সম্পাদক সমীপেষু...
যন্ত্রনির্ভরতার শিকার সদ্যোজাত শিশুও
শিশুমৃত্যু নিয়ে স্বাতী ভট্টাচার্য ও কমলেন্দু চক্রবর্তীর (১৪-২) দুটি সময়োচিত প্রতিবেদনের জবাবে কিছু জানানোর প্রয়োজন অনুভব করছি। অতিরিক্ত যন্ত্রনির্ভরতার মানসিকতা সুকৌশলে চিকিৎসকদের একটা বিশাল অংশ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্বাতী ভট্টাচার্য লিখেছেন, তিনি একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লেবার রুমে দেখেছেন সদ্যোজাত শিশুগুলিকে ডাক্তাররা এনে রাখছেন ‘ওয়ার্মার’ যন্ত্রটিতে। এ যদি সত্যি হয় তো ভয়ঙ্কর বিপদের কথা। শিশুর জন্মের পরেই এমনকী নাড়ী কাটারও আগে শিশুকে রাখতে হবে মায়ের বুকের উপর। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর স্বাভাবিক ওয়ার্মার। এর পর থেকে জন্মের আধ ঘণ্টার মধ্যে মা শিশুকে স্তন পান করাবেন, কোলে নেবেন, এক বিছানায় পাশাপাশি শোবেন। সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। স্যালাইন চলা অবস্থায়ই মা শিশুকে স্তন দিতে পারেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রথম স্তন পানে খুব বেশি হলে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। বুকে শিশুকে ধরে এই স্তন পান করানোকে বলে ‘ক্যাঙ্গারু কেয়ার’। আর এক বিছানায় পাশাপাশি অবস্থানকে বলে ‘বেডিং ইন’। এর ফলে শিশু মায়ের দেহের তাপেই গরম থাকে, আর স্তন পান করানোতে কোনও রকম সমস্যা হয় না। এটা সারা বিশ্বে স্বীকৃত। কিন্তু এই সুন্দর স্বাভাবিক ব্যবস্থাটিকে ভাঙার জন্য কর্পোরেট সেক্টর পরিচালিত হাসপাতালগুলি ও চিকিৎসকদের এক বিশাল অংশ যেন উঠেপড়ে লেগেছে। কর্পোরেট হাসপাতালগুলির এক বিরাট অংশ জন্মের পরেই শিশু ও মা’কে আলাদা করে দিচ্ছে। এতে লাভ দু’রকম। প্রথমত, শিশুকে অহেতুক আলাদা নার্সারিতে রেখে বিলের অঙ্ক বাড়ানো যায়, যা কিনা মা ও শিশুকে একসঙ্গে রাখলে সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, শিশুকে নার্সারিতে রেখে কৌটোর দুধ ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং মায়ের মধ্যে কৌটোর দুধ খাওয়ানোর মানসিকতা তৈরি করে দেওয়া যায়। আমরা বলি, শিশুর স্পর্শ, দংশন ও চোষণেই মার স্তনে দুধের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া আলাদা থাকার ফলে, মায়ের স্তনে দুধের ভারে অতিরিক্ত ফোলা, ব্যথা ও শক্ত চাকার মতো হতে পারে এবং তা থেকে পুঁজ বা অ্যাবসেস দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ সুকৌশলে স্বাভাবিক ও সফল ভাবে শিশুর স্তন পানে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে, লাভবান হচ্ছে তাঁদেরই বন্ধু বেবি ফুড নির্মাণকারী কর্পোরেট সংস্থাগুলি। ডা. চক্রবর্তী বর্ণিত মালদা হাসপাতালের মতো অন্যত্রও চিকিৎসকদের এক বিশাল অংশ হয় ব্যাপারটি সম্বন্ধে সঠিক অবহিত নন, নতুবা কোনও বিশেষ কারণে চুপ করে থাকছেন। আর এই সব তথাকথিত নামী হাসপাতালের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মাঝারি ও ছোট নার্সিংহোমগুলি। আর সাধারণ মানুষও হচ্ছেন প্রভাবিত। প্রতিটি নাগরিককে জানতে হবে যে, বুকের দুধ কখনও (আবারও বলছি) কম হয় না। আর প্রথম ছয় মাস শুধু মাত্র বুকের দুধ পান করালেই শিশুমৃত্যু শতকরা নব্বই ভাগ ঠেকানো যায় একেবারে বিনা খরচায়। বুকের দুধের উপকারিতা বহু আলোচিত, বহুপ্রচারিত। অথচ এই সুন্দর স্বাভাবিক এবং কার্যকর ব্যবস্থার উপর কী ভয়ানক আক্রমণ শাণিত হচ্ছে বিভিন্ন দিক থেকে, ভাবলে দুঃখ হয়।
ঢেঁকিশাক
স্মৃতি-জাগানিয়া (২৬-৩) একটি রঙিন সংবাদ উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। ত্রিপুরার উপজাতি মহিলাগণ যে শাক-সবজির পশরা নিয়ে খদ্দেরদের জন্য অপেক্ষামানা দেখতে পেলাম, তার মধ্যে সিংহভাগ দখল করে আছে যে সবুজ শাকের লম্বা লম্বা ডাঁটির আঁটিগুলো আমি নিশ্চিত জানি, তার নাম ঢেঁকিশাক। আমার বালকবেলা কেটেছে অধুনা বাংলাদেশের বগুড়া সদর শহরে এবং পরবর্তী কালে এই বাংলার দিনাজপুরের বালুরঘাটে। আমার পরিষ্কার মনে আছে, তখন অঢেল লভ্য সেই ঢেঁকিশাক ঢেলে বিক্রি হত। বিশেষ একটি স্বাদ ও গন্ধের স্বাতন্ত্রের জন্য শাকটি খাওয়ার সময়েও সহজেই চেনা যায়। আর একটি দর্শনধারী বিশেষত্বও আছে। ঢেঁকিশাকের ডাল-শীর্ষটি হাতির শুঁড়ের মতো বাঁকানো থাকে। আমাদের শ্রীরামপুরের বনে-বাঁদাড়ে হাতিশুঁড় নামের এক প্রকার আগাছা জন্মায়। সেগুলি কিন্তু ঢেঁকিশাক নয়। কিন্তু এই শাক এখন এত কম লভ্য কেন? আমাদের মানিকতলা বাজারে এক সময় কালেভদ্রে লভ্য ছিল। ইদানীং দেখতে পাই না। শাকউলি দিদিকে আনতে বললে বলে, ‘বাজারে পাই না তো, আনুম কোহান থিক্যা?’ কারণটা জানি না। জানি না এটাও, এই ঢেঁকিশাক নামটা দেওয়া হল কেন? ছেলেবেলায় দেখেছি গ্রামদেশের ঢেঁকিকল, ঢেঁকিশাল বা ঢেঁকিঘরের আশপাশের পতিত জমিতে নিজে নিজেই এরা গজায়। সে জন্যই কি এই নাম?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.