|
|
|
|
উড়ো ফোনে নাজেহাল দমকল কেন্দ্রের কর্মীরা |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
কেউ ফোন করে বলছেন ‘বাড়িতে বেড়াল কাঁদছে, কিছু করুন’। কারও প্রশ্ন, ‘লাউ খাবেন নাকি’? কেউ ফোন করে ‘সঙ্গিনী মিলবে কি না’ জানতে চাইছেন। কেউ কেউ মধ্যরাতে ফোন করে যাত্রাপালার মতো অট্টহাসি শোনাচ্ছেন। পুলিশকে জানিয়েও সমস্যার সুরাহা হয়নি। তাই দমকলের জলপাইগুড়ি জেলা অফিসের কর্মী মণীশ সেন, কলেশনাথ চন্দ্র ও নিতাই শীলদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে। কারণ, ওই সব উড়ো ফোন মূলত গভীর রাতেই আসছে। মণীশবাবু বললেন, “টেলিফোন ধরার ডিউটি মূলত আমার। অন্যরা নানা সময়ে সাহায্য করে থাকেন। এখন ফোন এলেই আতঙ্কে থাকছি। ঠাট্টা করার একটা সীমারেখা থাকে। রাত-বিরেতে ফোন ধরতে আমরা বাধ্য। তা বলে কুপ্রস্তাব, অট্টহাসি দিনের পর দিন শোনা সম্ভব?” কর্মীদের সমস্যার কথা জানেন জলপাইগুড়ি দমকল কেন্দ্রের আধিকারিক শান্তিরঞ্জন গুহও। তিনি বলেন, “অভিযোগ করেও এখনও সমস্যার সুরাহা হয়নি। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি। তদন্তকারী অফিসাররা জানালেন, পুলিশের ১০০ নম্বরেও নাকি এমন উড়ো ফোন আসে!” জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন অবশ্য কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। পুলিশ সুপার বলেছেন, “অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দিয়েছি। এমন ঘটনা চলতে পারে না।” দমকল সূত্রের খবর, আগে টুকটাক উড়ো ফোন আসত। কয়েকটি ক্ষেত্রে নম্বর চিহ্নিত করে সতর্ক করা হয়েছে। তাতে কাজ হয়েছে। কিন্তু, মার্চ মাসের গোড়ায় ওই ধরনের উড়ো ফোন আসা বেড়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ ফোনই মোবাইল থেকে করা হচ্ছে। ফোন করার পরে মোবাইলটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ খোঁজখবর নিয়ে দেখচে যাঁর নামে ফোন নম্বরটি রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে তার কোনও অস্তিত্ব নেই। গত ৫ এপ্রিলের কথা ধরা যাক। ওই রাতে সব মিলিয়ে ২৭টি উড়ো ফোন এসেছে। দমকলের এক কর্মীর কথায়, “একজন ফোন করে ২-৩ মিনিট ধরে অট্টহাসি শোনাল। কিছুক্ষণ পরে আরেকজন ফোন করে লাউ খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাল। কেউ গালি দিল। কারও কাছ থেকে কুপ্রস্তাব মিলল। কেউ আবার মনে আগুন লেগেছে তা নেভানো যাবে কী ভাবে তা জানতে চেয়ে ঘ্যানঘ্যান করল। সঙ্গিনী মিলবে কি না সে কথাও মাঝরাতে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ সব সহ্য করা যায়?” অথচ জলপাইগুড়ির দমকল দফতরের ১০১ নম্বরে কেউ ফোন করলে সেই নম্বর ভেসে ওঠে। তা দেখে অন্য প্রান্তের গ্রাহককে চিহ্নিত করা সম্ভব। দমকল কর্মীদের প্রশ্ন, তা হলে কেন তা করা যাচ্ছে না? অন্তত কয়েকজনকে চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিলেই তো উড়ো ফোনের প্রবণতা কমে যাওয়ার কথা বলে কলেশনাথবাবুরা মনে করেন। দমকল কর্মীরা জানান, অন্তত দেড়শোটি নম্বর লিখে তা পুলিশকে জানানো হয়েছে। তার পরেও তদন্ত এগোচ্ছে না কেন তা বুঝতে পারছেন না দমকল কর্মীরা। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানা উড়ো ফোন নিয়ে তদন্ত করছে। থানার কয়েকজন অফিসার জানান, রাতদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ‘ভিআইপি ডিউটি’ করতেই সময় চলে যাচ্ছে। উড়ো ফোন নিয়ে তদন্তে বিশেষ টিম গড়ে নামতে চাইছে কোতোয়ালি থানা। সে জন্য বাড়তি পুলিশ প্রয়োজন বলে থানার অফিসাররা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। |
|
|
|
|
|