আইপিএলে এই প্রথম হারিয়ে এলেন ধোনিকে। শনিবার খানিক্ষণ সহারার পার্টিতে কাটিয়ে রাত দু’টো নাগাদ ম্যাচের রিপিট টেলিকাস্ট দেখতে দেখতে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তখনও ঘাড়ের যন্ত্রণায় রীতিমত কাহিল দেখাচ্ছিল তাঁকে।
প্রশ্ন: ধোনিকে হারিয়ে নিশ্চয়ই ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি ভীষণ তৃপ্ত?
সৌরভ: আরে, ধোনিকে হারাতে যাব কেন? আমরা চেন্নাইকে হারিয়েছি। পুণে ওয়ারিয়র্স হারিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংসকে।
প্র: কী বলছেন? একটা ব্যক্তিগত তৃপ্তির জায়গা থাকবে না?
সৌরভ: না, না। ধোনির সঙ্গে আমার কোনও ব্যক্তিগত ডুয়েল নেই। একদম মন থেকে বলছি। আমি ও ভাবে ভাবি না। আমি দেখি টিম হিসেবে আমরা কাকে কাকে মারতে পারলাম। মুম্বইকে মুম্বইয়ে হারিয়েছি। এ বার চেন্নাইকে হারালাম আমাদের মাঠে। চেন্নাই হেভিওয়েট টিম। চেন্নাইকে হারানোটা তৃপ্তির যেহেতু ওরা ভাল টিম। ওদের টিমের ক্যাপ্টেনের নাম ধোনি বলে নয়।
প্র: ভক্তদের মধ্যে কিন্তু একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ ব্যাপার আছে। দাদা বনাম ধোনি মানে যেন পানিপথের যুদ্ধ!
সৌরভ: কিন্তু সেটার কারণ কী?
প্র: কারণ সৌরভ-ভক্তরা বিশ্বাস করে আপনার ওয়ান ডে কেরিয়ার ছেঁটে ফেলার পিছনে ধোনি।
সৌরভ: লোকে ভুল জানে। ওটা মোটেও ধোনি নয়। অন্য লোক।
প্র: জেনেবুঝে বলছেন?
সৌরভ: হ্যাঁ। জানি বলেই বলছি।
প্র: কে তিনি?
সৌরভ: নাম করতে চাই না।
প্র: কিন্তু দুই সেরা ক্যাপ্টেনের মধ্যে অহরহ তুলনা টানা হচ্ছে। একটা টেক্কা দেওয়ার ব্যাপার থাকবে না?
সৌরভ: টেক্কা দেওয়ার ব্যাপার সব ম্যাচেই থাকে। শুধু চেন্নাই আর ধোনি বলে থাকবে, অন্য গুলোয় থাকবে না, এমন নয়।
প্র: সৌরভ-ভক্তরা খুব খুশি কারণ, এই প্রথম ক্যাপ্টেন হিসেবে দাদা ধোনিকে বধ করলেন। কেকেআর ক্যাপ্টেন থাকার সময় যেটা হয়নি।
সৌরভ: তাই কি? দক্ষিণ আফ্রিকায় আইপিএলে তো আমরা চেন্নাইকে হারিয়েছিলাম। ও হ্যাঁ, সে বার তো আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম না।
প্র: আচ্ছা, ধরে নিন সৌরভ বনাম ধোনি নেতৃত্বের বিশ্লেষণ হচ্ছে। আপনি বিচারকের টেবিলে। কোন জিনিসটাকে সবথেকে গুরুত্ব দেবেন?
সৌরভ: বিদেশে টেস্ট জয়ের হিসেবকে।
প্র: প্রথম দু’টো ম্যাচে বোলিং জিতিয়েছিল। এটা ব্যাটিং জেতানোয় নিশ্চয়ই টিমের ভারসাম্য বাড়ল?
সৌরভ: হ্যাঁ। তবে ব্যাটিংটা আরও ঠিকঠাক করতে হবে। আমাকে আর উথাপ্পাকে রান করতে হবে।
প্র: আপনার রান হচ্ছে না কেন?
