দুর্নীতির অভিযোগ এবং মূল্যবৃদ্ধির আবহে সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহের খাসতালুক দিল্লিতে পুরসভা ভোটে হারল কংগ্রেস। ১৪ বছর ধরে শীলা দীক্ষিত দিল্লি বিধানসভা ধরে রাখলেও লাগাতার দ্বিতীয় বারের জন্য রাজধানীর তিনটি পুরসভাই দখলে রাখল বিজেপি।
এমন নয়, বিজেপি শাসিত গত পুরসভার কাজকর্মে রাজধানীর বাসিন্দারা মুগ্ধ। স্থানীয় সমস্যায় দিল্লিবাসী আজও নাজেহাল। পুরসভায় দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। তাই বিজেপি নেতৃত্ব সুকৌশলে স্থানীয় সমস্যাগুলির ধারেকাছে যাননি। তাঁরা জানতেন, পুরসভার ‘সাফল্য’ তুলে ধরতে গেলে তা ব্যুমেরাং হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। বরং তাঁরা মাথায় রেখেছেন, অণ্ণা হজারের আন্দোলন দিল্লিবাসীর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল। তাই মনমোহন সরকার বা শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাঁদের ব্যর্থতা নিয়ে আমজনতার ক্ষোভকে পুঁজি করা হয়েছে প্রচারে। তাতেই বাজিমাত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। |
কংগ্রেস নেতারাও স্বীকার করছেন, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির খেসারত দিতে হয়েছে রাজধানীর পুরভোটে। কিন্তু হারের দায় যাতে তাঁর উপরে সরাসরি না আসে, সে জন্য খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ গোটা বিষয়টি থেকে দূরত্ব রাখার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, “পুরসভার ভোটে লড়াই হয় স্থানীয় সমস্যা নিয়ে। মানুষের জন্য স্থানীয় স্তরে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের দক্ষতার বিচার হয়। নির্বাচনে হার-জিত থাকে। যা-ই হোক, তা ভালোভাবে নেওয়া উচিত।”
উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে ভরাডুবির পর পুরভোটের এই ফলাফলে কিছুটা মুখরক্ষা হয়েছে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর। তাই ফল বেরোনোর পরেই তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে জয়ের কৃতিত্ব নিতে চেয়েছেন। তবে বিজেপি নেতারা স্বীকার করছেন, এই ফল বিজেপি শাসিত পুরবোর্ডের পক্ষে নয় বরং দিল্লি ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিপক্ষে। পুরসভা দখল করলেও গত বার যে ক’টি আসন বিজেপি দখল করেছিল, এ বার তার থেকে আসন কমেছে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পেরেছে বিজেপি। তাতেই সাফল্য এসেছে। যার ফলে যে পূর্ব দিল্লি কংগ্রেসের গড় বলে ধরা হয়, শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ যেখানে সাংসদ, সেখানেও বিজেপি জিতেছে।
কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য আশাবাদী, ফলের আঁচ পড়বে না আগামী বছর বিধানসভা বা তারপরে লোকসভা নির্বাচনে। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত পুরভোটেও বিজেপি জেতার পরেও দিল্লি বিধানসভা শীলা দীক্ষিতের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। মহারাষ্ট্রে পুরভোটে বিজেপি-শিবসেনার দাপট থাকলেও রাজ্যে বহাল তবিয়তে রয়েছে কংগ্রেস। সে কারণে-ও মনমোহন সিংহ থেকে কপিল সিব্বল বা রশিদ আলভিরা বলছেন, “এই ভোট আগাগোড়া স্থানীয় সমস্যার ভিত্তিতে হয়েছে।” তা ছাড়া শহর এলাকায় বরাবরই বিজেপির প্রাধান্য থাকে। উত্তরপ্রদেশের শহরের কেন্দ্রগুলিতেও বিজেপির ফল অপেক্ষাকৃত ভাল। কংগ্রেস নেতাদের দাবি, বাকি রাজ্যের বিধানসভা বা লোকসভা ভোট যখন হবে, তখন গ্রামেগঞ্জে মানুষের রায়ই হবে অগ্নিপরীক্ষা। সেখানে বিজেপি দাঁত ফোটাতে পারবে না।
কিন্তু গডকড়ীদের বক্তব্য, চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। এত দিন ধরে পঞ্জাবের মতো রাজ্যেও কোনও দল দু’বারের বেশি ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। কিন্তু অকালি-বিজেপি সেখানে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছে। কংগ্রেসের ‘দুর্নীতি’ ও জিনিসপত্রের বর্ধিত দামের জন্য মানুষের যে ক্ষোভ রয়েছে, ভোটে তার প্রতিফলন ঘটছে। উত্তরপ্রদেশ, গোয়া, পঞ্জাবের মতো রাজ্যের ভোটের ফলও তার প্রমাণ দিচ্ছে। আরও পরিশ্রম করে এ বার দিল্লিতে কেন্দ্রের গদি দখল করাই লক্ষ্য। সামগ্রিক ভাবে দলকে চাঙ্গা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে এ দিন সঙ্ঘের ভাইয়াজি জোশীর সঙ্গে আডবাণী-গডকড়ীরা বৈঠকও করেন। |