|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
বিন্দুতে লোকসভা |
দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের দখল এখনও দূরেই রহিয়া গেল। এই নির্বাচনে বিজেপির সাফল্য অবশ্য কংগ্রেসকে তত আশ্চর্য করে নাই, যতটা করিয়াছে খোদ বিজেপি নেতৃত্বকে। কারণ পাঁচ বছর আগে ভোটে জয়ী হইয়া পুরসভার দখল লইলেও পুর-গাফিলতি, অবহেলা ও অপদার্থতার অভিযোগে জর্জরিত দলীয় নেতৃত্ব ধরিয়াই লইয়াছিলেন, এ বার আর ক্ষমতা ধরিয়া রাখা যাইবে না। তদুপরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত দিল্লি পুরসভাকে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব এই তিনটি স্বতন্ত্র মিউনিসিপালিটিতে বিভক্ত করিয়া দেওয়ায় সাফল্যের সম্ভাবনা আরও হ্রাস পায়। শ্রীমতী দীক্ষিত রাজধানী শহরের উপর বিজেপির নিয়ন্ত্রণ আলগা করিতেই এই বিভাজন ঘটান। কিন্তু তাহাতে বিজেপির শাপে বর হইয়াছে। আগের পুর-নির্বাচনের তুলনায় জেতা আসনের সংখ্যা আঠাশটি কমিয়া গেলেও রাজধানীর তিনটি পুরসভাতেই দল ক্ষমতা ধরিয়া রাখিতে সমর্থ। যেখানে বিজেপি স্পষ্ট গরিষ্ঠতা পায় নাই, সেখানেও নির্দল পুরপিতাদের সমর্থনে বোর্ড গঠনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
অস্যার্থ, দিল্লির তিন পুরসভার নির্বাচনে কংগ্রেস আবারও ধরাশায়ী। রাজ্যের শাসক কিংবা পুরসভার বিরোধী পক্ষ হওয়ার কোনও সুবিধাই তাহাতে বর্তায় নাই। এমনকী কংগ্রেস নেত্রী শীলা দীক্ষিতের এই রাজধানী প্রদেশে প্রায় ১৪ বছর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সুবিধাও কংগ্রেসের পালে কোনও অনুকূল হাওয়া জোগায় নাই। স্বভাবতই, পুরসভার মতো স্থানীয় স্বশাসনের সংস্থার নির্বাচন হইলেও বিজেপি ইহাকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গণভোটের রায় রূপে চিত্রিত করিতেছে। আগামী বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বাভাস রূপেও ইহাকে দেখাইবার চেষ্টা হইতেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি এ ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়িয়া দেওয়া রাজনীতিতে দস্তুর। তবে শীলা দীক্ষিতের সরকার যে দিল্লির জন্য প্রভূত উন্নয়ন কর্মসূচি রূপায়ণ করিয়াও দলীয় পুরপিতাদের অনুকূলে জনমত তৈয়ার করিতে পারেন নাই, তাহা স্পষ্ট। তিনি নিজে অবশ্য এই নির্বাচনকে ‘স্থানীয়’ আখ্যা দিয়া গুরুত্ব আরোপ করিতে অস্বীকার করিয়াছেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও এই নির্বাচনের ফলাফলে বৃহত্তর কোনও রাজনৈতিক বার্তা বা সঙ্কেত অন্বেষণ করিতে চাহেন নাই।
হয়তো তাঁহাদের অবস্থানই সঠিক। কিন্তু কিছু দিন আগে বৃহন্মুম্বাইয়ের পুর নির্বাচনেও কংগ্রেস-এনসিপি জোট বিজেপি-শিব সেনা জোটের কাছে পরাস্ত হইয়াছে। তাহার আগে বেঙ্গালুরুর পুর নির্বাচনেও দলের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। এই সব ভোটে নাগরিক মধ্য শ্রেণির ক্ষোভ বা ক্রোধের কোনও সংগঠিত প্রকাশ আছে কি না, কংগ্রেস নেতৃত্ব তাহা ভাবিয়া দেখিতে পারেন। দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারি, পেট্রোপণ্য সহ অত্যাবশ্যক পণ্যসামগ্রীর দরবৃদ্ধি এই শ্রেণিকে যে ইউপিএ সরকারের প্রতি উত্তরোত্তর হতাশ, বিরূপ ও ক্ষুব্ধ করিতেছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। দেশের নাগরিক কেন্দ্রগুলিতে যদি এই প্রবণতাই জনাদেশের মধ্যে ফুটিয়া উঠে, তবে ভবিষ্যতে তাহার পরিণাম দলের পক্ষে শুভ হইতে পারে না। বস্তুত, রাজধানীর তিন-তিনটি পুরসভার নির্বাচনে বিপর্যয়ের ঘটনাটিকেও যেমন ফুৎকারে উড়াইয়া দেওয়ার প্রয়াস, তাহাও জনাদেশকে গুরুত্বহীন গণ্য করার বিপজ্জনক প্রবণতা রূপে শনাক্ত হইতে পারে। কারণ নির্বাচন পুরসভার হইলেও তাহাতে সর্বদা যে কেবল স্থানীয় পুর-বিষয়গুলিই বিবেচিত, বিতর্কিত হইবে, এমন কথা নাই। জাতীয় রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষিত ও গুরুতর সমসাময়িক বিষয়ও প্রায়শ স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থার নির্বাচনে প্রাধান্য পাইতে পারে। অভিপ্রেত না হইলেও তেমন ঘটনা অতীতে ঘটিয়াছে। তাই দিল্লির পুর-নির্বাচন হইতে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগ্রহণ জরুরি। অন্তত জনসাধারণ ইউপিএ বা কংগ্রেস সম্পর্কে কী ভাবিতেছে, তাহার সঙ্কেতগুলি উপেক্ষা করিলে ভবিষ্যতে নিজেদেরই পস্তাইবার সম্ভাবনা। |
|
|
|
|
|