সম্পাদকীয় ১...
ঘৃণার পাঁচালি
ত্সর-পূর্তির হিসাবনিকাশ শুরু হইয়াছে। কিছু হিসাব রাজ্য সরকার দিতেছে, কিছু হিসাব রাজ্যবাসী নিজেরাই কষিয়া লইতেছেন। এবং হতবাক হইয়া দেখিতেছেন, কোথা হইতে শুরু করিয়া কোথায় গিয়া ঠেকিল পশ্চিমবঙ্গের সুবিজ্ঞাপিত বহুচর্চিত সেই ‘পরিবর্তন’। বৈশাখ আবারও দ্বারপ্রান্তে, বৎসরারম্ভের প্রবল নিদাঘ তাঁহাদের মনে করাইয়া দিতেছে, ঠিক এক বৎসর আগে এক নূতন সম্ভাবনার আশায় কেমন উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিয়াছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশ, যখন নূতন মুখ্যমন্ত্রী সাড়ে তিন দশকের বামফ্রন্ট সরকারকে সবলে উপড়াইয়া ফেলিয়াও মার্জিত নমস্কারের ভঙ্গিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বামফ্রন্টের অন্যান্য শীর্ষনেতাদের সম্মুখে গিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। জোর গলায় বলিয়াছিলেন, তিনি সৌহাদ্যের্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করিতে চাহেন, বিরোধীদের গণতন্ত্রের প্রাপ্য সম্মানে ভূষিত করিতে চাহেন। মনে হইয়াছিল, ইহা বাস্তবিকই এক নূতন আরম্ভ। বামফ্রন্ট মুখ্যমন্ত্রীরাও কখনও সচেতন ভাবে বিরোধীদের প্রতি এতখানি সৌহার্দ্য প্রদর্শন করেন নাই, গত বৈশাখে যেমনটি দেখা গিয়াছিল। কিন্তু বড় দ্রুত বিগত হইল সেই সব দিন। বড় দ্রুত সরিয়া গেল সৌহার্দ্যের আলগা আস্তরণ, বাহির হইয়া পড়িল রাজনীতির অতিপরিচিত হিংস্র নখদন্ত। কেবল কাজেকর্মে ভাবেভঙ্গিতে নহে, সোজাসুজি ঘোষণা ও বক্তব্য দ্বারা প্রচারিত হইতে শুরু করিল ঘৃণার পাঁচালি। চৈত্রের মধ্যগগনে শোনা গেল তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রীদের বার্তা, দিকে দিকে ছড়াইয়া দিতে হইবে প্রবল সি পি এম-ঘৃণার মন্ত্র, সামাজিক ভাবেও যেন কোনও সি পি এম-এর সহিত যোগাযোগ না রাখা হয়, সাধারণ জনসংযোগের সময়ও যেন তৃণমূল কর্মী ও নেতারা সি পি এম-কে কোনও মতে কাছে ঘেঁষিতে না দেন, এই সব সতর্কবাণী। পরিবর্তন ও সংস্কারের সমস্ত আশা নিষ্পেষিত করিয়া ক্ষমতাসীন দলের যে চেহারা ইহার মধ্য দিয়া স্পষ্ট হইল, তাহা এক কথায়, কদর্য।
এই হিংস্র নখদন্ত, এই হিংসার বাতাবরণ, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির কাছে অপরিচিত নহে। বিগত বাম জমানাতেও সুদীর্ঘ কাল এই হিংসার রাজনীতি অনুষ্ঠিত হইয়াছে, শ্রেণিশত্রুর প্রতি পবিত্র ‘ঘৃণা’ পোষণের নির্দেশ মিলিয়াছে। কিন্তু দলের সমস্ত কর্মী-সমর্থকদের প্রতি বিরোধী-বয়কটের এমন ঢালাও এবং প্রকাশ্য নির্দেশ অভূতপূর্ব। সাম্প্রতিক সংবাদপত্র-বিষয়ক বিতর্ক ও কাটুন-রঙ্গ, সব মিলাইয়া রাজ্য প্রশাসন ও শাসক দলের যে তীব্র অসহনশীলতার যুগ্ম ছবি প্রকট হইয়া উঠিতেছে, তাহা সমগ্র রাজ্যের পক্ষে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যপূর্ণ।
মুখ্যমন্ত্রীর কর্তব্য, কালক্ষেপ না করিয়া এ বিষয়ে দৃক্পাত করা, এবং নিজেরই প্রদর্শিত পথে নিজের দল ও সরকারকে ফিরাইয়া আনা। পশ্চিমবঙ্গবাসী অন্যায়, অনাচার, হিংসার শ্বাসরোধকারী পরিবেশে বাস করিতে করিতে বিপর্যস্ত। সেই বিপর্যয়টি যথার্থ ভাবে উপলব্ধি করিয়া যদি মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার সরকার চালনা করিতে পারেন, একমাত্র তাহা হইলেই তাঁহার সেই বহু-বিজ্ঞাপিত প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিবার কিছু সম্ভাবনা। যথেষ্ট বিলম্ব হইয়াছে, আর নহে। রাজ্যের উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বপ্ন রাজ্যবাসী দেখিতে দেখিতে ক্লান্ত, ভুল ভাঙিতে ভাঙিতে তাঁহারা ক্রমশই হতাশ্বাস, অপশাসনের ধারা সহ্য করিতে করিতে তাঁহারা বিধ্বস্ত। তাঁহারা জানেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতি বলিয়া যদি কিছু থাকে, তাহার একেবারে প্রাথমিক ও মুখ্য পদক্ষেপ শৃঙ্খলা ও সহনশীলতার বাতাবরণ। বাকি সব হিসাব পরে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.