সংবাদমাধ্যমের মাঠে ঢুকতে না দেওয়ার ফতোয়া জারি নিয়ে ট্রেভর জেমস মর্গ্যান বনাম ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের মতভেদ রবিবার আরও তীব্র হল। এতটাই যে, সকালে অনুশীলনের সময় গ্যালারিতে সাংবাদিকদের দেখে ক্ষোভে-রাগে উত্তেজিত লাল-হলুদ কোচ বলে দিলেন, “গত দু’সপ্তাহে আমার অজান্তেই এমন অনেক কিছু ঘটছে যা মানতে পারছি না। আমার কথা শোনা তো হচ্ছেই না। মেল করলেও তার উত্তর পাচ্ছি না।”
মর্গ্যানের এই মন্তব্যের জেরে ময়দান জুড়ে নানা জল্পনা শুরু হয়ে যায়। তা হলে কি মর্গ্যান চুক্তি ভেঙে ক্লাব ছাড়ার ইঙ্গিত দিতে শুরু করলেন? সন্ধ্যায় ক্লাব তাঁবুতে অন্য কর্তাদের সঙ্গে সভা করে বাড়ি ফেরার পথে ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য অবশ্য সব গুঞ্জন উড়িয়ে দেন। বলে দেন, “মর্গ্যানের সঙ্গে তো আমাদের চুক্তি আছে। সোমবার ম্যাচের পর কোচের সঙ্গে আলোচনায় বসব। কোনও সমস্যা নেই।” |
টোলগে-গুরবিন্দর মারপিটের ছবি ও খবর প্রকাশিত হলে সাংবাদিকদের মাঠে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন মর্গ্যান। কিন্তু পুরো ঘটনাই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে যায়। সেই ঘটনার পর পাঁচ দিন হয়ে গিয়েছে ফতোয়া জারি করে সংবাদমাধ্যমের মাঠে ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছেন ব্রিটিশ কোচ। মর্গ্যান নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় বিব্রত ক্লাব কর্তাদের একাংশ চাইছেন ব্যাপারটা দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে। তারই ফলে, রবিবার সকালেই খুলে দেওয়া হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর মূল ফটক। সাংবাদিকদের ভিতরে ঢুকতেও বাধা দেননি অনুশীলনের সময় উপস্থিত কোনও কর্তাই।
গ্যালারিতে ক্যামেরা তাক করে সংবাদমাধ্যম বসে আছে দেখতে পেয়েই ফুঁসে ওঠেন মর্গ্যান। তিনি গোলকিপার কোচ অতনু ভট্টাচার্যকে সেখানে পাঠান টোলগে-গুরবিন্দর-মেহতাবদের অনুশীলন ক্যামেরায় তোলা হচ্ছে কি না দেখতে। কলকাতার ফুটবল নিয়ে ডকুমেন্টরি তুলতে আসা একটি ফরাসি টিভির মহিলা সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান অবশ্য সে সময় ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। মাঠের ভিতরই ঘোরাফেরা করছিলেন ওঁরা। অনুশীলন শেষ হওয়ার পরই আসল ঝামেলা শুরু হয়। সহকারী কোচ কাম ফুটবলার অ্যালভিটো ডি’কুনহাকে ডেকে নিয়ে মর্গ্যান জানতে চান, তাঁর বারণ সত্ত্বেও কেন সাংবাদিকদের মাঠে ঢুকতে দেওয়া হল? অ্যালভিটো বিষয়টি জানতে যান মাঠের পাশে বসে থাকা ম্যানেজার স্বপন বলের কাছে। তিন জনকেই দেখা যায় বেশ খানিকক্ষণ কথা বলতে। কিছুক্ষণ পরেই হনহন করে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান মর্গ্যান। এতটাই রেগে যান তিনি যে বলে দেন, “আমি কিছু বলব না। আমার কিছু বলার নেই।” তার পিছনে ছুটতে থাকেন সাংবাদিকরা। ইস্টবেঙ্গল কোচের কাছে জানতে চাওয়া হয় সোমবারের ভিভা কেরল ম্যাচ নিয়ে তা হলে কে কথা বলবেন? মর্গ্যান বলেন, “কর্তারা বলবেন। চোট-আঘাত যা কিছু সবই ওরা বলবেন। আমি কিছু বলব না। আমাকে না জানিয়েই তো সব হচ্ছে।” কিছুক্ষণ পরেই অ্যালভিটোও বলেন, “গেট খুলে দেওয়া হবে সেটা কোচকে জানানো উচিত ছিল ক্লাবের। কোচ প্রচণ্ড রেগে গিয়েছেন।”
তাঁবুতে ঢুকেও অস্থায়ী অধিনায়ক সঞ্জু প্রধান-সহ সব ফুটবলারকেই কথা বলতে বারণ করে দেন মর্গ্যান। দ্রুত পোশাক বদল করে বেরোনোর পর সাংবাদিকরা আবার মর্গ্যানের সঙ্গে কথা বলতে যান। লাল-হলুদ কোচ বলেন, “আমি হতাশ। পরপর দুটো মেল করেছি ক্লাব সচিবকে। কোনও উত্তরই পাইনি। শনিবার আমি মেল করে সচিবকে জানিয়েছিলাম অনুশীলন শুরুর সময় ৪৫ মিনিট সাংবাদিকদের আমি ঢুকতে দেব। আপনারা সবাইকে জানিয়ে দিন। কোনও উত্তরই পাইনি। আজও তো দেখলাম মেহতাব যখন একটা ট্যাকলের পর মাঠে পড়ে গেল আপনারা ছবি তুলছেন?” কোচ যখন ক্ষোভে ফুঁসছেন তখন সেখানে হাজির হন টোলগে ওজবে। মজা করে হাসতে হাসতে টোলগেকে বলতে শোনা যায়, “কোচ এসব বলছে বলে আপনারা আবার লিখে দেবেন না উনি মোহনবাগানে যাচ্ছেন!” এরপরই টোলগেকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে উঠে বাড়ি চলে যান মর্গ্যান। |