কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-টেক পাঠ্যক্রমগুলির মেয়াদ তিন বছর। অথচ যে সংস্থার নির্দেশিকা মেনে দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পঠনপাঠন চলে, সেই অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই) চাইছে সব প্রযুক্তি পাঠ্যক্রমেরই মেয়াদ হোক চার বছর। রাজ্য সরকার নিযুক্ত উচ্চশিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটিও তা-ই চায়। চাকরির বাজারেও চার বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠ্যক্রমেরই চাহিদা। ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কেও তাদের বি-টেক পাঠ্যক্রমগুলির মেয়াদ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ পাঠ্যক্রমের মেয়াদ বাড়াতে রাজি থাকলেও আপত্তি উঠছে ছাত্র ও শিক্ষকদের একাংশ থেকে।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার স্নাতকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার ক্যাম্পাসে কারিগরি ও প্রযুক্তির মোট ন’টি পাঠ্যক্রম পড়ার সুযোগ পান। ভর্তি নেওয়া হয় মূলত স্নাতক স্তরে পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে। ছাত্র-শিক্ষকদের একটা অংশের বক্তব্য, অন্যান্য বি-টেক পাঠ্যক্রমের মতো মেয়াদ চার বছর করে দিয়ে ভর্তির ব্যবস্থাও যদি জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মাধ্যমে করা হয় তবে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা সমস্যায় পড়বেন। তা ছাড়া, প্রভাব পড়বে গবেষণাতেও। কারণ, স্নাতক স্তর ও বি টেক মিলিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মোট (৩+৩) ৬ বছর পড়াশোনা করতে হয়। আর জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মাধ্যমে ভর্তি হয়ে বি টেক করতে লাগবে ৪ বছর। অর্থাৎ দু’বছর বেঁচে যাবে ছাত্রদের।
কিন্তু ভাল প্রযুক্তি-গবেষণার ক্ষেত্রে স্নাতক স্তরে পড়ে আসার একটা ‘ইতিবাচক প্রভাব’ আশা করা যায়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সে সম্ভাবনা থাকবে না। এতে ভাল গবেষণার সংখ্যা ও মান কমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাঠ্যক্রমের মেয়াদ চার বছর করে দেওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি বিভাগ ইতিমধ্যেই সম্মতি দিয়েছে। কিন্তু বাকিরা, এই নতুন পদ্ধতিকে সমর্থন করছেন না। তাঁদের মতে, এই পরিবর্তন হলে প্রযুক্তি-গবেষণার মান পড়ে যেতে পারে।”
যদিও রাজ্যের উচ্চশিক্ষা কমিটি পাঠ্যক্রমের মেয়াদ চার বছর করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তি করারই সুপারিশ করেছে তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। তবে স্নাতক স্তরের ছাত্ররাও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেই দিকটি বিবেচনা করে তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে। কী সেই ব্যবস্থা?
তা হল, পাঠ্যক্রম চার বছরের হলেও বিজ্ঞানের স্নাতকদের সেটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। কোনও কোনও শিক্ষকও এর সঙ্গে একমত। যেমন, কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সঞ্জীব কুমার সেতুয়া বলেন, “পাঠ্যক্রম চার বছরের করে দেওয়া হলেও কিছু আসন বিজ্ঞানের স্নাতকদের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা যেতে পারে। যাতে তাঁরা একটি প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হতে পারেন।”
ভর্তি নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও পাঠ্যক্রমের মেয়াদ ৪ বছর করার প্রশ্নে এআইসিটিই-র স্পষ্ট যুক্তি হল, দেশে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সব পাঠ্যক্রমকে একই কাঠামোয় রাখা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও মানছেন, দুই রকম মেয়াদের কারণে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন ছাত্ররা। কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন (কুটা)-এর সাধারণ সম্পাদক সাংখ্যায়ন চৌধুরীর কথায়, “চাকরি দেওয়ার সময় ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রছাত্রীদের ৪ বছরের মোট ৮টি সেমেস্টারের নম্বর দেখা হয়। সেখানে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা ৩ বছরে ৬টা সেমেস্টারের ফলাফল দেখাতে পারে। তাই তাদের অনেক সময় চাকরি পেতে সমস্যা হয়।” তবে একই সঙ্গে তাঁর মত, স্নাতক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখেই আনতে হবে পরিবর্তন।
পাঠ্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিষয়টি বিবেচনাধীন।” |