সম্পাদকীয় ১...
ভারতীয় যুক্ত-রাজ্য
ভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা লইয়া কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক কার্যত রাজ্যগুলির তরফে কেন্দ্রবিরোধী দোষারোপের মঞ্চ হইয়া উঠিল। বিশেষত অকংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরা সকলেই রাজ্যগুলিকে উপেক্ষা করা, বিভিন্ন আর্থিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আলোচনা ছাড়াই রাজ্যের উপর চাপাইয়া দেওয়া এবং সুযোগ পাইলেই রাজ্যের এক্তিয়ার সঙ্কুচিত করার দায়ে কেন্দ্রকে অভিযুক্ত করিলেন। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তো এমন অভিযোগও করিলেন যে, কেন্দ্র নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলির সহিত এমন আচরণ করে, যেন এগুলি মিউনিসিপাল কর্পোরেশন মাত্র। অভিযোগ গুরুতর, সন্দেহ নাই। বহুলাংশে অভিযোগগুলি ঠিকও। তাই মুখ্যমন্ত্রীদের ক্ষোভ অসঙ্গত বা অন্যায় নয়। কেন্দ্র-রাজ্য বৈঠকের আশু উপলক্ষ ছিল রাজ্যে-রাজ্যে কেন্দ্রীয় সন্ত্রাসদমন কেন্দ্র স্থাপনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় সঞ্জাত ক্ষোভের তত্ত্বতালাশ লওয়া। তবে সাম্প্রতিক এই উপলক্ষের বাহিরেও এবং আগেও রাজ্যের অধিকার খর্ব করার অসংখ্য নজির ভারতীয় রাজনীতিতে রহিয়াছে।
ইহার কারণ, ভারত যে একটি যুক্তরাষ্ট্র, বিভিন্ন রাজ্য যে এই যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্বেচ্ছায় শামিল’ হইয়াই এই যুক্তরাজ্যটি গড়িয়া তুলিয়াছে, সেই সাংবিধানিক বিধানটি কেন্দ্র প্রায়শই বিস্মৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জন্মলগ্ন হইতেই সমস্যার শুরু। সে সময় দেশভাগের জ্বলন্ত ও মর্মান্তিক বাস্তবতার সম্মুখে দাঁড়াইয়া আরও বিভাজন এড়াইবার স্বার্থে বিভিন্নতার পরিবর্তে সংহতি ও ঐক্যের উপর অধিকতর জোর দেওয়া হয়। স্বভাবতই ঢিলেঢালা যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে শক্তিশালী কেন্দ্র গড়িয়া তোলার বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়। নেহরু জমানার সেই লগ্নেই জম্মু-কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির শর্ত ক্রমাগত লঙ্ঘন করিয়া ওই রাজ্যের আত্মশাসনের ক্ষেত্রগুলি একে-একে সঙ্কুচিত করা হয়। গোটা দেশের ‘সুষম আর্থিক বিকাশ’-এর যুক্তিতে গড়া হয় যোজনা কমিশন। পরবর্তী কালে, এমনকী উদারনৈতিক আর্থিক সংস্কারের পরেও, উন্নয়নের প্রাদেশিক চাহিদা ও অগ্রাধিকার যোজনা কমিশনের আমলাদের দ্বারাই একতরফা ভাবে নির্ধারিত হইতে থাকে। বিকাশের সহায়ক না হইয়া কমিশন তাহার প্রতিবন্ধক হইয়া ওঠে। কেন একটি কেন্দ্রীয় যোজনা সংস্থা রাজ্যে-রাজ্যে আর্থিক বিকাশের রূপরেখা রচনা করিয়া দিবে, সেই প্রশ্ন উঠিয়া পড়ে। রাজনীতিতে মণ্ডলায়নের পরিণামে আঞ্চলিক, প্রাদেশিক ও জাত-পাতের দলগুলির উত্থান যখন একটি কেন্দ্রীয় শাসক দলের নিরবচ্ছিন্ন আধিপত্য খর্ব করিয়া কোয়ালিশন সরকারের যুগ আবাহন করে, তখন রাজ্যে-রাজ্যে সদ্য ক্ষমতাসীন সরকারগুলিকে কেন্দ্র কিছু ছাড় দিতে বাধ্য হয় ঠিকই। প্রাদেশিক মনসবদাররা কেন্দ্রের সহিত দরকষাকষি করিয়া তাঁহাদের রাজনীতির আশু স্বার্থ সিদ্ধ করিতে কিছু-কিছু ছাড় আদায়ও করিতে থাকেন। কিন্তু ইহাকে ঠিক যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবিন্যাস বলা যাইবে না। যুক্তরাষ্ট্রীয়তা অবশ্যই বর্তমান ক্ষমতাবিন্যাসের মৌলিক, কাঠামোগত সংস্কার দাবি করে। রাজ্য তালিকার সংখ্যাবৃদ্ধি, যৌথ তালিকার বিলোপ, কেন্দ্রীয় তালিকার কলেবর হ্রাস করিয়া প্রতিরক্ষা, মুদ্রা ও বিদেশনীতির খোপে তাহাকে সীমাবদ্ধ করার দাবিগুলি এখনও সে ভাবে ওঠে নাই। বিতর্ক শুরু হইলে সংবিধানে মঞ্জুর যুক্তরাষ্ট্রীয়তার সীমানা প্রসারিত করার দাবিও ওঠা উচিত। কেন্দ্রীয় যোজনার ধারণাটিরও নির্বাসিত হওয়ার সময় আসিয়াছে। কেন্দ্রীয় আইনসভায় রাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করিতে গড়িয়া তোলা রাজ্যসভায় নির্বাচনের বর্তমান বিকৃতিও (যেখানে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিক গুজরাত হইতে এবং পঞ্জাবের রাজনীতিক অসম হইতে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হইয়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রবেশ করেন) শোধন করা দরকার। সারা দেশে অভিন্ন, কেন্দ্রীয় বিচারব্যবস্থাই বা চাপাইয়া দেওয়া হইবে কেন? শিক্ষাই বা কেন যৌথ তালিকায় থাকিবে? মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনই কিন্তু সেই বিতর্ক সূচনার শ্রেষ্ঠ মঞ্চ হইতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.