বাম সমর্থক বধূকে বিবস্ত্র করে মার সালিশিতে, অভিযুক্ত তৃণমূল
তৃণমূলে যোগ দিতে বলা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু সিপিআইয়ের মহিলা সমিতির সঙ্গে যুক্ত ওই গৃহবধূ এ কথায় রাজি না হওয়ায় গ্রামে সালিশি সভা ডেকে সকলের সামনে তাঁকে বিবস্ত্র করে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় অপমানিত ওই বধূ বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁর চিকিৎসা চলছে। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কাঁথির মারিশদা এলাকার উত্তর কানাইদিঘি গ্রামের এই ঘটনায় তৃণমূলের ২১ জন কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি, তবে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন ওই বধূর জবানবন্দি নিয়ে এসেছে পুলিশ। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “গোটা ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উত্তর কানাইদিঘির বাসিন্দা, বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলার পরিবার সিপিআই সমর্থক। তিনি নিজে সিপিআইয়ের মহিলা সমিতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে পালাবদলের পর তাঁদের পরিবারকে দলে টানতে তৃণমূলের তরফে নানা ভাবে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছিল। ‘নির্যাতনের’ জেরেই তাঁর স্বামী দু’মাস হল ঘরদোর ছেড়ে কটকে রয়েছেন। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকতেন ওই মহিলা। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ১৪ এপ্রিল, বাংলা নববর্ষের দিন মহিলার বড় ছেলের সঙ্গে স্থানীয় ক্লাবের তৃণমূল সমর্থকদের গোলমাল বাধে। তার পর থেকে গ্রামছাড়া মহিলার বড় ছেলেও। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে ওই বধূর ছোট ছেলে জানিয়েছেন, গত রবিবার (১৫ তারিখ) সন্ধ্যায় গ্রামের মন্দিরে শাসকদলের স্থানীয় মাতব্বররা ‘সালিশি সভা’ ডাকে। জোর করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর মাকে। শুরু হয় ‘বিচার’।
হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বুধবার দুপুরে ওই মহিলা বলেন, “সালিশি সভায় তৃণমূলের মাতব্বরেরা বলে, আমরা বিরোধী দল করি বলে এলাকায় অশান্তি হচ্ছে। তাই তৃণমূলে যোগ দিতে হবে। ১ লক্ষ টাকা ‘জরিমানা’র ফতোয়াও দেয়। রাজি না হওয়ায় সকলের সামনেই বিবস্ত্র করে মারধর করা হয় আমাকে। সভায় উপস্থিত গ্রামের এক জনও ঘটনার প্রতিবাদ করেনি।” কোনও মতে বাড়ি ফিরে পর দিন ভোরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই বধূ। প্রতিবেশীরা তাঁকে উদ্ধার করে কাঁথি হাসপাতালে ভর্তি করান। আপাতত সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে। ১৭ এপ্রিল রাতে মারিশদা থানায় ২১ জনের বিরুদ্ধে মারধর, ভীতি প্রদর্শন, শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন মহিলার ছোট ছেলে। অভিযুক্তেরা সকলেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থক হিসেবে পরিচিত। বুধবার রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।
গ্রামের কেউ এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। ওই মহিলার ছোট ছেলে ও মেয়ের সঙ্গেও এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, সিপিআইয়ের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সত্যেন্দ্রনাথ পণ্ডা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “গ্রাম বাংলায় আগে কোনও দিন এমন ঘটনা ঘটেনি। এ রাজ্যের যে ঐতিহ্য ছিল, তা নষ্ট করে দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূল কর্মীরা। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।”
যদিও সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, “কানাইদিঘির ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগই নেই। ওই এলাকায় তৃণমূল এত দুর্বল হয়ে পড়েনি যে সিপিআইয়ের মহিলা সমিতির নেত্রীকে দলে আনতে চাইবে!”
তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “ঘটনার দু’দিন পরে দলের নির্দেশেই ওই মহিলা তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজিয়ে-গুছিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এলাকার বিধায়ক বনশ্রী মাইতিকে বলেছি ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করে তাঁর বক্তব্য জানতে।”
উত্তর কাঁথি কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বনশ্রীদেবী এ দিন বিকেলেই হাসপাতালে দেখা করেন ওই বধূর সঙ্গে। সেই সময় এই মামলার তদন্তকারী অফিসারও উপস্থিত ছিলেন। বিধায়কের দাবি, “ছেলেপুলেদের খেলাধুলো নিয়ে একটা পাড়াগত বিরোধ হয়েছিল। ওই মহিলা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, সালিশিতে ডেকে তাঁকে এমন কিছু কথা বলা হয়েছিল, যা সহ্য করতে না পেরেই উনি বিষ খান।” বনশ্রীদেবীর আরও দাবি, বিবস্ত্র করে মারধরের কোনও কথাই তাঁকে ওই মহিলা বলেননি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.