আসছে পুরভোট। ফিরছে রাজনীতির লড়াই। কিন্তু কেমন আছে দুর্গাপুর?
ওয়ার্ডে ঘুরে-ঘুরে খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। আজ ওয়ার্ড ১ ও ২। |
একেই বোধহয় বলে, প্রদীপের নীচে অন্ধকার।
ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘আইকিউ সিটি’ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তার আশপাশে না আছে ভাল রাস্তাঘাট, না মেলে পর্যাপ্ত পানীয় জল। নিয়মিত নর্দমা সাফাই হয় না। বেশির ভাগ বাসিন্দা চাষবাস করেন, অথচ সেচের ব্যবস্থা হয়নি।
এই যদি হয় দুর্গাপুর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থা, ১ নম্বরের অবস্থাও তথৈবচ।
দুর্গাপুর টাউনশিপ শেষ হতেই ১ নম্বর ওয়ার্ড শুরু। রঘুনাথপুর, ধোবিঘাট, পারুলিয়া, কমলপুর ও বিজুপাড়া এই নিয়ে ওয়ার্ড। কমলপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, রাস্তাঘাট নেই। পানীয় জল মেলে না। কুয়োই এক মাত্র ভরসা। প্রখর গ্রীষ্মে জল ওঠে না। বছর তিনেক আগে সেখানে জলাধার হওয়ার পরে অবশ্য পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। রাস্তার ধারে ট্যাপ বসেছে। তবে এখনও সব বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি কমলপুর ও পারুলিয়ায় কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে। ব্যতিক্রম আদিবাসীপাড়া। সিপিএম কাউন্সিলর, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা কণিকা দাসের বাড়ি যেখানে, সেই রঘুনাথপুরের মধুপল্লিতে এখনও মোরাম রাস্তা। খাওয়ার জল নিতে হয় রাস্তার ট্যাপ থেকে। |
মধুপল্লিতে কাউন্সিলরের বাড়ির কাছেই থাকেন সুখদেব হালদার। তাঁর খেদ, “কণিকাদেবী গত দেড় দশক ধরে পদে রয়েছেন। অথচ এলাকার উন্নয়ন হয়নি। এই ওয়ার্ডটি নামেই ১ নম্বর হয়ে রয়ে গিয়েছে।” তুলনায় কমলপুর ও পারুলিয়ায় কিছুটা কাজ হয়েছে। তবে কমলপুরের তারক চাঁদ, হারাধন মণ্ডল, বিশ্বনাথ সাউদের ক্ষোভ, “আবর্জনা নিয়ে যাওয়া হয়নি কয়েক মাস। নর্দমা মজে গিয়েছে। বিএসইউপি প্রকল্পের বাড়ি গরিবরা পাননি, পেয়েছেন সম্পন্নরা। পারুলিয়ায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত চিকিৎসক আসেন না। মহকুমা হাসপাতালে ছুটতে হয়।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা, শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত নিখিল নায়েকের অভিযোগ, বিধবা ভাতা ও বার্ধক্য ভাতা মিলছে না। বিপিএল তালিকাতেও ব্যাপক গরমিল রয়েছে। তবে কাউন্সিলরের মতে, “বহু প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে।”
