গৌতম ভদ্রের নিবন্ধ ‘হাতে পাঁজি মঙ্গলবার’ রবিবাসরীয় (৮-৪) অতি সুখপাঠ্য ও তথ্যসমৃদ্ধ। পাঁজি শুধু পড়ার নয়, ‘দৃশ্যযোগ’ও বটে। তাই পাঁজির ছবি প্রসঙ্গে দু’একটি কথা।
শ্রীভদ্র লিখেছেন রাশিচক্র লগ্ন ছক থেকে নানা দেবদেবীর ছবি, ১৮৪০ থেকেই বাংলা পাঁজিতে প্রতিমূর্তির সূচি থাকত। তবে তারও অনেক আগে জন্মলগ্ন থেকেই বাংলা পাঁজি সচিত্র ছিল। প্রথম ছাপা পাঁজি প্রকাশিত হয় ১৮১৯ সালে। প্রকাশক স্যান্ডার্স কোম্পানি। এতে ছিল বিভিন্ন রাশিচক্রের ছবি, নানা ছক। ১৮৩৫-’৩৬ সালে কলকাতায় ছাপা ‘নতুন পঞ্জিকা’-তেও একটি বড় রাশিচক্রের ছবি ছিল। ১৮৩৬-’৩৭ সালের ওই পঞ্জিকাতেই ছিল লক্ষ্মী, দুর্গা ও মহাদেবের ছবি। (দ্র: Woodcut prints of Nineteenth Century Calcutta; Ed. Asit Paul; Seagull Books; 1983; pp 52, 79; 81)। এ প্রসঙ্গে বলি, পাঁজি অলঙ্করণের পুরোনো ছবি এখনও সবটা হারিয়ে যায়নি। পি এম বাগচী ডাইরেক্টরি পঞ্জিকায় পুরোনো কাঠের ব্লকে কাঠখোদাই ধরনের ছবি আজও ছাপা হয়ে চলেছে। যেমন, গঙ্গাপুজো, নববর্ষের হালখাতা, কার্তিকপুজো, রথযাত্রা বড়দিন ইত্যাদি। গঙ্গাপুজোর ছবি এখনও আছে, উবে যায়নি যা শ্রীভদ্র বলেছেন। গন্ধেশ্বরী, রাধাষ্টমী, অরন্ধন এ সব সাবেকি পুজো-পার্বণের ছবিও ছাপা হচ্ছে। এই সব ছবির এক বিস্তৃত ও বিষয়ভিত্তিক সংগ্রহ আমার কাছে রয়েছে। তাই এই তথ্য উল্লেখ করলাম। (দ্র: পি এম বাগচী ডাইরেক্টরি, বেণীমাধব শীলের ডাইরেক্টরি ও নতুন পূর্ণচন্দ্র ডাইরেক্টরি ও পঞ্জিকা ১৪০৩১৪১০)। |
সময়ের সঙ্গে ছবির বহিরঙ্গ তো বদলাবেই। এখন আধুনিক মুদ্রণ-সৌকর্যে উজ্জ্বল রঙিন ছবির সম্ভার এই ‘দৃশ্যযোগ্য’ ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যা প্রমাণ করে, অলঙ্করণের এই ঐতিহ্য ও ধারা শেষ হয়ে যায়নি। এখনও বয়ে চলেছে। এটি আনন্দের কথা। তাই কালের নিয়মে যা হারিয়ে গেছে, তার জন্য দুঃখ করে লাভ নেই।
চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়, ৬৮/১ এম সি গার্ডেন রোড, কলকাতা-৩০
|
আমেরিকার নাশভিল থেকে দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় ‘এ মণিপুর কিন্তু সে মণিপুর নয়’ (২১-৩) শিরোনামে একটি পত্র লিখেছেন। ৭ মার্চ রাজীবাক্ষ রক্ষিত ও ২১ মার্চ শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের সংবাদ ও পত্রের প্রেক্ষিতে এই চিঠি।
