১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে গতি এসেছে হাওড়া জেলায়। ২০১১-২০১২ আর্থিক বছরে খরচ হয়েছে ৩৩ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। এই খরচ ২০১০-১১ আর্থিক বছরের থেকে অন্তত দেড় গুণ বেশি। ওই আর্থিক বছরে জেলায় প্রকল্পটিতে খরচ হয়েছিল ১৯ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা। সাঁকরাইল বাদ দিলে জেলার বাকি ১৩টি ব্লকের প্রতিটিতে ২০১০-১১ আর্থিক বছরের তুলনায় ২০১১-১২ আর্থিক বছরে অনেকটা বেশি কাজ হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে তেমন গতি ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে এসে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে শোচনীয় হাল দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রশাসনকে তিনি আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার পর থেকে বিডিওরাও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। জেলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের এই বাড়তি গতি মুখ্যমন্ত্রীর সফরের ‘পরোক্ষ ফল’ বলে ধারণা জেলা প্রশাসনের একাংশের।
২০১১-১২ আর্থিক বছরে খরচের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ কোটি টাকা। পাওয়া গিয়েছিল ৪০ কোটি টাকা। প্রাপ্য টাকার ৮৮ শতাংশ খরচ হয়েছে। এর আগের বছরে ৮১ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সাফল্যের এই হার দেখে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ৫০ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা প্রতিটি ব্লকে বৈঠক করছি।”
শ্রমদিবস সৃষ্টির ক্ষেত্রেও ২০১১-১২ আর্থিক বছর অনেকটা এগিয়ে রয়েছে আগের বছরের তুলনায়। এ বার জেলায় কাজ হয়েছে গড়ে ২১ দিন। আগের বছরে এই হার ছিল ১৬ দিন। ২০১১-১২ আর্থিক বছরে মহিলারা অংশগ্রহণ করেছেন ২২ শতাংশ হারে। এর আগের বার এই হার ছিল ১৯ শতাংশ। |
গ্রাম পঞ্চায়েতের হিসাবে জেলায় এগিয়ে রয়েছে শ্যামপুর ২ ব্লকের নাকোল। ২০১১-১২ সালে তারা কাজ করেছে ১ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকার। এই ব্লকেরই খাড়ুবেড়িয়া পঞ্চায়েত ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার কাজ করেছে। নাকোল পঞ্চায়েতের প্রধান সদানন্দ দাস বলেন, “আমার পঞ্চায়েত এলাকায় ১৭টি সংসদের প্রতিটিতে একই সঙ্গে কাজ হয়েছে। একই সঙ্গে কাজ চলায় টাকা পেতে অসুবিধা হয়নি।” সদানন্দবাবুর দাবি, “২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ৩ কোটি টাকার কাজ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি।”
ব্লকওয়ারি হিসাবে এগিয়ে রয়েছে শ্যামপুর ২ ব্লক। তারা কাজ করেছে ৬ কোটি টাকা ১৯ লক্ষ টাকার। শ্যামপুর ১ ব্লক কাজ করেছে ৪ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকার। আমতা ২ ব্লক ৩ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার কাজ করেছে। খারাপ অবস্থায় রয়েছে সাঁকরাইল। এখানে কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকার।
প্রকল্পটির জেলা পর্যায়ের ‘মনিটর’ ফটিক চক্রবর্তী বলেন, “১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে গ্রামবাসীদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। তাঁরা আরও বেশি করে প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন।” অন্য দিকে, জেলা প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনের বেশি দেরি নেই। অনেক গ্রাম পঞ্চটায়েতেই প্রধানেরা প্রকল্পটি হাতে নিয়ে জনগণের কাছে যেতে চাইছেন। এক সময়ে এই প্রকল্পে টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা ছিল। ফলে কাজে গতি ছিল না। পঞ্চায়েতগুলির কাছ থেকে এই অসুবিধার কথা জানতে পেরে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও ‘উদার মনোভাব’ দেখাচ্ছে জেলা প্রশাসন। বিশেষ করে ডিসেম্বর মাস থেকে দেদার টাকা দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েতগুলিকে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) অশোক দাস বলেন, “এমনও হয়েছে কেন্দ্র থেকে সময় মতো টাকা আসেনি। আমরা জেলা পরিষদ থেকে পঞ্চায়েতগুলিকে ঋণ দিয়েছি। ফলে কাজের গতি থমকে যায়নি।”
তবে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে গড় কাজের দিন ৫০ করতে হবে বলে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা থেকে এখনও অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে এই জেলা। এমনকী মহিলাদের অংশগ্রহণ করার কথা ছিল ৩৫ শতাংশ। সেই লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, হাওড়া মূলত শিল্পকেন্দ্রীক জেলা। ফলে সব ব্লকে সমান ভাবে প্রকল্পটিতে কাজের সুযোগ নেই। মূলত কৃষিভিত্তিক ব্লকগুলির অনেক পঞ্চায়েতেই ৫০ দিনের বেশি কাজ হয়েছে। উল্টো দিকে, শহর-ঘেঁষা ব্লকগুলিতে সেই হারে কাজ না-হওয়ায় জেলায় কাজের দিনের গড় প্রত্যাশিত মানে পৌঁছায়নি। সেচ দফতর, বন দফতর, উদ্যান বিষয়ক দফতরগুলিকে বলা সত্ত্বেও তারা প্রকল্পটিতে এখনও সে ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সব মিলিয়ে তারা মাত্র লাখ দশেক টাকা খরচ করতে পেরেছে এই প্রকল্পে। |