এক দিকে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারে ভারতীয় প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, অন্য দিকে ভারতের জন্য পুঁজির সংস্থান বাড়ানো। মূলত এই দু’টি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সোমবার গভীর রাতে চার দিনের সফরে ওয়াশিংটন পাড়ি দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এ বারের আমেরিকা সফরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে তুলে ধরবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর মতো বিষয়গুলি নিয়েও সরব হবেন তিনি। জি-২৪ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের চেয়ারম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক মন্দা, ইউরো-সঙ্কটের মতো বিষয়গুলি নিয়ে যেমন বৈঠক করবেন, তেমনই বিশ্ব ব্যাঙ্কের বসন্ত বৈঠক, আইএমএফের বৈঠক, ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) ও জি-২৪ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এ সবের পাশাপাশিই বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও যোগ দেবেন প্রণব। তাঁর কথায়, “সম্প্রতি দিল্লিতে ব্রিকসের সর্বোচ্চ স্তরের সম্মেলন হয়ে গেল। সেখানে স্থির হয়েছে, সাউথ-সাউথ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করা হবে। ওয়াশিংটনে ব্রিকসের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে আমরা এই সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখব, মত বিনিময় করব।”
এই ব্যাঙ্ক গঠনের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ভারত। এর মূল পরিকল্পনাও ভারতেরই। এই ধরনের ব্যাঙ্ক গঠনের মূল লক্ষ্য, ব্রিকস-ভুক্ত দেশগুলির উন্নয়নের ক্ষেত্রে পুঁজির সরবরাহ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সঙ্কটে যাতে ‘এক সুরে’ কথা বলতে পারে ব্রিকস, প্রয়োজনে অন্য দেশকে সাহায্যও করতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে চিনকে এখনও পুরোপুরি পাশে পায়নি ভারত। নয়াদিল্লির বক্তব্য, এই চারটি দেশের মধ্যে যে হেতু চিনই আর্থিক ভাবে সবথেকে শক্তিশালী, তাই তাদের অংশীদারিত্বই সবথেকে বেশি থাকা উচিত। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ওয়াশিংটন সফরে চিনের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে বিশদে আলোচনা করবেন প্রণববাবু।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রধানের পদটি বরাবরই আমেরিকার কুক্ষিগত ছিল। কিন্তু এ বারই প্রথম উন্নয়নশীল দেশগুলির তরফে নাইজেরিয়ার অর্থমন্ত্রীকে প্রার্থী করা হয়েছিল। অবশ্য বারাক ওবামার পছন্দের প্রার্থী, কোরিও-মার্কিন চিকিৎসক জিম ইয়ং কিম-ই বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রধানের পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আইএমএফ-এর বৈঠকের দিকে নজর রাখবে গোটা দুনিয়া। কারণ ওই বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়ই হবে আন্তর্জাতিক মন্দার হাত থেকে মুক্তি। একই সঙ্গে বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামও উঠে আসবে আলোচনায়। বলা বাহুল্য, যা নিয়ে ভারতের মাথাব্যথার শেষ নেই। সন্ত্রাসে আর্থিক মদত রুখতে নতুন নীতি প্রণয়নের জন্য জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি যে ‘ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স’ তৈরি করেছে, তার বৈঠকেও যোগ দেবেন প্রণব। অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষকর্তাদের পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও এই সফরে প্রণববাবুর সঙ্গে যাচ্ছেন। |