|
|
|
|
হত ৩৬ তালিবান-সহ ৪৭ |
১৮ ঘণ্টা লড়াইয়ের পরে জঙ্গি-মুক্ত কাবুল |
সংবাদসংস্থা • কাবুল |
শেষ হল ১৮ ঘণ্টার মরণপণ লড়াই। আপাতত ইতি পড়ল হামলাকারী তালিবানের ‘বসন্ত অভিযানে।’ আজ সকালে, ৪৭ জনের প্রাণের বিনিময়ে। দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী বিসমিল্লাহ মহম্মদি বলেন, “নিহতদের মধ্যে ৩৬ জন তালিবান জঙ্গি, ৮ জন আফগান নিরাপত্তারক্ষী এবং ৩ জন সাধারণ মানুষ।” সেনা-জঙ্গি লড়াইয়ে ৬৫ জন জখম হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে এটাকেই আতঙ্কের অবসান বলে মনে করতে পারছে না হামিদ কারজাইয়ের সরকার। কবে কখন তালিবান জঙ্গিরা তাদের ‘বসন্ত অভিযান’-এর দ্বিতীয় পর্ব শুরু করবে, তা নিয়ে উদ্বেগে ন্যাটো ও আন্তর্জাতিক মহলও।
এই হামলার ঘটনায় নঙ্গরহর প্রদেশ থেকে দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। আফগান সরকারের দাবি, জেরায় তারা স্বীকার করেছে, কাবুলে হামলার পিছনে রয়েছে তালিবান-সহযোগী হক্কানি গোষ্ঠী। দায় যারই থাক, এই হামলার জন্য গোয়েন্দা বিভাগ, বিশেষ করে ন্যাটোকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। তিনি জানান, এই জঙ্গি হানা দুই দফতরের ‘ব্যর্থতাকেই’ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। |
|
পড়ে রয়েছে আত্মঘাতী জঙ্গির দেহ। |
কাল একযোগে তালিবান জঙ্গিরা হামলা চালায় রাজধানী কাবুল-সহ জালালাবাদ, লোগার, পাখতিয়া এবং নঙ্গরহরে। নিশানায় ছিল পার্লামেন্ট, আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের বাসভবন, মার্কিন-ব্রিটেন-জার্মান-সহ একাধিক দেশের দূতাবাসও। তালিবানের কথায়, এই ‘স্প্রিং অফেন্সিভ’ হামলার শিকার হয় এখানকার ন্যাটোর সদর দফতরও। হামলার আগের দিন রাতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের বান্নুতে জেল ভেঙে প্রায় চারশো বন্দিকে ‘মুক্ত’ করে তালিবান। জঙ্গিদের পর পর এই দু’টি ঘটনায় শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব। এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিও। আজ দিল্লিতে সেনাবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “পাক-আফগান অঞ্চলের এই সব ঘটনা গভীর আশঙ্কার কারণ।” আফগানিস্তানে জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে আরও ‘চোখ-কান খোলা’ রাখারও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। যাতে এই সব ঘটনায় সেনা দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে।
বিসমিল্লাহ মহম্মদি জানান, গত কাল কিছু আত্মঘাতী তালিবান বোরখা পরে হাতে ফুল নিয়ে হামলা চালায় কাবুলে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে। ওয়াজির আকবর খান অঞ্চলে একটি পাঁচতারা হোটেল দখল করে সেখান থেকেও পার্লামেন্ট এবং বিভিন্ন দূতাবাস লক্ষ্য করে রকেট এবং গুলি ছোড়ে জঙ্গিরা। সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাঘাত করে আফগান সেনারাও। হামলার শিকার হওয়া এলাকাগুলি কড়া নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয়। কিন্তু হামলার ধরন থেকেই পরিষ্কার সুপরিকল্পিত ভাবেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। পুরোপুরি তৈরি হয়েই রাজধানীতে ঢুকেছে তারা। তাই প্রথম দিকে খুব একটা সুবিধে করতে পারেনি আফগানিস্তানের সেনারা। |
|
এখানেই জঙ্গিদের খতম করে আফগান সেনা। |
সারা রাত ধরে চলে গুলির লড়াই। আফগান সেনাদের সঙ্গে ন্যাটো বাহিনী যোগ দেওয়ার পর বদলাতে থাকে দৃশ্যটা। ন্যাটোর মুখপাত্র জানান, তাদের হেলিকপ্টার আকাশপথে আফগান সেনাদের সাহায্য করার পর থেকেই কোণঠাসা হতে শুরু করে তালিবান জঙ্গিরা। তারা আশ্রয় নেয় একটি নির্মীয়মাণ বহুতলে। সেই বহুতল লক্ষ্য করে একটার পর একটা রকেট এবং গ্রেনেড হামলা চালায় আফগান সেনা এবং ন্যাটো। সেই সঙ্গে আকাশপথেও বাড়িটিতে হামলা চালায় ন্যাটো। বিদেশি দূতাবাস এবং পার্লামেন্টের কাছেই নির্মীয়মাণ এই আবাসন থেকে শেষ জঙ্গির মৃতদেহ বের করে আনার পরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। আফগান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মুখপাত্র সিদ্দিকি সিদ্দিকি সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে বলেন, “আজ সকাল ৭টা ২০ নাগাদ কাবুলে লড়াই শেষ হয়। সমস্ত জায়গা তালিবান দখল মুক্ত করা গিয়েছে। সমস্ত রাস্তাও খুলে দেওয়া হয়েছে।” কাল সারা রাত বোমা এবং গুলির শব্দই শুনেছে কাবুলবাসী। স্থানীয় এক বাসিন্দা হামিদ্দুলা বলেন, “গুলির শব্দে কাল সারা রাত ঘুমোতে পারিনি।” আজ সকালে ধোঁয়ার মধ্যে থেকে শেষ জঙ্গির মৃতদেহ বের করে আনার পরই অবসান হয় আতঙ্কের। গোটা এলাকায় নেমে আসে থমথমে নীরবতা। আপাতত কাবুলকে জঙ্গি দখল মুক্ত করা গেলেও মিলিয়ে যায়নি আতঙ্ক। কারণ দু’বছরের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে পাততাড়ি গোটাতে হবে ন্যাটোকে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তারা এখানে এলেও শান্তি দূর অস্ত, এই এক দশকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। তার প্রমাণ মিলেছে ন্যাটোর একটি গোপন রিপোর্টেই। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফাঁস হওয়া এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, তালিবান এবং তাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের ক্রমশ সমর্থন বাড়ছে। এমনকী পুলিশকর্মীরাও তালিবানকে অস্ত্র বিক্রি করছে! রিপোর্টটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে ন্যাটো। তারা অস্বস্তিতে পড়লেও রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার আফগানিস্তানের পিছনে কোটি কোটি ডলার খরচ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং শক্তি আরও বাড়িয়েছে তালিবান। ফলে আফগানিস্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব। |
ছবি: রয়টার্স। |
|
|
|
|
|