ এপ্রিল রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ওই মার্কেটের শিলান্যাস করার কথা। হকার সমস্যাই নয়, হাবরা পুর এলাকার বাসিন্দাদের কাছে আর এক বড় সমস্যা নিকাশি। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জমা জলের দীর্ঘদিনের সমস্যা নিয়ে আগের বাম পরিচালিত পুরসভা এবং বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার কাছে বহু দরবার করেছেন স্থানীয় মানুষ। সম্প্রতি সেই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। এ ব্যাপারে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির জন্য হাবরা পুর এলাকায় ইতিমধ্যেই সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে (মিউনিসিপ্যাল অ্যাফেয়ার্স ডিপাটমেন্ট) এমইডি।
পুরসভার এমন উদ্যোগের পাশাপাশি, স্থানীয় বিধায়ক ও রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক হাবরায় যানজটের সমস্যা মেটাতে হাবরা ১ নম্বর রেল গেট এবং ২ নম্বর রেলগেটের কাছে উড়ালপুল তৈরির জন্য রেলকে অনুরোধ করেছিলেন। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে রেল এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে ওই দুই জায়গায় ইতিমধ্যেই উড়ালপুলের জন্য জমি শনাক্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “রেল এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে। রেল ইতিমধ্যেই এ জন্য ১৮ কোটি টাকা দিয়েছে। |
|
|
সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘কলতান’। |
পিকনিক গার্ডেন। |
|
১৬ কোটি টাকা দেবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। উড়ালপুল হয়ে গেলে যানজটের সমস্যা আর থাকবে না।”
২০০০ সালে হাবরার মানুষের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দাবি মেনে ‘কলতান’-এর কাজ শুরু হয়। রাজনৈতিক চাপান-উতোরে কাজ শেষ হওয়া নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছিল। এমনকী কাজ অসম্পূর্ণ থাকা অবস্থাতেই ভোট এসে যাওয়ায় তড়িঘড়ি ‘কলতান’-এর উদ্বোধনও করে দেয় তৃণমূল-বিজেপি পরিচালিত পুরসভা। বর্তমানে অবশ্য ‘কলতান’-এর কাজ সমাপ্ত বলে জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার চেয়ারম্যান তপতী দত্ত বলেন, “মাস খানেকের মধ্যেই ‘কলতান’-এর উদ্বোধন করা হবে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।’’
হকার সমস্যা, নিকাশির সমস্যা প্রভৃতির সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার পাশাপাশি হাবরা শহরকে সুন্দর করে সাজানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে পুরসভা। হাবরা শহরকে আলোকিত করতে বসানো হচ্ছে নতুন ধরনের আলো। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, গোটা শহরেই যশোহর রোডের একধারে বিশেষ আলো বসানো হচ্ছে। পুরসভার ৫৭টি এবং বিধায়ক তহবিলের টাকায় ৮০টি ওই ধরনের আলোর ব্যবস্থা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেলঘরিয়া এলাকায় পুর উদ্যোগে একটি পিকনিক স্পট তৈরির কাজও শেষ হওয়ার মুখে।
|
উন্নয়নের পাঁচকাহন |
• নিকাশির মাস্টার প্ল্যান তৈরির জন্য সমীক্ষা শুরু।
• যানজট সমস্যার সমাধানে হকার উচ্ছেদ ও তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
• ১ ও ২ নম্বর রেলগেটে উড়ালপুলের জন্য জমি শনাক্তকরণ।
• সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘কলতান’-এর উদ্বোধন শীঘ্রই।
• শহর সাজাতে বিশেষ আলোর ব্যবস্থা। |
|
যানজট সমস্যা থেকে নিকাশি, উড়ালপুলের ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘কলতান’-এর উদ্বোধনের প্রস্তুতি ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কাজে পুরসভার তৎপরতায় দীঘদিনের এই সব সমস্যার সমাধানে স্পষ্টতই আশার আলো দেখছেন হাবরাবাসী। যেমন আইএমএ (ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন)-র হাবরা শাখার সম্পাদক শঙ্কর সরকার বলেন, “পুরসভা ও প্রশাসন যে ভাবে এই সব সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে তাতে আমরা খুশি। দীর্ঘদিন ধরে এই সব সমস্যার সমাধান চাইছেন হাবরার মানুষ। যানজট, নিকাশি সমস্যার সমাধান হলে, ‘কলতান’ চালু হলে নিঃসন্দেহে তা হাবরাবাসীর কাছে সুখবর।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী ভক্ত ঘোষ বলেন, “যানজট থেকে নিকাশি, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘কলতান’, পিকনিক গার্ডেন ইত্যাদি নানা উন্নয়নমূলক কাজে যে ভাবে পুরসভা এগিয়ে এসেছে তাতে দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণের আশায় দিন গুনছেন হাবরাবাসী।” |