|
|
|
|
পূর্বে কাঠগড়ায় তৃণমূল |
উন্নয়নে বরাদ্দ অর্থের অর্ধেক খরচ হয়নি |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
যত দিন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট, তত দিন উন্নয়নের কাজ না-হওয়ার জন্য ঘুরেফিরে তাদের ‘অসহযোগিতা’কেই দায়ী করত পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল জেলা পরিষদ। কিন্তু এখন রাজ্যেও তৃণমূলই ক্ষমতাসীন। এই পরিস্থিতিতেও গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে না পারার জন্য দলীয় জনপ্রতিনিধিদের অক্ষমতার কথা কার্যত মেনে নিতেই হল জেলা পরিষদের তৃণমূল কর্মকর্তাদের।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বার্ষিক পর্যালোচনা বৈঠকের (গত ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত) রিপোর্ট অনুসারে, ২০১১-১২ আর্থিক বছরে রাজ্য তৃতীয় অর্থ কমিশন থেকে গ্রামোন্নয়ন খাতে জেলার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত মোট ২৩ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা পেয়েছিল। ওই আর্থিক বছরে খরচ হয়েছে মোটে ১১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ শতকরা হিসাবে খরচ হয়েছে মাত্রই ৪৮.৭২ শতাংশ টাকা। ১২ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা খরচ করাই যায়নি। একই খাতে জেলার ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতিতে রাজ্য তৃতীয় অর্থ কমিশন বরাদ্দ করেছিল ৬ কোটি টাকা। খরচ হয়েছে মাত্রই ২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা (বরাদ্দের মোটে ৪৪.৪৬ শতাংশ)!
সেই ২০০৮ থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত উন্নয়ন না হওয়ার জন্য বামফ্রন্ট সরকারকেই দায়ী করে এসেছেন জেলায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী তৃণমূলের নেতৃত্ব। কাজ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘বঞ্চনা’ ও ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ তুলতেন জেলা পরিষদের তৃণমূল কর্মকর্তারা। এ বার অবশ্য উন্নয়নের কাজ হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে পঞ্চায়েতস্তরে খামতির কথা মেনে নেন জেলা পরিষদের সভাপতি গান্ধী হাজরা। তিনি বলেন, “উন্নয়ন-খাতে অর্থ বরাদ্দ হওয়ার পরে তা রূপায়ণের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতস্তরে খামতি রয়েছে। অনেক সময়ে আবার কাজ করার পরেও ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ প্রদানে দেরি হওয়ায় সামগ্রিক খরচ সঠিক ভাবে ফুটে ওঠে না।”
গত চার বছর ধরেই জেলার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে তৃণমূল চূড়ান্ত অযোগ্যতার পরিচয় দিয়ে চলেছে বলেই অবশ্য অভিযোগ সিপিএমের। জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘ব্যর্থতা’র অভিযোগ তুলে বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের প্রাক্তন সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহি বলেন, “বিভিন্ন উন্নয়ন-প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরি থেকে রূপায়ণে সম্পূণর্র্ ব্যর্থ তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েত। আসলে উন্নয়নের মানসিকতাই নেই তৃণমূল নেতৃত্বের। জেলার উন্নয়ন-কাজ সামগ্রিক ভাবেই ব্যাহত হচ্ছে।” জেলা পরিষদের রিপোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রয়োদশ কমিশনের বরাদ্দ টাকা খরচের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তাতেও দেখা যাচ্ছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ টাকাই খরচ হয়নি। ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন ২০১১-১২ আর্থিক বছরে পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে উন্নয়ন-খাতে বরাদ্দ করেছিল ২১ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। খরচ হয়েছে মাত্র ১৪ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা (বরাদ্দের ৬৬.৩৮ শতাংশ)। একই খাতে ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন জেলার পঞ্চায়েত সমিতিগুলিকে মোট ৪ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল। খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৪ লক্ষ টাকা (৬১.৫৪ শতাংশ)। খরচের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে নন্দকুমার (২০.১৬ শতাংশ), খেজুরি (২৭.১৬ শতাংশ), তমলুক (৩৪.১৬ শতাংশ) ও ভগবানপুর-২ (৩৩.৯৯ শতাংশ) ব্লক। এর মধ্যে খেজুরি (পঞ্চায়েত সমিতির বাম সদস্যরা সকলেই ঘরছাড়া হওয়ায় ব্লক প্রশাসন উন্নয়নের কাজ দেখভাল করে) ছাড়া বাকিগুলি তৃণমূলেরই দখলে। জেলায় সিপিএমের দখলে থাকা অন্য দুই পঞ্চায়েত সমিতি পাঁশকুড়া-১ ও পটাশপুর-১ যথাক্রমে বরাদ্দ টাকার ৫৭.৩০ ও ৭০.৮৩ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। তবে, খরচের দিক থেকে শীর্ষে থাকা সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতি (৯৭.৯১ শতাংশ) রয়েছে তৃণমূলেরই দখলে। |
|
|
|
|
|