চলতি আইপিএলে ক্রিকেট আবেগের জায়গা বাছতে হলে এই মুহূর্তে বেঙ্গালুরুর কোনও বিকল্প নেই। মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগে রাহুল দ্রাবিড় অন্য শহরের জার্সি গায়ে চাপিয়ে চিন্নাস্বামীতে উড়িয়ে দিয়ে গেলেন মাল্যর বেঙ্গালুরুকে। আর মঙ্গলবার নামছেন কি না ‘গাঙ্গুলি’!
প্রতিপক্ষ সেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু যাদের মালিক বিজয় মাল্য গত বছর আইপিএল নিলামে সৌরভ অবিক্রীত রইলেন দেখে তীব্র ব্যাঙ্গাত্মক হাসি হেসেছিলেন। সেই মাল্য যাঁর নির্মম ফ্র্যাঞ্চাইজি- পেশাদারিত্বে ভিটে ছেড়ে যেতে হয়েছিল দ্রাবিড়ের মতো ক্রিকেট-নিবেদিত প্রাণকে? ‘দেওয়াল’ জবাব দিয়ে গেলেন। সৌরভ পারবেন?
এমনিতে বেঙ্গালুরুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে সৌরভের রেকর্ড অসামান্য নয়, গড় বেশ খারাপ। ২৩.২৮। এমনিতে এক দিনের ক্রিকেটে গড় যেখানে ৪১-এর বেশি। কোনও ওয়ান ডে সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ ৬২। তুলনায় টেস্ট-কীর্তি অনেক ভাল। গড় ৪১.০৯। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি। কেরিয়ারের সর্বোচ্চ ২৩৯। কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে সৌরভের বেঙ্গালুরু আগমন বিচার করলে ভুল হবে। এখানে তাঁর জনপ্রিয়তা দেশের অন্য যে কোনও শহরকে হার মানাতে পারে। দ্রাবিড় যেমন কলকাতা থেকে সবথেকে বেশি ফ্যান-মেল পান, তেমনই সৌরভ পান বেঙ্গালুরু থেকে। গুরু গ্রেগের সেই বিতর্কিত আমলেই তো দেখা গিয়েছে। |
সৌরভ দল থেকে ব্রাত্য। দ্রাবিড় অধিনায়ক। নিজের শহরে খেলতে এসে দ্রাবিড় দেখলেন গ্যালারি সৌরভের জয়ধ্বনি দিচ্ছে!
সেই জনপ্রিয়তা এখনও অটূট। হোটেলের লবিতে নামছেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ধরছেন ভক্তরা। গত বার নিলামে অপমানিত সৌরভ যখন একেবারে শেষ মুহূর্তে পুণে ওয়ারিয়র্সে যোগ দিলেন আর প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে জেতালেন, সেই ম্যাচে এক দর্শক মাঠে ঢুকে তাঁর পা জড়িয়ে ধরেছিলেন। এ দিন সে রকমই এক দৃশ্য দেখা গেল প্র্যাক্টিসে। পুণের ব্যাটিং কোচ প্রবীণ আমরে, বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড বা সহকারী কোচ দীপ দাশগুপ্ত মিলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পক্ষে দারুণ উপযোগী প্র্যাক্টিস চালু করেছেন। কোনও ব্যাটসম্যানই নেটে টানা ব্যাট করছেন না। করছেন খুব বেশি হলে দু’ওভার। সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন আর এক ব্যাটসম্যান। দু’ওভার পরে তিনি ঢুকে পড়ছেন। তাঁর দু’ওভার হয়ে গেলে আবার আগের ব্যাটসম্যান। ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে যিনি প্রচুর ডলার কামিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই ডানকান ফ্লেচার কেন এ ধরনের কিছু অভিনবত্ব ভাবতে পারেননি সেটা পুণের প্র্যাক্টিস দেখে মনে হতে বাধ্য।
