বিপিএল তালিকাভুক্তদের চিকিৎসার খরচ জোগানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা চালু করেছে। সেই বিমার আওতায় ইতিমধ্যে বর্ধমান জেলার প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ বিপিএল পরিবার অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কিন্তু সচেতনতা ও সঠিক তথ্য না জানার কারণে বিমার টাকা পেতে অনেকে সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ। সেই অসুবিধা দূর করতে মে মাসে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হবে জানিয়েছেন জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে অধিকাংশ বিপিএল পরিবারকেই হিমসিম খেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে জমি-বাড়ি বিক্রি পর্যন্ত করতে হয়। এই সমস্যা থেকে রেহাই দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান দফতর ২০০৮ সালের ১ এপ্রিল ‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা’ চালু করে। এই প্রকল্পে বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারকে মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। বিমার কিস্তির ৭৫ শতাংশ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। বাকিটা দেয় রাজ্য। উত্তর-পূর্বের ৭টি রাজ্য এবং জম্মু-কাশ্মীরে এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ৯০ শতাংশ পর্যন্ত দেয়। এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তদের একটি ‘স্মার্ট কার্ড’ দেওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে সেই কার্ড দেখিয়ে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ মেলে। দেশের নথিবদ্ধ যে কোনও সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সুযোগ রয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়। একটি পরিবারের সর্বাধিক ৫ জন এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান দফতর সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান জেলায় বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের সংখ্যা ৫,৯৫,৭১৮। জেলাশাসক জানান, তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪,৪৬,২৩৭টি পরিবার এই বিমা প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “রাজ্যে আর কোনও জেলায় এত পরিবার ‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা’র অন্তর্ভুক্ত হয়নি।” তিনি জানান, বর্তমান বছরে ১১৮৪৩ জন প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচারও রয়েছে। জেলার নথিবদ্ধ ৪৮টি হাসপাতালে তাঁরা চিকিৎসা করিয়েছেন।
কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে সচেতনতা ও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে ‘স্মার্ট কার্ড’ থাকা সত্ত্বেও অনেকে এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারছেন না বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। অনেক এই প্রকল্পের সুবিধা মিলবে না, এমন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বছরে এক বার কার্ড ‘রিনিউ’ করতে হয়। সচেতনতার অভাবে অনেকে তা সময় মতো করেন না। সেই সময়ে অসুস্থ হলে তিনি বিমার সুবিধা পান না। আবার দু’একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফেও উপযুক্ত সহায়তা মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সব সমস্যা দূর করতেই আগামী মে মাসে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হবে বলে জানান জেলাশাসক। তিনি বলেন, “প্রকল্পের সুবিধা থেকে এক জনও যেন বঞ্চিত না হন, তা দেখাই উদ্দেশ্য। বিমার বাইরে থাকা পরিবারগুলিকেও যত দ্রুত সম্ভব এর আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, প্রতি বছরের মতো এ বারও জুলাইয়ে ‘স্মার্ট কার্ড’ রিনিউ করা হবে। |