কেকেআর আছে কেকেহার-এই!
চার বছরের পুরনো গল্পে কোনও বদল নেই। জার্সির রঙ পাল্টানো, ‘দাদা’-বিদায়, নতুন স্লোগান, টিমের খোলনলচে বদলে দেওয়াপরিবর্তনের হাওয়ায় কিছুই তো বাদ দেননি নাইট মালিক শাহরুখ খান। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ‘কাহানি’ তবু ঘুরেফিরে সেই এক। করব। লড়বও। কিন্তু জিতব না। জিততে জিততে হারব।
জেতা ম্যাচ কী ভাবে হারতে হয়, আইপিএলে তার নিখুঁত উদাহরণ গত কয়েক বছরে বারবারই পেশ করেছে নাইটরা। রবিবার ইডেনেও সেই এক অ্যাকশন রিপ্লে। সামনে ১৩৫-এর টার্গেট, সহজ উইকেট। সেখানে পীযূষ-ভার্গবের স্পিনের ফাঁসে দমবন্ধ হয়ে শেষ ওভারে নাইটদের দরকার ৯। হাতে তখনও চার উইকেট। বোলার অনামী হরপ্রীত সিংহ। বৈশাখী ইডেনের হাজার ষাটেক দর্শক তখনও একটা চার বা ছয়ের আশায়। শেষ বলে দরকার চার। হিরো হওয়ার যাবতীয় সম্ভাবনা-সহ ক্রিজে দেবব্রত দাস। যিনি ৭৯-৫-এ নেমে ম্যাচ প্রায় বের করে নিচ্ছিলেন। শুধু শেষ বলে পারেননি একটা চার বা ছয় মারতে। শনিবার রাতে সৌরভের এক জন স্টিভ স্মিথ ছিল, রবিবার ইডেনে গম্ভীরের ছিল না। |
অথচ টানা তিন জয়ের আবহ তৈরিই ছিল। হোম ম্যাচ, অনেক পিছিয়ে থাকা প্রতিপক্ষ, ফর্মে থাকা টিম। দুটো পয়েন্ট আসবে ধরে নিয়েই আটত্রিশ ডিগ্রি গরমে দুপুর-দুপুর মাঠে চলে এসেছিল কলকাতা। বিশেষ করে শনিবারের ‘পুণে থ্রিলার’-এর পর কেকেআর ভক্তরাও একটা রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের প্রত্যাশায় ছিলেন। থ্রিলার জুটল, কিন্তু বিয়োগান্ত। শেষ ওভারের নাটক ছিল। নাটক শেষে হাসিমুখে ঘরে ফেরা ছিল না।
থাকবে কী ভাবে? কেন পরের পর উইকেট পড়ছে দেখেও অদ্ভুতুড়ে সুইপ শট খেলতে যাবেন ইউসুফ পাঠান? পেশাদারি দুনিয়ায় তাঁর মতো সিনিয়রের কাছ থেকে এমন অবিবেচক শট ক্ষমাহীন অপরাধ। এর পর যদি মোহালিতে তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়, তাঁর নিজেরই কিছু বলার থাকবে না। ছাড়া যাবে না গত দিনের নায়ক সাকিব আল হাসানকেও। বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার, একটা ম্যাচ জিতিয়েই কেন পরের ম্যাচে হোঁচট? পীযূষ চাওলার চার ওভারের কোটা ফুরিয়ে আসছে দেখেও দিশাহীন সুইপ মেরে ডাগআউটে। আর এক জন রায়ান টেন দুশখাতে। স্ট্রোকের ফুলঝুরি না ছোটাতে পারেন, স্ট্রাইক তো ঠিকঠাক রোটেট করবেন। উল্টো দিকে দেবব্রত চালাচ্ছেন দেখেও কেন ১৯ নম্বর ওভারের শেষ বলে সিঙ্গলটা নিতে গেলেন? উত্তরগুলো কিন্তু নাইট সমর্থকদের পাওনা রইল।
