সম্পাদকীয় ২...
সন্ধিক্ষণ
৯৪৮ সালে ব্রিটিশ অধীনতা হইতে মুক্তি পাওয়ার পর হইতে এ যাবৎ কোনও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সে দেশে যান নাই। তাই ডেভিড ক্যামেরন যখন মায়ানমার সফরে যান, তাহা হইয়া উঠে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তাহার আগে অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন এবং ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশ মন্ত্রীরা ঘুরিয়া গিয়াছেন। আর এ সবই সম্ভব হইয়াছে মায়ানমারের নূতন প্রেসিডেন্ট থাইন সেইন-এর গণতান্ত্রিক সংস্কার রূপায়ণের প্রক্রিয়ায়। প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিয়াছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিয়াছেন, বিরোধী নেত্রী এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জাতীয় সমাবেশবিন্দু আউং সান সু চি ও তাঁহার ন্যাশনাল লিগ ফর ডিমক্র্যাসি-র উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করিয়া তাঁহাদের সসম্মান রাজনৈতিক পুনর্বাসন দিয়াছেন এবং আত্মশাসনের দাবিতে সংগ্রামরত জনজাতীয় গোষ্ঠীগুলির সহিত শান্তি-আলোচনার প্রক্রিয়া সূচিত করিয়াছেন। ক্যামেরনের সফর এই প্রেক্ষিতেই তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি মায়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখার জন্য সওয়াল করিয়াছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে তাহার আগ্রহের কথা জানাইয়াছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চাহেন, এই আগ্রহ বাস্তবে রূপ পরিগ্রহ করুক। লক্ষণীয়, তিনি নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার কথা বলিতেছেন, পুরোপুরি প্রত্যাহার করার কথা নয়। এ ব্যাপারে সু চি-ও তাঁহার সহিত একমত। উভয়েরই শঙ্কা, গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হইলেও নেপথ্যের ফৌজি জেনারেল ও আমলাতন্ত্রের চাপে ভবিষ্যতে তাহা বন্ধও হইয়া যাইতে পারে, মায়ানমার ফিরিতে পারে স্বৈরতন্ত্রে। তাই মাথার উপর নিষেধাজ্ঞার খাঁড়াটি ঝুলাইয়া রাখা দরকার, যাহাতে সংস্কারের পথ হইতে সরিয়া আসিলেই আবার তাহা নামাইয়া আনা যায়। সংস্কারের গতি অনেক ত্বরান্বিত হওয়া দরকার, যাহাতে স্বৈরাচারের প্রত্যাবর্তনের পথ বন্ধ হইয়া যায়।
আর্থিক নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখিবার প্রস্তাব দিলেও ক্যামেরন সমরাস্ত্র বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা রাখিবার পক্ষপাতী। অন্যথায় জনজাতীয় গেরিলাদের সহিত গৃহযুদ্ধে নিরত ফৌজি শাসকদের হাতে ওই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নির্যাতিত হওয়ার শঙ্কা বাড়ে। পাকিস্তানে যেমন পাক সেনাবাহিনীকে দেওয়া মার্কিন সমরাস্ত্র বালুচ ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের জনজাতীয়দের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হইয়াছে কিংবা হাত ঘুরিয়া আফগানিস্তানের তালিবান যোদ্ধাদের কাছে পৌঁছাইয়াছে। মায়ানমারের উত্তর প্রান্তে সংঘর্ষরত কাচিন গেরিলাদের দমনে সরকার যে নৃশংসতা দেখায়, উন্নত ইউরোপীয়-মার্কিন যুদ্ধাস্ত্র হাতে পাইলে তাহা বহু গুণ বৃদ্ধি পাইতে বাধ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাই অস্ত্র সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে অসম্মত। তবে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হইলেই মায়ানমারে বিনিয়োগ ও বিকাশের জোয়ার আসিবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর্থিক সাহায্য ও লগ্নির হাত প্রসারিত করিলে মার্কিন লগ্নিকারীরাও ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার স্বার্থেই বিনিয়োগের পশরা লইয়া ছুটিয়া আসিবেন। মায়ানমার সন্ধিক্ষণে উপস্থিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.