খোদ রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাই জানালেন, চিকিৎসকেরা গ্রামের মানুষের চিকিৎসায় মনোযোগী নন। জেলাগুলির গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা পরিষেবার হাল ফেরাতে হিমন্তের হুঁশিয়ারি, প্রয়োজনে “ডাক্তারদের জোর করে গ্রামে পাঠানো হবে।” করিমগঞ্জে পর পর শিশুমৃত্যুর ঘটনার জন্য মন্ত্রী পরোক্ষে চিকিৎসকদেরই দায়ী করেন।
ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ৪২ শিশুর মৃত্যু ঘটেছিল করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে। এতগুলি শিশুর মৃত্যু নিয়ে স্বভাবতই দেখা ছড়ায় ক্ষোভ। স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে নানা মহলে। এই বিতর্কের জেরে ইউনিসেফের একটি প্রতিনিধি দলও জেলা ঘুরে গিয়েছে। এ সবের পরই টনক নড়ে রাজ্য সরকারের। তিন মাস পর আজ করিমগঞ্জে ডাক্তার ও নার্সদের দু’দিনের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। শিবিরে ডাকা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা হাইলাকান্দির ডাক্তার-নার্সদেরও। প্রশিক্ষণ দিেচ্ছেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজের বিশেষজ্ঞরা। এই শিবিরের উদ্বোধনেই আজ এসেছিলেন অসমের স্বাস্থ্য ও শিক্ষান্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
এই শিবিরের উদ্বোধন করে হিমন্ত এ দিন বলেন, “করিমগঞ্জের শিশুমৃত্যু নিয়ে রাজ্য সরকার অনেক দিন থেকেই উদ্বিগ্ন। শুধু দু’মাসের নিরিখে নয়। গড় হিসেবেও এই আন্তর্জাতিক সীমান্ত জেলায় শিশুমৃত্যুর হার জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ের হার থেকে অনেক বেশি।” তিনি জানান, দেশে বর্তমানসময়ে শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ৫৮। রাজ্যের ক্ষেত্রে এই হার হাজারে ৪৮। কিন্তু করিমগঞ্জে সব হিসেবে ছাড়িয়ে একেবারে ৬৭ জন। তিনি এ-জন্য চিকিৎসকদেরই দোষারোপ করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এক দিকে গ্রামীণ জেলাগুলিতে ডাক্তাররা আসতে চান না। অন্য দিকে, যাঁরা আসেন, সরকারি হাসপাতালে তাঁরা বড় অনিয়মিত। চিকিৎসকদের সতর্ক করে দিয়ে হিমন্ত বলেন, এই ভাবে চলতে পারে না। সময় আসছে, ডাক্তারদের জোর করে গ্রামে পাঠানো হবে। তবে তাঁর আশা, দু’দিনের প্রশিক্ষণের পর করিমগঞ্জে শিশুমৃত্যুর হারে কিছুটা হলেও লাগাম টানা সম্ভব হবে। তবে শুধু প্রশিক্ষণেই শেষ নয়, এমন দাবি করে শর্মা বলেন, করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে আইসিইউ-র আদলে নিও-ন্যাটাল কেয়ার ইউনিট তৈরি করা হবে। এ-ছাড়া করিমগঞ্জে একটি মেডিক্যাল কলেজ খোলার সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান। সে-জন্য পরিকল্পনা কমিশনের কাছ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজ করিমগঞ্জ শহরে একটি জি এন এম নার্সিং স্কুলেরও উদ্বোধন করেন। শীঘ্র এর পড়ুয়াদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি ঘোষণা করেন। |