শুধুমাত্র পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে বিহারে প্রতি বছর ক্যানসারে আক্রান্ত ১ হাজার রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার মানুষ। তার মধ্যে যাঁদের বয়স ৩৫ বছরের নীচে, তাঁদের মধ্যে ৭ থেকে ৮ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এমনই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
এই রাজ্যে ক্যানসারের চিকিৎসা কেন্দ্র বলতে মাত্র দু’টি। ইন্দিরা গাঁধী ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েসেন্স এবং পটনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তবে সার্বিক ক্যানসার প্রতিরোধ পরিকাঠামোর চূড়ান্ত ঘাটতির ফলে গরিব মানুষদের মৃত্যু হচ্ছে আকছাড়। তাতে তেমন কোনও হেলদোল নেই রাজ্য সরকারের। নীতীশ সরকার যখন রাজ্যকে দুর্নীতি মুক্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে, সেই অবস্থায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই চূড়ান্ত গাফিলতিতে প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই অবস্থার মোকাবিলার জন্য না আছে প্রচার এবং না আছে চিকিৎসার পরিকাঠামো। বিশেষ করে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ বলে সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
পটনার মহাবীর ক্যানসার সংস্থানের অধিকর্তা জিতেন্দ্র কুমার সিংহের কথায়, “এই রাজ্যে অল্প বয়সীদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। মেয়েদের জরায়ু এবং পুরুষদের মুখের ক্যানসার বেশি পরিমানে হচ্ছে।” এই সংস্থা এক সমীক্ষা করে দেখেছে প্রতি বছর এই রাজ্যে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক সে কথা মেনেও নিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সচিব সঞ্জয় কুমার। তিনি বলেন, “এই রাজ্যে মুখের ক্যানসার সারা দেশের মধ্যে বেশি। তার অন্যতম কারণ এখানকার মানুষের খৈনি খাওয়ার অভ্যাস দীর্ঘদিনের পুরনো।”
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “এই রোগে মৃত্যুর প্রথম কারণ, দেরিতে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার খরচ যোগাতে না পারা। এবং দ্বিতীয় কারণ, চিকিৎসার জন্য ঠিক জায়গায় না পৌঁছনো।” এর জন্য সরকারের তরফে যে ঘাটতি রয়েছে তা জানিয়ে ওই কর্তা বলেন, “এই নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন ভাবে প্রচার করা হয় না। ফলে বিশেষ করে গ্রামের মানুষ বুঝতে পারেন না।”
রাজ্যে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা যে উদ্বেগের তা সম্প্রতি জানা গিয়েছে ‘ন্যাশনাল ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রোগ্রাম অব ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর এক সমীক্ষা থেকেও। স্বাস্থ্য দফতর থেকে বলা হয়েছে, এই রাজ্যে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে তা উদ্বেগের। এর জন্য চিকিৎসার অপ্রতুলতা এবং বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসার খরচ বহন করতে সমর্থ নন। সরকারি খরচে রাজ্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না কেন? রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব সঞ্জয় কুমার বলেন, “কেন্দ্রের টাকায় আমরা রাজ্যের ছ’টি জেলায় ক্যানসারের চিকিৎসা-পরিকাঠামো গড়ে তুলছি। এর জন্য প্রয়োজনীয় কাজও শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ছ’টি জেলার পরে আমরা ধীরে ধীরে অন্য্যন্য জায়গাতেও এই চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলব।” স্বাস্থ্য দফতরের খবর, প্রথমে বৈশালী, রোহতাস, কৈমুর, পূর্ব ও পশ্চিম চম্পারণ এবং মুজফফ্পুর জেলা হাসাপাতালে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচিবের কথায়, “রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এই সব কেন্দ্রের জন্য চিকিৎসক চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যে এই চিকিৎসা কেন্দ্রগুলি চালু হয়ে যাবে।” |