যাই হোক, সৌরভদের এ দিন ঠেলে দেওয়া হয়েছিল চিন্নাস্বামীর পিছন দিকটায় জাতীয় অ্যাকাডেমির কুৎসিত উইকেটে। সেখানে কোনও বল আচমকা লাফাচ্ছে। কোনওটা গড়াচ্ছে। বিরক্ত পুণে অধিনায়ক বার্তা পাঠালেন চিন্নাস্বামীর ভেতরে প্র্যাক্টিস করা যায় কি না। কিছুক্ষণের মধ্যে মঞ্জুর হয়ে গেল। সৌরভ চিন্নাস্বামীর ভেতরে এসে আবার প্যাড পরছেন। থাই প্যাডটা হাত থেকে পড়ে গেল। এক উঠতি নেট বোলার দূর থেকে ছুটতে ছুটতে এল সেটা তুলে দেওয়ার জন্য। সম্মান আর ভালবাসার ছোঁয়ায় সম্পৃক্ত সৌরভকে দেখে মনে হল, বাকি আইপিএলে তিনি এই ছবি সঙ্গে নিয়ে ঘুরবেন।
এমনিতে বিনোদন আর ক্রিকেটীয় টক্কর মিলিয়ে মঙ্গলবারের ম্যাচে মশলার অভাব নেই। সানিয়া মির্জা আসছেন। সহারা নিয়ে আসছে তাদের চার এফ-ওয়ান ড্রাইভারকে। সুব্রত রায় চেন্নাই ম্যাচে পুণেতে ছিলেন না। এখানে থাকবেন। বলিউড তারকারা কেউ আসছেন কি না রাত পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। এলেও আসতে পারেন। সব মিলিয়ে রংবাহারি মঞ্চ প্রস্তুত। |
বোলার সৌরভ। সোমবার বেঙ্গালুরুতে পুণের অনুশীলনে। ছবি: পিটিআই। |
মাঠের ভেতরে আবার ক্রিস গেইল বনাম পুণে বোলিং। রবিবার বেঙ্গালুরু আসা ইস্তক সৌরভ যা নিয়ে পড়ে আছেন। রাতে টিম ডিনারে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “না, না। ওকে পেস দিয়েই মারতে হবে। এখানে যা উইকেট! দেখলেন না কাল কী রকম রান হল! স্পিন অস্ত্র হবে একমাত্র যদি পিচে বল ঘোরে। মনে হচ্ছে না সে রকম কিছু হবে বলে।”
যদি বল না ঘোরার থিওরি শেষ পর্যন্ত থাকে তা হলে এক জন স্পিনার বসিয়ে বাড়তি পেসার খেলাতে পারে পুণে। সেক্ষেত্রে কোপ পড়তে পারে মুরলী কার্তিকের ওপর। ঘাড়ের যন্ত্রণা থেকে খানিকটা স্বস্তিতে আছেন বলে এ দিন প্র্যাক্টিসে বোলিং করলেন সৌরভ। আরসিবি ম্যাচে হাত ঘোরাতে চান। বলছিলেন, “আমি বলটা করতে পারলে খুব সুবিধে হবে। তা হলে আর একটা ব্যাটসম্যান খেলাতে পারব।” তবে ওপেনিং জুটি তিনি ভাঙতে চান। জেসি রাইডারের সঙ্গে উথাপ্পাকে রাখতে চান। তিনি নামবেন তিনে। যিনি এই আইপিএলে সৌরভের সেরা পেস-অস্ত্র তিনি আবার গেইলের দারুণ বন্ধু। সন্ধ্যায় হোটেলে নিজের ঘরে বসে অশোক দিন্দা বলছিলেন, “ক্রিস গেইল গেল কোথায়? দেখাই তো হল না!”
মঙ্গলবার দেখা হবে। তখন আর বন্ধুত্বের ফুরসত থাকবে না। সম্ভবত নৈছনপুরের পেসারের কাঁধে দায়িত্ব বর্তাবে গেইল-কে আক্রমণ করার। সৌরভ যেমন বললেন, “ওকে তো তাড়াতাড়ি তুলতেই হবে। না হলে ম্যাচ শেষ করে দিয়ে চলে যাবে।” গেইলের হাতে ব্যাট। দিন্দার হাতে বল। আইপিএল-এর নানা দ্বৈরথের মধ্যে এ বার দুই বন্ধুর দ্বৈরথ! |