শৌচাগার নির্মাণের জন্য জমা রাখা নিজেদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন আরামবাগের মলয়পুর ১ পঞ্চায়েতের বাছানরী গ্রামের ১৬ জন বাসিন্দা। বছর দু’য়েক আগে ৫ হাজার করে মোট ৮০ হাজার টাকা তাঁরা জমা রেখেছিলেন পঞ্চায়েতে। এ নিয়ে সিপিএম পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের এক সদস্য এবং প্রধানের মধ্যে চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে। সদস্যের দাবি, তিনি গ্রামবাসীদের থেকে টাকা নিয়ে তা জমা দিয়েছিলেন পঞ্চায়েতে। প্রধানের দাবি, ওই সদস্য টাকা জমা দেননি।
শৌচাগার নির্মাণ করতে না পেরে গ্রামবাসীরা এখন আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁইয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। বিডিও বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আজ, মঙ্গলবার ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পঞ্চায়েতে গিয়ে বিষয়টির তদন্ত করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ওই পঞ্চায়েত সদস্যও প্রধান ও নির্বাহী সহায়কের বিরুদ্ধে ওই টাকা লোপাটের অভিযোগ তুলে বিডিও-র দ্বারস্থ হয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯-১০ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ওই পঞ্চায়েতের উপভোক্তাদের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়। ২০১০ সালের গোড়ায় উপভোক্তাদের তৎকালীন হিসেব মতো ৩৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। ‘নির্মল পঞ্চায়েত’-এর লক্ষ্যে শৌচাগার নির্মাণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ায় মলয়পুর-১ পঞ্চায়েত ওই প্রকল্পের উপভোক্তাদের ৫ হাজার টাকা করে জমা রাখে। সংশ্লিষ্ট সদস্যদের মাধ্যমেই টাকা জমা পড়ে পঞ্চায়েতে। এমন নিয়ম আরও অনেক পঞ্চায়েতেই রয়েছে। উপভোক্তারা শৌচাগার নির্মাণের সময়ে ওই টাকা ফেরত পান।
বাছানরী গ্রামের লক্ষ্মী সাঁতরা, শ্যামলী বাউরি, উজ্জ্বল বাগ প্রমুখের অভিযোগ, প্রকল্পের টাকা হাতে পাওয়ার পরেই তাঁরা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের লক্ষ্মণ বাগের কাছে ৫ হাজার টাকা করে জমা দেন শৌচাগার নির্মাণের জন্য। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, লক্ষ্মণবাবু তাঁদের জানিয়েছিলেন, টাকা পঞ্চায়েতে জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখন টাকা তুলতে গিয়ে তাঁরা পাচ্ছেন না।
লক্ষ্মণবাবুর দাবি, “প্রধানের নির্দেশে পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক সনাতন হাঁসদার কাছে টাকা জমা দিই। পাশেই ছিলেন তৎকালীন পঞ্চায়েত সচিব জহর ঘোষ। কিন্তু রসিদ পাইনি।” প্রধান এবং নির্বাহী সহায়ক বিশ্বাসঘাতকতা করে ওই টাকা লোপাট করে দিয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগ।
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধান সিপিএমের ইন্দ্রনাথ ধাড়া। তিনি বলেন, “যাঁদের টাকা প্রকৃতই জমা নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সকলকেই ফেরত দেওয়া হয়েছে।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “লক্ষ্মণবাবু কোনও টাকা জমাই দেননি। সেই টাকা পঞ্চায়েত কোথা থেকে দেবে?”
একই দাবি সনাতনবাবুরও। তৎকালীন পঞ্চায়েত সচিব জহর ঘোষ বদলি হয়ে এখন কর্মরত রয়েছেন গোঘাটের মান্দারণ পঞ্চায়েতে। জহরবাবু বলেন, “এক টাকা জমা পড়লেও রসিদ দেওয়া আমাদের নিয়ম। সেখানে ৮০ হাজার টাকা জমা দিয়ে কেউ রসিদ পাননি, এটা অসম্ভব।”
এই পরিস্থিতিতে ১৬ জন উপভোক্তা এখন তাকিয়ে ব্লক প্রশাসনের দিকে। আরামবাগের সিপিএম নেতা বিনয় দত্ত বলেন, “গোটা ঘটনার তদন্ত করে সত্য বের করুক প্রশাসন। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।” |