প্রায় দেড় দশক আগে তেলিপাড়া বাগানের যুবক অমিত ওঁরাও প্রেমে পড়েন। প্রতিবেশী কিশোরী শিবানিয়াকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে সংসারও শুরু করে দেন। বাড়িতে দুই সন্তানও রয়েছে। সামাজিক রীতি মেনে বিয়ে করা সম্ভব হয়নি তাঁদের। পুরোহিত ডেকে মন্ত্র পাঠ না হওয়ায় এবং গ্রামবাসীদের ভুরিভোজের আয়োজন না হওয়ায় সমাজ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। মেটিলির তুলসী কুজুর নাগেশ্বরী চা বাগানে বেড়াতে গিয়ে প্রেমে পড়েন সঙ্গীতার। সেই থেকে একসঙ্গে সংসার শুরু হয়। তাদের পাঁচ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। সামাজিক মতে তাঁদেরও বিয়ে করে ওঠা সম্ভব হয়নি। অমিত, শিবানিয়া, তুলসী, সঙ্গীতার মত আদিবাসী সমাজের বহু যুবক যুবতী অর্থাভাবে বিয়ে করতে না-পারায় সমাজ তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়নি। নিজেদের সন্তানদের বিয়ে দেওয়া কিংবা সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ব্যাপার নিয়ে সমাজে তাদের নানান সমস্যার সন্মুখিন হতে হয়। এই সমস্যার সমাধান করতে, ওদের সামাজিক স্বীকৃতি আদায়ের উদ্দেশ্যে বিয়ের আয়োজন করল বীরপাড়া সারনা এসটি ক্লাব। রবিবার বিয়ের আসর বসে শহরের সারনা ময়দানে। বিবাহ উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। |
ওই এলাকায় মোট ৯১ জোড়া পাত্রপাত্রী। তার মধ্যে দশ জোড়া পাত্রপাত্রী এই প্রথম সংসার পাতল। সমাজের নিয়ম মেনে সাহরুল গাছকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করে নিজেদের সমাজে স্বামী-স্ত্রীর স্বীকৃতি পেলেন। সাত বছরে পা দেওয়া এই গণবিবাগ উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন বীরপাড়া, তেলিপাড়া, বান্দাপানি, ফালাকাটা, বিন্নাগুড়ি, মেটেলি, নাগরাকাটা-সহ বিভিন্ন চা বাগান ও গ্রামের পাত্রপাত্রীরা। শাল গাছ সাক্ষী রেখে বিয়ে দেওয়াই নয়, বর ও কনে পক্ষের মোট ৬ জনকে পেট পুরে ভাত, ডাল, তরকারি খাওয়ানোর আয়োজন হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে চলে পুজো। বিয়ে শেষে মঞ্চে চলে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শাল ফুল কানে গুজে ধামসা, মাদলের তালে তালে চলে কোমর দুলিয়ে নাচ ও গান। বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে আসা আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোহর তিরকে বলেন, “দারুণ উদ্যোগ। এই ধরনের উদ্যোগের ফলে দরিদ্র শ্রমিকরা উপকৃত হচ্ছেন।” আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকে বলেন, “পুরোপুরি আদিবাসী সমাজের রীতি মেনে এই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে। উদ্যোক্তারা সমাজের মহৎ একটি কাজ করছেন।” কমিটির সম্পাদক বুধুয়া লাকড়া বলেন, “বাবা মায়ের বিয়ে না হলে ছেলেমেয়ের বিয়ে দিতে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। তাদের ছেলেমেয়েদের যাতে কোনও সমস্যার মুখে না পড়তে হয় তাই চাঁদা তুলে এই বিয়ের অনুষ্ঠান করছি।” |