|
|
|
|
ছক্কাঘাতে আহত টিয়াকে ছক্কার মেডেল উপহার দিলেন গেইল |
সুমিত ঘোষ • বেঙ্গালুরু |
মাঠের মধ্যে তিনি নৃশংস, বোলারদের হত্যাকারী। পর পর পাঁচ ছক্কায় তরুণ স্পিনারের মেরুদন্ড ভেঙে দিচ্ছেন। কোনও দয়ামায়ার ব্যপারই নেই। মাঠের বাইরে সেই ক্রিস গেইল-ই সম্পূর্ণ অন্য রকম। সংহারকের ভূমিকা ছেড়ে ভীষণ নরম মনের এক মানুষ।
মঙ্গলবার রাতে বেঙ্গালুরু গেইলের দু’টো রুপই দেখল। প্রথমে মাঠের মধ্যে তাঁর ব্যাট হাতে ধ্বংসলীলা। আর তাঁর সেই ছক্কার বৃষ্টির মধ্যেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। প্যাভিলিয়নের দিককার তিন তলার স্ট্যান্ডে এসে পড়া গেইলের একটি ছক্কার আঘাতে মারাত্মক ভাবে আহত হয় টিয়া নামের এক কিশোরী। নাক ফেটে গলগল করে রক্ত পড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে ছুটতে হয়। গেইলের বাকি ব্যাটিং বা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর জয় আর দেখা হয়নি তার।
খবর পেয়ে রাতে ম্যাচের শেষেই টিয়াকে দেখতে ছোটেন গেইল। সঙ্গে ছিলেন সিদ্ধার্থ মাল্য। এগারো বছরের টিয়াকে যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সেটি টিম হোটেলের একদম গায়ে। টিয়াকে সেখানে জখম অবস্থায় দেখে খুব কাতর হয়ে পড়েন গেইল। মঙ্গলবারের ম্যাচে সবথেকে বেশি ছয় মারার পুরস্কার হিসেবে যে মেডেলটি তিনি পেয়েছিলেন সেটি দিয়ে দেন তাকে। ডাক্তারদের কাছে খোঁজ নেন, টিয়ার চোট সম্পর্কে। ডাক্তাররা বলেন, নাকের হাড় ভেঙে গিয়েছে। সকালে অস্ত্রোপচার করা হবে। |
গেইল এখন দর্শকদেরও ত্রাস। |
এ দিন হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, সকালে টিয়ার নাকে সফল ভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত সে। হয়তো দু’তিন দিনে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে চব্বিশ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কিন্তু আহত টিয়াকে নিয়ে গেইলের আরও অনেক উদ্যোগ থাকছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স কর্তাদের তিনি অনুরোধ করেছেন, তাঁদের পরের ম্যাচে যেন ছক্কার আঘাতে আহত মেয়েটিকে বিশেষ জায়গায় বসানোর ব্যবস্থা করানো হয়। আরসিবি কর্তারা গেইলকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য নির্দিষ্ট বক্সে তাকে বসাবেন। মানে যেখানে বিজয় মাল্য বা তাঁর অতিথিরা বসেন সেখানে।
গেইল পরের ম্যাচে টিয়াকে মাঠের মধ্যেও নিয়ে যেতে চান। আইপিএলের সম্প্রচারক চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে নিয়ে আসতে চান তাকে। ম্যাচের আগে বা পরে অনেক সময়ই দেখা যায় প্লেয়ারদের ইন্টারভিউ করছে সম্প্রচারক চ্যানেল। গেইল ঠিক করে রেখেছেন বেঙ্গালুরুতে পরের ইন্টারভিউটা দিতে যখন তাঁকে ডাকা হবে, সঙ্গে টিয়াকে নিয়ে যাবেন। ক্যারিবিয়ান ওপেনার টুইট করে জানিয়েছেন, টিয়াকে দেখে এসে অনেক ভাল লাগছে। অভিভূত ভাবে এমনও লিখেছেন যে, নাক ভেঙে হাসপাতালে শুয়ে থাকা অবস্থায় টিয়াই উল্টে তাঁকে অভয় দেন, চিন্তার কিছু নেই। সে ঠিক আছে! প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, যন্ত্রণার চেয়েও টিয়ার চোখেমুখে বেশি খুশির ছাপ ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স জেতায়।
সিদ্ধার্থ মাল্যও এ দিন টিয়ার এই সাহসিকতার কথা বলেছেন। “টিয়াকে ও রকম দুর্দান্ত স্পিরিটে দেখে আমাদের খুব ভাল লেগেছিল। ও এমনকী আমাদের জোক-ও শোনাল,” বলেন তিনি। গেইল যেমন ভেবেছেন তাকে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় মাঠে নিয়ে যাবেন তেমন মাল্য বলেছেন, প্রাক-ম্যাচ অনুষ্ঠানে তাঁরা টিয়াকে উপস্থিত রাখতে চান।
সব মিলিয়ে মঙ্গলবার ছিল বেঙ্গালুরুর নাটকীয় রাত। মাঠের মধ্যে নায়ক যদি হন ক্রিস গেইল, মাঠের বাইরের নায়কও তিনি! |
|
|
|
|
|