ইস্পাত কলোনি থেকে অপরিসর পিচ রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলে শোভাপুর, বিজড়া, মহুয়াবাগান এবং হাজরাপাড়া নিয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ড। মূলত গ্রামীণ ওই এলাকায় প্রধান সমস্যা অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা। দু’টি মিনিবাস এক ঘন্টা অন্তর দুর্গাপুর স্টেশন থেকে কাঁটাবেড়িয়া পর্যন্ত যাতায়াত করে। দুপুরে যাত্রী কম থাকায় সময়ের ফারাক বেড়ে ঘন্টা দেড়-দুইয়ে দাঁড়ায়। অসুস্থদের ১৫ কিলোমিটার দূরে মহকুমা হাসপাতালে যেতে হয় দু’টি বাস বদলে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী আসেন না বলে অভিযোগ। রাস্তায় পানীয় জলের ট্যাপ রয়েছে। তবে বিজড়া দক্ষিণপাড়ার বেশ কিছু অংশে জলের লাইন যায়নি, বিদ্যুৎও পৌঁছয়নি কিছু বাড়িতে। ওই পাড়ার আইনুল জমাদারের মতে, “গ্রামে আমাদের অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ।” তৃণমূলের ওয়ার্ড কমিটির প্রেসিডেন্ট মৈনুদ্দিন জমাদারের ক্ষোভ, “পাঁচ-ছ’টি সরকারি কুয়ো ছিল। সংস্কারে অভাবে মজে গিয়েছে।” |
গত দশ বছর ধরে যিনি এলাকার সিপিএম কাউন্সিলর, সেই সাকিলা জমাদারের বাড়ি বিজড়া গ্রামেই। তবে তাঁর দাবি, গত কয়েক বছরে এলাকার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। গ্রামে ঢোকার ৮ কিলোমিটার মোরাম রাস্তা কংক্রিটের হয়েছে বছরখানেক আগেই। গ্রামের ভিতরে ৯ কিলোমিটার পাকা নর্দমা হয়েছে। গ্রামের রাস্তার ধারে দেড়শো বৈদ্যুতিক আলো লাগানো হয়েছে। কবরস্থান ঘিরে পাঁচিল দেওয়া হয়েছে। বিএসইউপি প্রকল্পে বিজড়ায় ১০৮টি এবং শোভাপুরে ৭৭টি পাকা বাড়ি গড়ে দেওয়া হয়েছে।
গ্রামবাসীর পাল্টা বক্তব্য, রাস্তা তৈরির দিন কয়েক পরেই বেশ কিছু জায়গায় আংশিক কংক্রিট উঠে যায়। কাউন্সিলরের আশ্বাস, রাস্তা ঠিক করে দেওয়ার পরেই তিনি ঠিকাদারের বিলে সই করবেন। স্থানীয় হাইস্কুলের শিক্ষক নজরুল হোসেন জমাদারের খেদ, “চাষ ও খেতমজুরি করেন ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাসিন্দা। অথচ সেচের ব্যবস্থা নেই।” কাউন্সিলরের যুক্তি, “ডিএসপি জমি অধিগ্রহণ করে রাখায় মাঠে সাবমার্সিবল পাম্প বসানো যায়নি। বিকল্প হিসাবে তিনটি পুকুর সংস্কার করা হয়েছে।” নর্দমা সাফাই না হওয়ার অভিযোগ মেনে নিয়েও তিনি পাল্টা বলেন, খোলা নর্দমায় আবর্জনা ফেলেন বাসিন্দাদের একাংশ। তাতেই নর্দমা আটকে যায়। এ ব্যাপারে বাসিন্দাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
|
নজরে নগর |
সবার সব আশা এক বারে পূরণ করা সম্ভব নয়। চেষ্টা করছি।
কণিকা দাস
সিপিএম কাউন্সিলর |
কাজ অনেক হয়েছে। কিছু বাকি। সেগুলিও করে ফেলা হবে।
সাকিলা জমাদার
সিপিএম কাউন্সিলর |
• জলাধার হলেও জল পৌঁছয়নি সব বাড়িতে
• স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও মেলে না পরিষেবা
• নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই ও নর্দমা পরিষ্কার হয় না
|
• প্রত্যন্ত এলাকা, যোগাযোগ মন্দ
• স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেও নেই, ভরসা ১৫ কিলোমিটার দূরের মহকুমা হাসপাতাল
• নর্দমা সাফাই হয় কয়েক মাস অন্তর |
উন্নয়নের কাজ কিছু হয়েছে। কিন্তু যথেষ্ট নয়।
নিখিল নায়েক
তৃণমূল শ্রমিক নেতা |
আমরা সব দিক থেকেই পিছিয়ে আছি।
মৈনুদ্দিন জমাদার
তৃণমূলের ওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট |
|