ম্যাচের মাঝে ভুল, ম্যাচের শুরুতেও ভুল। কেউ জানে না টস জিতে গম্ভীর কেন ফিল্ডিং নিয়েছিলেন। ইডেনের এ বারের উইকেট স্লো, সব ম্যাচই হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাল স্পিনার যার, ম্যাচ তার। স্পিনারদের কাজটা নাইটরা ভালই করেছিল। শুরু গিলক্রিস্টের পতন দিয়ে। দিনের তৃতীয় ওভারে সুনীল নারিনকে চালাতে গিয়ে আকাশে লোপ্পা, মনোজ তিওয়ারির তালুবন্দি পঞ্জাব অধিনায়ক। এর পরে অফস্পিনারের দুসরায় নড়ে গেল শন মার্শের মিডল স্টাম্প। আইপিএল ফাইভে নাইটদের সেরা লগ্নি ধরা হচ্ছে নারিনকে। এ দিন স্বপ্নের মতো বোলিং গড়। ৪-০-১৯-৫। হোম ম্যাচে চোখ বুজে প্রথম এগারোয় তাঁর নাম এ বার থেকে লিখতে হবে বেলিসকে। বালাজির বদলি উনাদকট রবিবার ব্যর্থ। তাঁর জায়গায় সামি আহমেদ নয় কেন, সেই ফিসফাস ইডেন জুড়ে থাকল। তিন ওভারে ৩২ দিয়ে শেষের দিকে কেকেআরের কাজটা আরও কঠিন করে দিলেন উনাদকট। |
তা-ও এই উইকেটে ১৩৪ তাড়া করা অসাধ্য কিছু ছিল না। দু’দিন আগেই তো দ্রাবিড়ের রাজস্থানের করা ১৩১ তাড়া করেছিল নাইট ব্যাটিং। রবিবার কিন্তু অন্য ছবি। দ্বিতীয় ওভারেই ভার্গব ভাটের বলে ডোগরার বাঁ হাতে নেওয়া অবিশ্বাস্য ক্যাচে ডাগআউটে ফিরলেন কালিস। এখন পর্যন্ত তিরিশ গজি বৃত্তে আইপিএল ফাইভের সেরা ক্যাচ। জনৈক পঞ্জাব সমর্থক টুইটারে যার সঙ্গে তুলনা টেনে ফেলেছেন রিয়াল মাদ্রিদ গোলকিপার ইকার কাসিয়াসের দুরন্ত সেভের। মনোজ-বিসলা জুটি দু’পয়েন্টের দিকে কিছুটা এগিয়েও পুরো রাস্তা যাওয়ার আগেই হোঁচট। পাওয়ার প্লে শেষে কেকেআর ৪৮-২, পুরো মিডল অর্ডার তখনও হাতে। কিন্তু কোথায় কী, এরপর থেকেই ক্রমশ নাইটদের উপর চেপে বসলেন পীযূষ চাওলা। সঙ্গী বাঁ-হাতি ভার্গব। যিনি কালিস ছাড়াও তুলে নিয়েছেন ফর্মে থাকা মনোজকে। ভার্গবের সঙ্গে মিলে ভারতীয় দলে কল্কে না পাওয়া পীযূষ থামিয়ে দিলেন নাইটদের জয়ের হ্যাটট্রিক। আর শেষ ওভারটায় মাস্টারস্ট্রোক হরমীত সিংহ। যিনি শনিবার সুপার কিংসের ইয়ো মহেশের মতো প্রথম বলটা লেগে ফুলটস করেননি। স্রেফ স্লোয়ার দিয়ে বাজিমাত।
পাঁচ ম্যাচে তিন হার, তার মধ্যে দুটো হার হোম ম্যাচে। যা চলছে তাতে ‘নিউ ডন, নিউ নাইটস’ স্লোগানটা না পালটে হয়ে যায় ‘ওল্ড নাইটস, সেম ওল্ড স্টোরি।’
|