সৌরভ: প্রত্যেক দিন সেট হয়ে গিয়ে আউট হচ্ছি।
প্র: দ্বিতীয় রানটা নিতে গেলেনই বা কেন? ঝুঁকি না নিলেও তো হত।
সৌরভ: পরে তাই মনে হচ্ছিল। আমি আসলে জানতাম না জাডেজা এই জিনিসটা করে। পরে শুনলাম ও নাকি ইচ্ছে করে মিসফিল্ডের ভান করে রান আউট করার জন্য। আগেও অনেক করেছে। আমি মিসফিল্ড ভেবে দৌড়লাম। ভাবলাম রানটা হয়ে যাবে।
প্র: উথাপ্পাকে ওপেনে পাঠানোর পিছনে কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছিল?
সৌরভ: অশ্বিন ওদের বোলিং ওপেন করে তো। অফস্পিনার। আমি গেলে দু’টো বাঁ হাতি হয়ে যেত। তাই উথাপ্পাকে পাঠিয়েছিলাম। দেখলেন না, উথাপ্পা গিয়েছে দেখে অশ্বিনকে শুরুতে আনতে পারল না!
প্র: জেসি রাইডার রান করে দিলেন। স্মিথ দারুণ খেলে যাচ্ছেন রোজ। বিদেশি প্লেয়ারদের নিয়ে আপনি নিশ্চয়ই খুশি?
সৌরভ: হ্যাঁ, খুশি। তবে আমাদের আর একটা ভাল বিদেশি প্লেয়ার আছে। ক্যালাম ফার্গুসন। ওকে খেলাতে পারছি না।
প্র: স্টিভ স্মিথকে কী দেখে আপনারা নিতে চেয়েছিলেন? নিলামে তো কেউ স্মিথকে কেনেইনি!
সৌরভ: বিগ ব্যাশ-টা দেখেছিলাম টিভি-তে। অস্ট্রেলিয়ার যেটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। স্মিথের টিম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সিডনি সিক্সার্স। স্মিথ বেশ ভাল খেলেছিল। ওর মধ্যে একটা ছটফটানি আছে। যেটা টিমের স্ফূর্তি বাড়াচ্ছে।
প্র: মার্লন স্যামুয়েলসের ব্যাটিং কি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে?
সৌরভ (তখনও জানতেন না আম্পায়াররা স্যামুয়েলসের অ্যাকশন নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন): মার্লনকে বলেছি, তুই চালিয়ে খেল। ডিফেন্স করাটা তোর খেলা নয়। কিন্তু ওকে আমাদের কাজে লাগবে। বলটা করে দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে ঘণ্টায় ১২৫-১২৮ কিলোমিটার গতিতে যাচ্ছে এক-একটা বল। ওকে খেলা কঠিন আছে।
প্র: স্যামুয়েলস ব্যাটে আর নেহরা বল হাতে জিতেও অধিনায়ককে আতঙ্কে রাখছে নিশ্চয়ই?
সৌরভ: না, না স্যামুয়েলস রান করবে। আর নেহরা একটা ওভারই মার খেয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে সেটা হতেই পারে। আমার টিমের বোলিং একদম সেট আছে।
প্র: দুপুরে রটে গিয়েছিল ঘাড়ের যন্ত্রণায় আপনি খেলতেই পারবেন না।
সৌরভ: ঘাড়ে ব্যথা নিয়েই তো খেলে যাচ্ছি। আট-দশ দিন হয়ে গেল। ব্যথাটা যাচ্ছেই না। যার জন্য তো বোলিং করতে পারছি না।
প্র: শুনলাম ম্যাচটা খেললেন আকুপাংচার করে!
সৌরভ: হ্যাঁ, সকালে করতে হয়েছিল। না হলে মুস্কিল ছিল খেলা। এই ম্যাচটা আমি মিস করতে চাইনি। |