ক্ষুদ্ধ সভাপতি ও প্রধান
গ্রামে জলবাহী ট্যাঙ্ক যাবে না, সিদ্ধান্ত বিডিও-র
রমে নলকূপের জলস্তর নেমে যায়। তাই এত দিন প্রশাসনের পাঠানো ট্যাঙ্কের জলে তৃষ্ণা মেটাতেন মহম্মদবাজারের চৌবাট্টা এবং বেলেজোড় গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু এ বার জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো যাবে না বলে বিডিও সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই দু’টি গ্রামের বাসিন্দারা। বিডিও-র এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।
চৌবাট্টা গ্রামে ৩০০ জনের বেশি বাসিন্দার বাস। কিন্তু রয়েছে মাত্র ৪টি নলকূপ এবং ২টি কুয়ো। এখন গরমের শুরুতে অচল হয়ে গিয়েছে ২টি নলকূপ। পাশের বেলেজোড় গ্রামে ৪০-৫০টি আদিবাসী পরিবারের বাস। তাঁদের ভরসা বলতে একটি মাত্র নলকূপ। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চৌবাট্টা ও বেলেজোড়া গ্রামের জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এমনিতে এলাকার জলস্তরও বেশ নীচে। জেলা পরিষদ থেকে বছর দেড়েক আগে চৌবাট্টা নামোপাড়ায় একটি নলকূপ বসানো হয়। কিন্তু অভিযোগ, ওই নলকূপে কার্যত প্রথম থেকেই ভালো জল ওঠে না। অন্য দিকে, উপর পাড়ার নলকূপটিতেও জল কম ওঠে। এখন তাঁদের সম্বল, বছর দেড়েক আগে পঞ্চায়েত থেকে রাউৎ পাড়ায় বসানো নলকূপ ও গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নলকূপটি। কিন্তু গরমে ওই নলকূপগুলি থেকেও কার্যত জল মেলে না।
এতদিন তীব্র গরমে মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতির আর্থিক সহায়তায় এবং স্থানীয় গণপুর পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ওই দুই গ্রামে ট্রাক্টরের মাধ্যমে জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো হত। কিন্তু মহম্মদবাজার ব্লক অফিস থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জল পাঠানোর আর্থিক দায় আর ব্লক প্রশাসন বহন করবে না। এই পরিস্থিতিতে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মাথায় হাত পড়েছে। এই গরমে কী ভাবে তাঁদের জলের সঙ্কট মিটবে তা ভেবে পাচ্ছেন না। স্থানীয় গণপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের শুভ্রাংশু চৌধুরী বলেন, “গ্রামগুলিতে জলের সমস্যা সত্যিই ভয়াবহ। গ্রাম দু’টিতে যে নলকূপগুলি এখনও সচল রয়েছে- তাও কয়েকদিনের মধ্যে বিকল হয়ে পড়বে বলেই আমার আশঙ্কা। সে জন্যই কয়েক বছর ওই দু’টি গ্রামে জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো হয়। কিন্তু মহম্মদবাজার বিডিও এ বার জানিয়ে দিয়েছেন ট্যাঙ্ক করে জল দেওয়ার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতি আর কোনও খরচ বহন করবে না।”
মহম্মদবাজারের বিডিও সুতীর্থ দাসের যুক্তি, “এ ভাবে জল সরবরাহের খরচ বহন করা সম্ভব নয়। জল সমস্যা সমাধানের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে আরও দু’টি নলকূপ অনুমোদন করা হয়েছে।” বিডিও জানিয়েছেন, গত বছর পরিস্থিতির কারণে শুধু এখানেই নয়, অনেক জায়গাতেই এ ভাবে জল সরবরাহ করা হয়েছে। তাঁর আরও দাবি, “পঞ্চায়েত সমিতির রিলিফ ফান্ডের অবস্থা ভাল নয়। তাই পঞ্চায়েত প্রধানকে বলেছি, নলকূপ দু’টি না বসানো পর্যন্ত ট্যাঙ্কটি নিয়ে গিয়ে নিজেরাই জল সরবরাহের ব্যবস্থা করুক।” কিন্তু প্রধানের বক্তব্য, “পঞ্চায়েতের আর্থিক সম্বল নেই। তাই আমরা এক্ষেত্রে কিছুই করতে পারছি না।”
চৌবাট্টা নামোপাড়ার বাসিন্দা কেষ্ট সোরেন, উপরপাড়ার স্বাধীন হাঁসদা বলেন, “বাড়ির পাশের নলকূপে প্রথম থেকেই জল ওঠে না।” স্থানীয় সোমাই হাঁসদা, রাসমণি বেসরা, মাকু হাঁসদা, রানি হাঁসদাদের ক্ষোভ, “আমাদের দু’টি গ্রামে চরম জল কষ্ট। কুয়ো, পুকুর শুকিয়ে যায়। ব্লক থেকে কয়েক বছর ধরে জল পাঠাচ্ছিল বলে কিছুটা খাবার জলটুকু পাচ্ছিলাম। এ বার তো শুনছি তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তা হলে আমরা বাঁচব কী করে?”
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে বিডিওর সিদ্ধান্ত ঠিক কতটা বাস্তব সম্মত। পঞ্চায়েত প্রধানের যুক্তি, “জল সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান সময়সাপেক্ষ। শুধুই টিওবওয়েল বসিয়েই স্থায়ী সমাধান কি সম্ভব? কারণ ৪০০-৪৫০ ফুট গভীর নলকূপ বসিয়েও গরমে জল ওঠে না।” বিডিও-র সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জিতেন ভট্টাচার্য। প্রধানের মতকে সমর্থন করে তিনি বলেন, “আমরা চাই জল সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক। কিন্তু যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন ট্যাঙ্ক করেই যাতে জল দেওয়া যায় সে বিষয়ে বিডিওকে বুঝিয়ে বলব।” তাঁর আরও দাবি, “তাতেও যদি বিডিও একমত না হন, তা হলে পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব ফান্ড থেকেই জল সরবরাহের খরচ বহণ করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.