গম্ভীর এক হাত নিলেন ব্যাটসম্যানদের
‘ডুবছে রে’-র ব্যঙ্গ শুনে ইডেন ছাড়লেন কিং খান
বিড়ম্বনা! এমনই বিড়ম্বনা যে প্রকাশ্যে প্রিয় সিগারেটে সুখটান দেওয়ার উপায় নেই। কে ‘কেস’ দিয়ে দেবে, কে জানে!
নিউ ইয়র্ক বিমানবন্দরে টানা দু’ঘণ্টা অবাঞ্ছিত হেনস্থা সয়ে সোজা উড়ে আসা। সকালে ঝটিতি সফরে সেই মেদিনীপুরে ফিল্ম সিটির উদ্বোধন। সেখান থেকে সোজা ইডেনে। সাদা শার্ট, অলিভ রঙের জ্যাকেট, নেভি ব্লু ফেডেড জিন্স। বলিউডের বাদশাকে ইডেন দেখল বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বক্সের নিশ্চিন্ত আশ্রয় নয়, বি ব্লকে বাঁ দিকের রেলিং ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে। মুখে রোদ পড়ছে, তবুও। স্রেফ প্রিয় যোদ্ধাদের জয় দেখতে ছুটে আসা। নাইটরা যখন ৪৮-২, তখনও হাসছিলেন সিগারেটহীন শাহরুখ। সেই হাত নাড়া। সেই মাথা নীচু করে অভিবাদন।
ঘণ্টা খানেক পরে ফিল্মের চিত্রনাট্যে আমূল রদবদল। ভোল পাল্টে নাইটরা তখন গভীরতর গাড্ডায়। রাত আটটা পাঁচ। ইডেনের বাইরে বুম হাতে অপেক্ষায় গোটা দশেক সাংবাদিক। কখন বেরোবেন? প্রতি বারই তো বেরোনোর সময় দু’টো-একটা কথা বলে যান। হেরে গেলেও যে নিয়ম সাধারণত পাল্টায় না বাদশার। এ বারে পাল্টাল। ঠিক আটটা দশে ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ ইডেনের গেটে তিনি। চোখে-মুখে শ্রাদ্ধবাসরের নিস্তব্ধতা। কথা বলা দূরে থাক, সাংবাদিকদের হইহল্লা শুনে ফিরে তাকালেন না পর্যন্ত। উঠে পড়লেন গাড়িতে। উঠে গেল কালো কাঁচ। ওই ইডেন থেকে নিষ্ক্রমণ বাজিগরের।
এক দিকে, বিষণ্ণ নাইট মালিক। তো অন্য দিকে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিস্ফোরণের অপেক্ষায় নাইট অধিনায়ক। “কে বলল, উইকেট খারাপ ছিল? খুব ভাল উইকেট। ছ’ওভারে ৪৮-২, এর পরও যদি ১৩৫ তাড়া না করতে পারি, তা হলে ম্যাচ জেতার কোনও অধিকারই নেই আমাদের,” আক্ষেপের সঙ্গে গম্ভীরের গলায় এক রাশ বিরক্তিও। সঙ্গে ইউসুফ পাঠানকে একহাত, “ও মা্যচ উইনার। দুটো ম্যাচ তো জেতাবে। সে জন্যই টিমে। এ ভাবে আউট হলে তো হবে না। দরকারে কড়া হতেই হবে। কেউ অপরিহার্য নয়।”
টিমমেটকে নিয়ে এ রকম সরাসরি ক্ষোভ উগরে দেওয়ার নজির গম্ভীরের কেরিয়ারে বড় একটা নেই। জেতা ম্যাচ এ ভাবে উপহার দেওয়া মানতে পারছেন না। মানতে পারছেন না, জোড়া জয়ের হ্যাংওভার কাটতে না কাটতেই এমন হোঁচট। নাইটদের ঘোড়া থমকে গেল কিংসদের রাজদরবারে। হ্যাটট্রিকের হিস্টিরিয়ার আশায় থাকা রবিবারের ইডেন নিশ্চুপ সাক্ষী রইল নিজেদের মহল্লায় তিনে তিনের স্বপ্নকে কী ভাবে কবর দিয়ে গেলেন পীযূষ চাওলারা।
টি-টোয়েন্টি বিনোদন যজ্ঞে যা যা লাগে, সবই তো রবিবার থরে থরে সাজানো ছিল ইডেনে। শুধু ইচ্ছে আর সুবিধামতো তুলে নেওয়ার অপেক্ষা। ডিজে-র বাজানো ‘ছম্মক ছল্লো’, ‘উ-লা-লা’ এমনকী ম্যাচের নাটকীয় শেষ ওভারের আগে ‘চিকনি চামেলি’ও ছিল। ছিল চিয়ারকন্যাদের উত্তাপ। ছিলেন আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল। তাঁর হাসি মুখে পরিতৃপ্তির ঢেকুর, “টিআরপি আর পড়েছে কোথায়? সব স্টেডিয়ামই তো হাউসফুল। আজ যা দেখছি, ৫ মে-তো মনে হচ্ছে অভাবনীয় ম্যাচ হবে।”
৫ মে-র টিআরপি নিয়ে রাজীব শুক্ল-র উদ্ধৃতি নিষ্প্রয়োজন। শাহরুখের মেগাহিট ছবির মেগাহিট বহুচর্চিত ডায়লগও তো সবার জানা। ‘হার কর জিতনেওয়ালে কো বাজিগর কহতে হ্যায়।’ এই ডায়লগ বাইশ গজে টিকবে না। হেরেও জেতার কোনও ব্যাপারস্যাপার এখানে নেই। জিতলে জিতেছ। হারলে হেরেছ। না হলে এই রাতবিরেতে কেন ঘরফেরত জনতা অভিশাপ দিচ্ছে শাহরুখকে? কেন বলছে, “দাদার অভিশাপ তাড়া করছে ওকে।”
ঘড়ির কাঁটা সবে নয় পেরোল। শো ভেঙেছে। সন্ধে ছাড়িয়ে রাতের দিকে গড়িয়ে যাওয়া সার-সার ঘরমুখী কালো মাথা। ভিড়ে মিশে যান কয়েক মিনিট। হাঁটুন পায়ে পায়ে। স্পষ্ট শুনবেন, ব্যঙ্গ মাখানো কথা চালাচালি। কোথাও ‘কেকেআর’ থেকে ‘কেকেহার’। কোথাও ‘এ বার আবার ডুবছে রে!’




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.