মণিপুরের অবস্থান: শুভঙ্করবাবুর বক্তব্য সঠিক। তবে তিনি যে-স্থানটির নাম করেছেন এ বিষয়ে প্রমাণ কী? মহাভারতে উল্লেখ আছে, “অনন্তর সমভিব্যাহারী ব্রাহ্মণেরা কলিঙ্গ দেশের দ্বারদেশ পর্যন্ত আসিয়া তাঁহার অনুমতি গ্রহণপূর্বক প্রত্যাবৃত হইলেন। মহাবীর ধনঞ্জয় অত্যল্পমাত্র সহায়সম্পন্ন হইয়া সাগরাভিমুখে যাত্রা করিলেন। তিনি কলিঙ্গ দেশ ও তত্রত্য পুণ্যতীর্থ সকল অতিক্রম করিয়া সুরম্য হর্ম্ম্যাবলী অবলোকন করিতে করিতে চলিলেন। মহাবাহু অর্জুন তাপসগণ-পরিশোভিত মহেন্দ্র পর্বত নিরীক্ষণ করিয়া মণিপুরে গমন করিলেন।” (কালীপ্রসন্ন সিংহ অনুবাদিত, প্রথম খণ্ড, পৃ: ২১৩) অতএব চিত্রাঙ্গদার দেশ হিমালয়ের কোলে মণিপুর নয়।
পাণ্ডব-বনবাস: শুভঙ্করবাবু লিখেছেন, “বরং অর্জুনরা যে ওড়িশা অন্ধ্রপ্রদেশ হয়ে মধ্যপ্রদেশ চলে গিয়েছিলেন”...এই বাক্যে তিনি পঞ্চপাণ্ডব-সহ গমন বুঝিয়ে থাকলে, তা আর-এক ভুল। পাঁচ ভাই নিয়ম করেছিলেন, দ্রৌপদীর সঙ্গে নিরালায় থাকা কোনও ভাইকে যে-ভাই দেখবে, তাকে বনে যেতে হবে। অর্জুন ব্রাহ্মণের গোধন হরণের কালে, ব্রাহ্মণের উপকারের জন্য অস্ত্রগৃহে যুধিষ্ঠির-দ্রৌপদীকে দেখে ফেলেন। প্রতিজ্ঞা পূরণের জন্য তিনি একাই বনগমন করেন। সঙ্গে অপর কোনও পাণ্ডব ছিলেন না।
পাণ্ডবদের বনবাস, অজ্ঞাতবাসকালীন বিচরণপথ: পাণ্ডবেরা ‘ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশ হয়ে মধ্যপ্রদেশ চলে গিয়েছিল’ শুভঙ্করবাবুর এ তথ্য ঠিক নয়। পাণ্ডবরা নিম্নলিখিত স্থানগুলি ঘুরেছিলেন: ১) দ্বৈতবন (উত্তরপ্রদেশের সাহারনপুর জেলার দেওবন্দ)। ২) পাঞ্চাল (হরিদ্বার থেকে চম্বল পর্যন্ত এলাকা)। ৩) হস্তিনাপুর (দিল্লির পূর্ব দিকে, গঙ্গার কাছাকাছি)। ৪ নৈমিষারণ্য (সীতাপুর, উত্তরপ্রদেশ)। ৫ কুরুক্ষেত্র (হরিয়ানায়)। ৬ কেকয় (বিপাশা ও শতদ্রুর মধ্যবর্তী অঞ্চল)। ৭ গান্ধার (কাবুল নদী ও সিন্ধু নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল)। ৮) বৎস (প্রয়াগের পশ্চিমে)। ৯) খাণ্ডবদহ (ইন্দ্রপ্রস্থের কাছে)। ১০) বারণাবত (মিরাটের কাছে)। ১১) মৎস্যদেশ (অজ্ঞাতবাস কালে, বর্তমান রাজস্থানে)। ১২) বদরিকা আশ্রম (কাশ্মীরের শ্রীনগর। তবে এ বিষয়ে মতভেদ আছে। কেদারনাথের পথেও একটি শ্রীনগর পড়ে) পূর্ব বা দক্ষিণ ভারত বিচরণপথে পড়ে না।
প্রভাত গোস্বামী। বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া |