অভিযোগ ‘নেয়নি’ বলে আবার কাঠগড়ায় পুলিশ
সেই একই অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। এক জন মহিলা শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগ জানাচ্ছেন। কিন্তু পুলিশ সেই ঘটনা নথিভুক্ত করছে না। উল্টে ‘গুরুত্ব’ দিয়ে শোনা হচ্ছে অভিযুক্তের কথাই।
অভিযোগের কাঠগড়ায় এ বার বারুইপুর থানার পুলিশ। এর আগে নেটরঙ্গ-কাণ্ডে পূর্ব যাদবপুর থানা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে মারধর করার অভিযোগ নথিভুক্ত করেনি। তাঁর দেহে কালশিটে দেখেও তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়নি। একই কাণ্ড ঘটেছিল কালিকাপুরে এক মোটরবাইক-আরোহীর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা এক তরুণীর ক্ষেত্রেও। সেখানেও গরফা থানা তাঁর অভিযোগ নথিভুক্ত না-করে থানা থেকেই ছেড়ে দিয়েছিল অভিযুক্তকে।
রবিবার কার্যত পুলিশের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছেন বারুইপুরের এক মহিলা। তাঁর অভিযোগ, তাঁদের বাড়ির মালিক ও স্থানীয় একটি ক্লাবের জনা তিরিশেক সদস্য রবিবার তাঁর উপরে চড়াও হয়ে তাঁর পোশাক ছিঁড়ে দেয়। তাঁর মোবাইল ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়। তাঁর অভিযোগ, ওই সময়ে পুলিশের সাহায্য চেয়েও তিনি তা পাননি। পুলিশ তাঁদের অভিযোগও নিতে চায়নি বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বারুইপুরের সেই বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
মহিলার ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বারুইপুরের আনন্দনগরের ওই বাড়ির মালিক গৌতম পাল ওই মহিলা এবং তাঁর বাবা অপরেশ ভট্টাচার্যের নামে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। গৌতমবাবুর অভিযোগ, “ওই মহিলা ও তাঁর বাবা আমার স্ত্রী ও বোনকে মারধর করেছেন।”
ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের গোড়ায়। ওই সময়ে গৌতমবাবু বাড়িটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। গৌতমবাবু পেশায় জীবনবিমার এজেন্ট। ফেব্রুয়ারি মাসে এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে চুক্তি হয় অপরেশবাবুর। অপরেশবাবু ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি’র বিজ্ঞানী পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি বাড়িটি ৪০ লক্ষ টাকায় কেনার প্রস্তাব দেন। অগ্রিম হিসেবে তিনি গৌতমবাবুকে দু’লক্ষ টাকাও দেন। গৌতমবাবু জানান, মার্চ মাসে অপরেশবাবু ২৩ লক্ষ টাকা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গৌতমবাবুর দাবি, বাকি টাকা কয়েকটি কিস্তিতে শোধ করবেন বলে অপরেশবাবু তাঁকে কথা দিয়েছিলেন। অগ্রিম দেওয়ার পরে অপরেশবাবু ও তাঁর মেয়ে বাড়ির একটি অংশে বসবাস শুরু করেন। গৌতমবাবুর অভিযোগ, অগ্রিমের টাকা ছাড়া প্রতিশ্রুতিমতো টাকা তাঁকে দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আদালতে তিনি একটি অভিযোগ দায়ের করেন বলে গৌতমবাবু এ দিন জানিয়েছেন।
অপরেশবাবু এ দিন বলেন, “টাকা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। আমাদের আইনজীবী চিঠি দিয়ে তা জানিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে গৌতমবাবুরা মাঝেমধ্যেই গোলমাল করছিলেন।” এ দিনও ওই বিষয়টি নিয়ে গৌতমবাবুরা তাঁদের উপরে হামলা চালান বলে অভিযোগ করেছেন অপরেশবাবু। তাঁর মেয়ের অভিযোগ, “বেলা দেড়টা নাগাদ গৌতমবাবুর স্ত্রী ও তাঁর দুই বোন আমাদের উপরে হামলা চালান। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় ক্লাবের জনা তিরিশেক যুবক। তাঁরা আমাদের মারধর করে রাস্তায় বার করে দেয়। আমার জামাকাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানি করে। আমাদের লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয়। আমাদের পরিচারিকা ও তাঁর স্বামী বাধা দিতে গিয়ে মার খান।” পরে ওই পরিচারিকাই তাঁকে একটি ‘টি-শার্ট’ এনে দেন বলে অভিযোগকারিণী মহিলা জানিয়েছেন। অপরেশবাবু বলেন, “ওই অবস্থায় আমরা রাস্তায় বসে থাকি।” তাঁর অভিযোগ, ঘটনার অনেক পরে, বিকেল তিনটে নাগাদ বারুইপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
অপরেশবাবু ও তাঁর মেয়ের অভিযোগ, পুলিশকে সমস্ত ঘটনা বলার পরেও তারা মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। উল্টে তারা গৌতমবাবুকে ‘গৌতমদা আসছি’ বলে থানায় ফিরে যায়। অভিযোগকারিণী বলেন, “এর থেকেই বোঝা যায়, পুলিশের সঙ্গে গৌতমবাবুদের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। তাই তারা আমাদের অভিযোগ শুনতে চায়নি।” এ ব্যাপারে গৌতমবাবু বলেন, “মাস তিনেক ধরে বহু বার আমাকে এই বিষয়টি নিয়ে থানায় যেতে হয়েছে। তাই পুলিশকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হয়েছে। সেই সূত্র ধরেই তাঁরা আমাকে ‘গৌতমদা’ বলে ডাকেন।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী জানান, বারুইপুর থানার পুলিশের সঙ্গে গৌতম পালের যোগসাজশের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিন সন্ধ্যায় থানায় গিয়ে গৌতমবাবু ওই মহিলা ও অপরেশবাবুর বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী ও বোনকে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন।
অপরেশবাবু ও তাঁর মেয়ের অভিযোগ সে দিন দায়ের করা হল না কেন? এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “ওই মহিলার আইনজীবী সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আমাকে ফোন করে জানান, বারুইপুর থানা তাঁর মক্কেলের অভিযোগ নিতে চাইছে না। আমি ওই মহিলার ফোন নম্বর নিয়ে তাঁকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চাই। ওই মহিলা জানান, তাঁরা এখন এসএসকেএম হাসপাতালে রয়েছেন। পরদিন থানায় গিয়ে তিনি অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানান। সেই মতো আমি থানাকে নির্দেশ দিই। বিষয়টি তদারকির জন্য বারুইপুরের এসডিপিও-কেও নির্দেশ দিই।”
অপরেশবাবু জানান, সোমবার তাঁরা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর মেয়ে বারুইপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। মহিলা বলেন, “মারধরের পরে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সেই কারণেই আমাদের থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করতে দেরি হয়েছে। তা আমরা লিখিত ভাবে জানিয়েছি।”
মহিলার অভিযোগের ব্যাপারে কী বলছেন স্থানীয় ওই ক্লাবের ছেলেরা? এ দিন ওই ক্লাবের তরফে পুলকেশ দত্ত বলেন, “আমাদের কোনও সদস্য ওই ঘটনায় জড়িত নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.