সেচ দফতরের জমি দখল করে প্লট হিসেবে বিক্রি করার অভিযোগ উঠল খাস কলকাতায়। পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে। সেচ দফতর সূত্রের খবর, দখল করা ওই জায়গায় রয়েছে রাজ্যের শাসকদলের পার্টি অফিসও।
সেচ দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “এলাকার জনা কয়েক দুষ্কৃতী পাঁচিল দিয়ে প্রায় এক একর (৬০ কাঠা) জায়গা ঘিরে ফেলেছে। এখন যার বাজারদর কাঠা প্রতি ১০-১২ লক্ষ টাকা। দিন কয়েক আগে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু দখল করা ওই জায়গায় তৃণমূলের অফিস থাকায় প্রশাসনের কর্তারাও থমকে যান।” তাঁর অভিযোগ, সেচ দফতরের পক্ষে আমিনেরা জমি চিহ্নিতকরণের কাজ করতে গেলে তাঁদের ‘প্রাণে মেরে ফেলার’ হুমকি দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজ্য জুড়েই সেচ দফতরের পড়ে থাকা জমিতে জবরদখলকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এ বিষয়টি সরকারি অফিসারেরা জানেন না, এমনও নয়। জানেন খোদ সেচমন্ত্রীও। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টালির ঘর বানিয়ে আছেন দখলদারেরা। কিন্তু ই এম বাইপাসের পাশে টালিগঞ্জ-পঞ্চান্নগ্রাম (টি পি) খালের ধারে আনন্দপুর সেতুর কাছে লাইন ধরে ইটের পাঁচিল বানানো হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “মাস কয়েক আগে থেকে খাল ও বাড়িগুলির মাঝের জায়গা কংক্রিটের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা শুরু হয়। ঘেরা ওই জায়গা প্লট করে বিক্রি করা হচ্ছে।” এর পিছনে কারা, জানাতে চাননি ওই বাসিন্দারা। |
স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে মাসখানেক আগে ঘটনাস্থলে যান পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারেরা। তখনই তাঁদের নজরে পড়ে ঘেরা জায়গাটিতে রয়েছে তৃণমূলের একটি অফিস। অস্থায়ী কাঠামোয় থাকা তৃণমূলের অফিসটি বাড়ানো হচ্ছে কংক্রিটের পাঁচিল দিয়ে। তার পরেই সেচ দফতর বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেয় তিলজলা থানায়। জানানো হয় ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ রায়চৌধুরীকেও। পার্থবাবু বলেন, “পাঁচিল দেওয়ার ঘটনাটি ঠিক। সরকারের জমি বেআইনি ভাবে ঘেরার চেষ্টা হয়েছে। বিষয়টি আমি মুখ্যমন্ত্রীকেও লিখিত ভাবে জানিয়েছি। পুলিশকেও বলা হয়েছে।”
দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “জলপ্রবাহের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে খালের দু’দিকে জায়গা ছেড়ে রাখাই নিয়ম। কোনও কারণে খালের পরিধি বাড়াতে হলে ওই জায়গা কাজে লাগে।” তিনি জানান, বর্ষায় জল জমে থাকায় সমস্যা বাড়ে। সে কারণে ওই খালের পরিধি বাড়ানো দরকার। কিন্তু পাশে ছেড়ে রাখা জমি বেদখল হওয়ায় খাল বাড়ানোর কাজ করা যাচ্ছে না।
প্রশাসনিক ভাবে বিষয়টি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অধীন। জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “পাঁচিল তুলে দখল করার কথা জেনেছি। সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলেছি কলকাতা পুলিশের সাহায্য নিয়ে অবৈধ দখলদারি ভেঙে দিন।”
সম্প্রতি বিভাগীয় সচিবের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। গত ২০ মার্চ পুলিশকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান সেচ দফতরের কর্মীরা। দখল করা জায়গা বাঁশ দিয়ে বেড়ি করা হয়। পাঁচিলের গায়ে লিখে দেওয়া হয় ‘এ সব সেচ দফতরের জায়গা’। যদিও তার পরদিনই বাঁশের ওই বেড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে সেচ কর্মীদেরও। তাঁরা এখন ওই জায়গায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। অভিযোগ, তৃণমূলের অফিস থাকায় পুলিশও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে
যদিও স্থানীয় কাউন্সিলর পার্থবাবু বলেন, “আমি কোনও দিন ওই অফিসে বসিনি। ওটা দখল করা জমির উপরে কি না, দেখতে হবে।” তাঁর বক্তব্য, “এলাকাটি বিশাল। কখন, কোথায়, কে কী করছে, তা সব সময়ে জানা যায় না।” যদিও তিনি জানান, সেচ দফতরের জমি দখল করে কাউকে বসতে দেওয়া হবে না। ওই পাঁচিলও ভেঙে ফেলা হবে।
কিন্তু বাস্তবে সেই কাজ করা রীতিমতো কঠিন বলে জানালেন সেচ দফতরের কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, “ভেঙে দিন, বসতে দেওয়া হবে না এমন কথা বলা হলেও ভাঙার কাজে কারও সাহায্য মিলছে না। উল্টে দখলদারেরা শাসাচ্ছে আমাদের।” |