অতিথি, আত্মীয়স্বজনের ভিড়ে গমগম করছে বিয়েবাড়ি। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য খাবারদাবারের আয়োজনও সম্পূর্ণ। দূর থেকে একাধিক গাড়ির আলো দেখে বিয়েবাড়ি জুড়ে হইচই, বরযাত্রী আসছে। কিন্তু কোথায় বরযাত্রী! গাড়ি থেকে একে একে নামলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, বিডিও, পুলিশ। নিমেষে বদলে গেল উৎসব বাড়ির ছবিটা।
প্রশাসন ও পুলিশের তৎপরতায় বন্ধ হয়ে গেল নবম শ্রেণির পড়ুয়া নাবালিকার বিয়ে। মালদহের চাঁচলের পশ্চিম ভগবতীপুরে সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। পরিস্থিতি আঁচ করে বিয়েবাড়ির দিকে না-এসে মাঝপথ থেকেই ফিরে যান বরযাত্রীরা। চাঁচল মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অরুণ ঘোষ বলেন, “নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার খবর পেয়েই এলাকায় যাই। বিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রীটির বাবা-মা বিষয়টি জানতেন না বলে তাঁরা দাবি করেছেন। ওই মর্মে তাঁরা মুচলেকা দেওয়ায় আইনানুগ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” |
পেশায় ক্ষুদ্র কৃষক শেখ খাবিরুদ্দিনের ৪ ছেলে ও এক মেয়ে। দ্বিতীয় সন্তান, মেয়ে রাজিয়া খাতুন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী। চাঁচলেরই কৃষ্ণাপুর গ্রামের মোশারফ হোসেনের বড় ছেলে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়। সাদ্দাম দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করে। সাদ্দামেরও ২১ বছর বয়স হয়নি। সোমবার ছিল বিয়ের দিন। তবে ওই ছাত্রীর বিয়ে বন্ধ করতে অবশ্য কম বেগ পেতে হয়নি পুলিশ-প্রশাসনকে। বিয়ে না-হওয়ার খরচ কীভাবে সামাল দেবেন পাত্রীর বাবা, এই প্রশ্নে বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মধ্যেও পড়তে হয় প্রশাসনিক কর্তাদের। প্রথমেই
কড়া ব্যবস্থা না-নিয়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেন প্রশাসনিক কর্তারা।
শুরু হয় আলোচনা। টানা চার ঘণ্টার চেষ্টায় অভিভাবকেরা বিষয়টি মেনে নেন। ভবিষ্যতে তাঁরা কোনও নাবালিকার বিয়ে দেবেন না বলেও প্রশাসনের কাছে অঙ্গীকার করেন।
রাজিয়ার পড়াশুনোর পাশাপাশি পরিবারটিকে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়।
চাঁচল (১) বিডিও ভূপ্রভা বিশ্বাস বলেছেন, “রাজিয়াকে বলেছি পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। ১৮ বছর হলে ওকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত করা হবে।”
রাজিয়ার মা বুলনবিবি বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। আইন-কানুন অত বুঝি না। তাই পাত্র পেয়েই মেয়ের বিয়ে ঠিক করি। এ বার ১৮ বছরের আগে আর মেয়ের বিয়ে দেব না।” আর রাজিয়া বলে, “বাবা-মা বিয়ে দিচ্ছিল। বিডিও সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। আমি পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াব। তার পরে বিয়ে।” |