বাকি জীবনটা হোমেই থাকব, বললেন দম্পতি
ছেলেদের কাছে আর ফিরতে চাই না।
কালনা হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর থেকে এই কথাটাই বার বার বলছিলেন দু’জনে।
তাঁদের ইচ্ছেটাই থাকল।
বুধবার দুর্গাপুরের দুর্গাপুরের প্রমোদনগর এলাকার কুরুলিয়াডাঙার বাসিন্দা অনঙ্গ সরকার ও বেলা সরকারকে পাঠানো হল আসানসোলের একটি বেসরকারি হোমে। এ দিন বিকেলে গাড়ি ভাড়া করে তাঁদের সেখানে পাঠাল কালনা থানার পুলিশ। যাওয়ার আগে ওসি অমিতকুমার মিত্র তাঁদের হাতে তুলে দিলেন কিছু ফল আর নগদ দেড় হাজার টাকা।
আসানসোলের হোমে ঢোকার মুখে অনঙ্গ সরকার ও বেলা সরকার।
পাঁচ ছেলের কেউ দেখে না। তাই তীর্থস্থানে গিয়ে জীবন শেষ করার জন্য রবিবার বাড়ি ছেড়েছিলেন দুই বুড়ো-বুড়ি। বৃন্দাবনে যাওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে হকচকিয়ে যাওয়ায় তা আর হয়ে ওঠেনি। বেনাচিতি-কালনা রুটে বাস চালানোর সুবাদে কালনার পুরোনো মন্দির সম্পর্কে জানতেন অনঙ্গবাবুর। তাই কালনার ভাগীয়রথীতে ডুবে মরতে রওনা দেন তাঁরা।
সোমবার বিকেলে কালনার মহিষমর্দিনীতলা ঘাটে দু’জনকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করেন বাসিন্দারা। খবর যায় ছেলে অচিন্ত্যর কাছেও। তিনি মঙ্গলবার হাসপাতালে গেলেও তাঁর সঙ্গে ফিরে যেতে রাজি হননি দম্পতি। বলেছিলেন, আলাদা বাড়ি ভাড়া না করে দিলে আর ফিরবেন না তাঁরা।
বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান দু’জনে। হাসপাতালে পৌঁছন অচিন্ত্য ও বেলাদেবীর ভাই শৈলেন দত্ত। অচিন্ত্যবাবুর কথায়, “মামাকে দিয়ে বার বার মা-বাবাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য বলি।” কিন্তু ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে বৃদ্ধ দম্পতি, অচিন্ত্য ও শৈলেনকে কালনা থানায় ডেকে পাঠানো হয়। পুলিশের কাছে অচিন্ত্য বাবা-মাকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে ভাড়া বাড়িতেই রাখবেন বলে জানালে তাঁকে মুচলেকা দিতে বলা হয়।
ইতিমধ্যেই আসানসোলের ওই হোম থেকে ফোন যায় কালনা থানায়। তারা জানায়, কোনও টাকা পয়সা ছাড়াই তারা ওই দম্পতিকে রাখতে চায়। বুড়ো-বুড়িকে জিজ্ঞাসা করা হলে এক কথায় রাজি হয়ে যান তাঁরাও। বেলাদেবীর কথায়, “ওখানে দু’মুঠো ভাতের তো অভাব হবে না। তা হলেই মনের সুখে বাকি জীবনটা ধর্মাচারণ করতে পারব।”
অচিন্ত্যবাবুর তেমন আপত্তি না থাকলেও এ ব্যাপারে অবশ্য বিশেষ মত ছিল না দম্পতির সেজো ছেলে সুভাষের। থানায় বলে অচিন্ত্য বলেন, “সেজো দাদা সুভাষের বাবা-মাকে হোমে রাখার ব্যাপারে মত নেই।” শুনেই কালনা থানার এক এসআই ফোন করেন সুভাষবাবুকে। জানিয়ে দেন, মা-বাবাকে যদি ভাল রাখার নিশ্চয়তা কোনও দিন যদি দিতে পারেন, তা হলে যেন তাঁরা হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
কালনা থানায়
টানা-পোড়েনেই কেটে যায় কয়েক ঘন্টা। এর পরে বৃদ্ধাশ্রমে রওনা দেন দম্পতি। বাকি ছেলেদের কেউই না থাকলেও সঙ্গে ছিলেন অচিন্ত্য। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছন তাঁরা।
হোমে বসে অচিন্ত্য বলেন, “এক বছর ধরে বেকার। না হলে আমিই বাবা-মাকে রাখতাম। ভাই দাদাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কেউই রাখতে চায়নি।”
ওই বেসরকারি সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা মধুসূদন বিশ্বাস (এখন অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, “সারা বছরই আমরা এ ধরনের নানা জনকল্যাণমূলক কাজ করে থাকি। চেষ্টা করব ওঁদের ভাল রাখার।” তিনি জানান, ওই দম্পতির জন্য মাসিক ৪ হাজার টাকা আর্থিক অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্রজমোহন রুদ্র নামে এক ব্যবসায়ী।
হোমে গিয়ে যেন এক নতুন জীবন পেয়েছেন অঙ্গনবাবু আর বেলাদেবীও।
সিঙ্গারা খেতে খেতে দু’জনেই বলেন, “এখানেই থাকব আমরা। ছেলেদের কাছে ফিরব না। ভবিষ্যতে অশান্তি হলে ওরা আবার আমাদের কষ্ট দেবে। বুড়ো বয়সে আর সইতে পারব না!”
নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.