দিনের আলোয় দুষ্কৃতীর গুলি, খুন পোস্টমাস্টার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হলেন এক ডাককর্মী। আসানসোল উত্তর থানার পড়িরা গ্রাম সংলগ্ন রাস্তায় বুধবার সকাল সাড়ে দশটার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম সুশীল যাদব (২৮)। বাড়ি আসানসোল রামকৃষ্ণ ডাঙাল
|
সুশীল যাদব |
এলাকায়। শহরে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে বেশ কিছুক্ষণ ধাদকা রোড অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে আসানসোলের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ উঠে যায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ব্যক্তিগত কারণে পুরনো বিবাদের জেরেই এই খুন।
প্রতি দিনের মতোই বুধবারও ধাদকা রোড ধরে সুশীলবাবু স্কুটারে চেপে নিজের কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। কর্মসূত্রে তিনি বারাবনি থানার কেলেজোড়া ডাকঘরের পোস্টমাস্টার। এলাকার বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, পড়িরা প্রাথমিক স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দু’টি মোটরবাইকে চেপে চার দুষ্কৃতী প্রথমে তাঁর স্কুটার আটকায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুষ্কৃতীরা তাঁর গাড়িতে লাথি মেরে তাঁকে রাস্তায় ফেলে দেয়। ওই অবস্থাতেই তাঁর মাথায় পরপর গুলি করে। |
মুহূর্তের মধ্যে ‘কাজ সেরে’ দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে চেপে দ্রুত পালিয়ে যায়। সুশীলবাবুর রক্তাক্ত দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকে। যে প্রাথমিক স্কুলের সামনে এই ঘটনা ঘটে, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস শোভাকর সেই সময় স্কুলেই ছিলেন। তিনি বলেন, “গুলির শব্দ শুনে বেরিয়ে এসে দেখি, রক্তাক্ত দেহটা রাস্তায় পড়ে আছে। ছাত্রদের বাড়ি যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল। আমি ওদের ক্লাসঘরেই আটকে রাখলাম। পুলিশ আসার পরে ছুটি দিয়েছি।”
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই এলাকার প্রায় কয়েকশো বাসিন্দা জড়ো হয়ে যান। তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পৌঁছে যায় ওই ডাককর্মীর কর্মস্থল কেলেজোড়া গ্রামে। সেখান থেকে বেশ কিছু যুব তৃণমূল কর্মী ঘটনাস্থলে চলে আসেন।
ব্লক যুব তৃণমূলের নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ওই সংগঠনের কর্মীরা দাবি তোলেন, দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সংগঠনের অভিযোগ, রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুলিশ তোলা আদায় করে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ একেবারেই নিষ্ক্রিয়। তাঁদের আরও অভিযোগ, এ দিন যেখানে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে তার মাত্র ১০ মিটার দূরেই একটি পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। |
দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়ে হাওয়ার বেগে মোটরবাইক নিয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই পালিয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাদের তাড়া করেনি। পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
উত্তেজনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় ঘটনাস্থলে যান আসানসোলের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। তিনি বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করলে উত্তেজনা প্রশমিত হয়। ভাস্করবাবু বলেন, “আমরা তদন্ত শুরু করেছি। সম্ভাব্য সব দিক ভাল ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে।” ঘটনার পরে আসানসোলের রামকৃষ্ণ ডাঙালে ওই ব্যক্তির বাড়িতে ভিড় জমান প্রতিবেশীরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের বাবা শিউজি যাদব। তিনি জানিয়েছেন, এলাকায় কারও সঙ্গে তাঁর ছেলের মনোমালিন্য হয়নি। তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে যে এ ভাবে কেউ খুন করতে পারে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি।” মৃতের মা সুমিত্রাদেবী ঘনঘন সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। প্রতিবেশীরা তাঁকে সামলানোর চেষ্টা করেছেন। আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ সুশীলবাবুর বাড়িতে যায়। তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে। |