নিখোঁজ আরও এক
জলন্ধরে কম্বল কারখানা ভেঙে মৃত জেলার দুই
মাস দুয়েক আগে পঞ্জাবের জলন্ধরের গদাইপুরে কম্বল কারখানায় কাজ করতে গিয়েছিলেন বর্ধমানের কেতুগ্রাম ও পূর্বস্থলীর ৭ যুবক। রবিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ কারখানার চারতলা বাড়িটি ভেঙে পড়ে তাঁদের মধ্যে মৃত্যু হল দু’জনের। নিখোঁজ এক জন। মঙ্গলবার দুপুর অবধি মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮। গুরুতর আহত অবস্থায় ৬২ জনকে জলন্ধর সিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সোমবার দুপুরে কেতুগ্রামের ওই দুই যুবকের মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছয় গ্রামে। ইতিমধ্যে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের ৬৫ হাজার টাকা ও জখমদের ৩৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে পঞ্জাব সরকার।

বাপি।

স্বরূপ।
জলন্ধর পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম স্বরূপ বিশ্বাস (২২) ও প্রসেনজিৎ সরকার (২২)। তাঁদের বাড়ি যথাক্রমে কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সিতাহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নৈহাটি গ্রাম ও পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বাটীগ্রামে । নিখোঁজ যুবকের নাম বাপি রায়। তিনিও নৈহাটি গ্রামের বাসিন্দা। স্বরূপের দাদা অরূপ বিশ্বাসও একই কারখানায় কাজ করতেন। তিনিই জলন্ধর থেকে গ্রামের বাড়িতে ফোন করে তাঁর ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ জানান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২২ ফাল্গুন নৈহাটি গ্রামের ৫ বন্ধু জলন্ধরে ওই কারখানায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। পূর্বস্থলীর পারুলিয়ার দুই যুবকও তাঁদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। কারখানার কাছেই একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন তাঁরা। রবিবার রাতে প্রায় তিনশো জন শ্রমিকের ‘নাইট ডিউটি’ ছিল। তাঁদের মধ্যে অরূপ-সহ ওই তিন জনও ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ চারতলা বাড়িটি ভেঙে পড়ে মারা যান স্বরূপ। ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে তাঁর দেহ বার করে আনে এনডিআরএফ। দেহ শনাক্ত করেন অরূপবাবু। জলন্ধরেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। প্রসেনজিৎকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। বাপির খোঁজ এখনও মেলেনি।
ঘটনার খবর পাওয়ার পরে কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও পূর্বস্থলীর (উত্তর) বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে গ্রামের ছেলেদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সাহায্য চান নৈহাটি ও বাটীপাড়ার বাসিন্দারা। তাঁদের আশ্বাস দিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে আমাদের রাজ্যের প্রচুর বেকার যুবককে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এবার দুর্ঘটনাতেও প্রাণ গেল দু’জনের।” নিখোঁজদের যাতে খুঁজে পাওয়া যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা করা হবে বলে দু’জনেই আশ্বাস দিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে ওই খবর পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে শোকের ছায়া নেমে আসে মৃতদের পরিবারে। স্বরূপের মা সান্ত্বনাদেবী বলেন, “টাকা রোজগারের জন্য ছেলেটাকে ভিন রাজ্যে না পাঠালে আজ আমার ছেলেটা বেঁচে থাকত।” অরূপবাবুও বলেন, “আমরা দুই ভাই একসঙ্গে কাজ করতে এসেছিলাম। আমি একা হয়ে গেলাম।”

বাপি রায়ের পরিবার।

নিহত স্বরূপ বিশ্বাসের পরিবার।
একই আক্ষেপ বাটীগ্রামের সরকার পরিবারের। মৃত প্রসেনজিৎ সরকারের বাবা গোপেশ্বরবাবু জানান, ইতিমধ্যেই ছেলের মৃতদেহ আনতে জলন্ধরে গিয়েছেন পরিবারের লোকজন। অন্য দিকে, ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় বসে রয়েছেন ‘নিখোঁজ’ বাপি রায়ের বাবা বিধুভূষণ রায়। বাপির দাদা বাপ্পাবাবু বলেন, ‘‘আমি উত্তরপ্রদেশে ছিলাম। খবর পেয়ে চলে আসি জলন্ধরে, এখনও ভাইয়ের খোঁজ পাইনি।” তাঁর খুড়তুতো দাদা ভাস্কর রায়ের দাবি, রবিবার রাত ৮ টা নাগাদ ফোন করেছিল বাপি। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার।
আকস্মিক এই দুর্ঘটনার ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেননি স্বরূপ-প্রসেনজিতের সঙ্গীরা। নৈহাটি গ্রামের যুবক কার্তিক সরকার বলেন, “আমরা সাতজন একসঙ্গে ছিলাম। এখন কী করব ভাবতে পারছি না।” তবে ভিন রাজ্যেও পড়শিরা তাঁদের সঙ্গে আছেন বলে জানিয়েছে তাঁরা। দু’দিন ধরে তাঁরাই খেয়াল রাখছেন তাঁদের।

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.