|
|
|
|
ঝাড়গ্রামের কারখানায় যৌথ আন্দোলন-মঞ্চে বাম-তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রামে একটি ভোজ্যতেল কারখানায় কর্মীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে শাসক তৃণমূলের কর্মীরা ‘হাত মিলিয়েছেন’ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সিপিএমের সঙ্গে। সিটুর ঝান্ডার পাশে তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়েই কারখানার সামনে চলছে বিক্ষোভ-আন্দোলন। সঙ্গে রয়েছে সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-ও। রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক আকচা-আকচির বাতাবরণে, বিশেষত জঙ্গলমহলে, এমন ‘ঐক্য’ খানিক ‘অন্য রকম’।
শ্রমিকদের ‘ন্যায্য দাবি আদায়ের স্বার্থে’ এই ‘ঐক্যে’ দোষের কিছু দেখছেন না আন্দোলনকারী তৃণমূলের শ্রমিক নেতা-কর্মীরা। এই ‘একজোট’ হতে পারার ফলে ‘আন্দোলন মজবুত’ হচ্ছে বলে দাবি বাম ইউনিয়নের নেতাদেরও। তবে আন্দোলনের ফলে কারখানাটির কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। মালিকপক্ষকে কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। কারখানা-কর্তৃপক্ষের তরফে মঙ্গলবার তিনটি সংগঠনকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কারখানার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হলে ‘সাসপেশসন অফ ওয়ার্ক’ ঘোষণা করা হবে। |
|
ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
ঝাড়গ্রাম শহরের ঘোড়াধরা-শীতলাডিহি এলাকায় ওই অয়েল-মিলটিতে বনস্পতি ও রিফাইন্ড অয়েল উৎপাদন হয়। প্রাত্যহিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দেড়শো টন। সব মিলিয়ে কারখানায় প্রায় তিনশো জন কাজ করলেও স্থায়ী শ্রমিক সাকুল্যে মাত্রই ৪০। ওই ৪০ জন স্থায়ী শ্রমিকের বেতন বাড়ানোর দাবিতেই সিটু নিয়ন্ত্রিত ‘ওয়ার্কাস ইউনিয়ন’ এবং সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি অনুমোদিত ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড স্টাফ ইউনিয়ন’-এর সঙ্গে আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূলের ‘শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন’। দুই বাম ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে গত ৯ দিন ধরে কারখানার সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূলপন্থী সংগঠনটির সদস্যরাও। তিনটি সংগঠনেরই অভিযোগ, ৪০ জন স্থায়ী শ্রমিকের মূল-বেতনের ২৫ শতাংশ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েও তা কার্যকর করছেন না কর্তৃপক্ষ। প্রতি তিন বছর অন্তর শ্রমিকদের সঙ্গে বেতন ও দাবিদাওয়া সংক্রান্ত চুক্তি করেন কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ চুক্তির মেয়াদ ২০১০-এর জুনে শেষ হওয়ার পরে জঙ্গলমহলের অশান্তির অজুহাতে বিগত ২২ মাসে আর নতুন চুক্তি হয়নি। গত কয়েক মাস ধরেই দু’পক্ষে চাপান-উতোর চলছে। সম্প্রতি ঠিকা ও অস্থায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বেতন-চুক্তি হলেও স্থায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি হয়নি। স্থায়ী শ্রমিকরা ২৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবিতেই অনড়। এই দাবিতেই গত ১০ এপ্রিল থেকে কারখানার দরজার সামনে বাম, অবাম শ্রমিক সংগঠনগুলির বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু হয়েছে।
কারখানার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক দুলাল মাহাতো বলেন, “শ্রমিকদের দাবি আদায়ই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেখানে ‘আমরা-ওরা’ করব কেন? সিপিএমই তো এত দিন এ রাজ্যে আমরা-ওরা করে এসেছে।” কর্মীদের ‘স্বার্থরক্ষার’ জন্য এক সারিতে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে দোষের কিছু দেখছেন না দুলালবাবুরা। কারখানার সিটু নেতা অশোক চন্দ এবং এআইটিইউসি নেতা নিরঞ্জন পাত্রদের বক্তব্য, “তৃণমূলের লোকজন সমর্থন করায় আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়েছে।” বাম, অবাম ট্রেড ইউনিয়নগুলির জেলা ও রাজ্যস্তরের নেতৃত্ব শ্রমিক-কর্মীদের দাবি আদায়ে এ ধরনের ‘ঐক্যবদ্ধ’ আন্দোলনের মধ্যে ‘বিরল’ কিছু দেখছেন না। তাঁদের বক্তব্য, দক্ষিণবঙ্গে চটকল বা উত্তরবঙ্গে চা-বাগানেও এ ভাবেই যৌথ আন্দোলনের ঐতিহ্য রয়েছে। এই মুহূর্তে বহুল আলোচিত হুগলির সাহাগঞ্জে ডানলপ কারখানা খোলার আন্দোলনেও সক্রিয় রয়েছে ‘যুক্তমঞ্চ’ই।
ঝাড়গ্রামের কারখানাটির ম্যানেজার পবনকুমার শর্মার বক্তব্য, “স্থায়ী শ্রমিকদের সাধ্যমতো বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দিতেও আমরা রাজি আছি। কিন্তু শ্রমিকরা মূল বেতনের উপর তাঁদের দাবিমতো বৃদ্ধি চাইছেন। সেই কারণেই চুক্তি করা যাচ্ছে না। জঙ্গলমহলের অশান্তির সময়ে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও আমরা লে-অফ করিনি। সবার প্রাপ্যই মিটিয়েছি।” জট কাটাতে ঝাড়গ্রামের সহকারী শ্রম কমিশনার তপন হালদার বলেন, “মালিক ও শ্রমিক পক্ষকে নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনায় বসার পরিকল্পনা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|