সর্বদল বৈঠকে পাশ হয়ে গেল বর্ধমান জেলা ভাগের প্রস্তাব। সোমবার ওই বৈঠকের পরে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “আগেই সর্বদল বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল। সেটিই চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলি মোটামুটি রাজি। কয়েকটি দলের তরফে কিছু বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বিশেষত কাঁকসা ব্লক ভাগ নিয়ে। সেই প্রস্তাবও আমরা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”
রাজ্যের বড় জেলাগুলিকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত বস্তুত অনেক দিনের। ইতিমধ্যে মেদিনীপুর বা ২৪ পরগনার মতো জেলা দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রিত্বের মাঝামাঝি সময়ে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্রের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনিক সংস্কার কমিটি যে সুপারিশ করে, তাতেও বর্ধমান জেলা ভাগ করার কথা বলা হয়েছিল। তার যুক্তি হিসেবে অশোকবাবু এ দিন বলেন, “বর্ধমানের একাংশে শিল্পের সম্ভাবনা আছে, শিল্পায়ন হচ্ছেও। শিল্প যে অঞ্চলে হচ্ছে সেখানে আরও বেশি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার।”
তবে সেই সময়ে সিপিএমের অন্দর থেকেই প্রবল বাধা আসে। এর পরে বাম সরকার আর বর্ধমান জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত আর কার্যকর করেনি। কয়েক বছর আগে বর্ধমান আদালত চত্বরে এক সভায় বাধার মুখে পড়তে হয় তদানীন্তন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। রাজ্যে ক্ষমতায় এলে তাঁরা বর্ধমান ভাগ করবেন বলে মমতা জানালে অনেকেই হইচই করে আপত্তি জানাতে থাকেন। তৎক্ষণাৎ মমতা জানিয়ে দেন, বর্ধমানের মানুষ যখন চাইছেন না, তিনি ওই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।
রাজ্যে পরিবর্তনের পরে অবশ্য নতুন সরকার বর্ধমান ভাগের পথেই এগিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরেই জেলা পুলিশের এলাকা ছেঁটে আসানসোল ও দুর্গাপুরের জন্য পৃথক পুলিশ কমিশনারেট গড়া হয়। শাসকজোটের রাজনৈতিক সংগঠনের ক্ষেত্রেও আছে এই পার্থক্য। সিপিএমের অভিন্ন জেলা কমিটি থাকলেও কংগ্রেস ও তৃণমূলের সংগঠনে কয়েক বছর আগেই গ্রামীণ এবং শিল্পাঞ্চলের জন্য পৃথক সভাপতি পদ গড়া হয়েছে।
রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “প্রশাসনের সঙ্গে নানা দলের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবাই জেলা ভাগের ব্যাপারে একমত। এই বৈঠকের রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে নতুন জেলার নাম কী হবে, তা আমি বলতে পারব না।” বস্তুত এই নামকরণ নিয়ে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি সব পক্ষ। জেলাশাসক বলেন, “নাম নিয়ে যে সব প্রস্তাব এসেছে, তা-ও সরকারের কাছে পাঠানো হবে।’’
এর আগে ভাগাভাগির ব্যাপারে বিতর্ক ছিল মধ্য বর্ধমানের কাঁকসা-গলসি ইত্যাদি কোন জেলায় পড়বে তা নিয়ে। বৈঠকে স্থির হয়েছে, গলসি বিধানসভা এলাকা গ্রামীণ বর্ধমানে থাকবে। কাঁকসা ব্লকের কিছুটা পড়েছে গলসি বিধানসভায়, কিছুটা দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা এলাকায়। ফলে জেলা ভাগের সঙ্গে সঙ্গে কাঁকসাও ভাগ হয়ে যাবে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “কাঁকসা ব্লক ভাঙার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি ছিল। কাঁকসার তিনটি পঞ্চায়েত আমলাজোড়া, গোপালপুর ও মোলানদিঘি পড়ছে আসানসোলের দিকে। আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন বলেছে, এই আপত্তি মানা সম্ভব নয়। কারণ বিধানসভা এলাকা ভাগ করা যাবে না।”
এ দিন রায়নার শ্যামাদাসবাটিতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেন, “কীসের ভিত্তিতে জেলা ভাগ হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। প্রশাসনিক দিক দিয়ে ভাগ হলে আপত্তি নেই। আর্থিক সুযোগসুবিধার দিক থেকে ভাগ করা হলে কিন্তু গ্রামীণ অংশ দুর্বল হয়ে পড়বে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি (গ্রামীণ) রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জেলা ভাগ হলে গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে বর্ধমান এতই বড় জেলা যে তা দু’ভাগ করার দরকার রয়েছে। আসানসোলের মানুষদের জেলা সদরে আসতে প্রচুর সময় ও অর্থব্যয় করতে হয়। তাই জেলা ভাগ নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই।” |